সাঈদ ইবন আমের আল জুমাহি মুহাম্মাদের একজন অন্যতম সাহাবা ছিলেন। যিনি উমরের যুগে হিমশের শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
নাম ও বংশ পরিচয়
সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহী এর মূলনাম সাঈদ । তার পিতার নাম আমির এবং মাতার নাম আরওয়া বিনতে আবি মুয়িত ।
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত
সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি খায়বার বিজয়ের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি যখন ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মক্কায় ছিলেন তখন একজন সাহাবা খুবাইব ইবনে আদিকে বন্ধী করে মক্কায় নিয়ে আসেন। এরপর কুরাইশরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে,কুরাইশরা তার শরীরের অঙ্গগুলো কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। খুবাইব ইবনে আদি মৃত্যুর পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন । এসব ঘটনা সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে ।এরপর ফলে সাঈদ ইবনে আমির হটাত করেই একদিন ইসলামের ঘোষণা দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে। এবং খায়বারের যুদ্ধের পূর্বেই মদিনায় হিজরত করেন ।
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
সাঈদ ইবন আমির মদিনায় আসার পর সর্বক্ষণ মুহাম্মাদ সাহচর্য অবলম্বন করেন। তিনি খাইবারসহ পরবর্তী সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন।
রাশিদুন খিলাফত আমলে
মুহাম্মাদ ইন্তিকালের পর প্রথম দুই খলিফা আবু বকর ও উমারের খিলাফতকালে সাঈদ ইবনে আমির যুদ্ধ ও ইসলাম প্রসারে সক্রিয় ছিলেন ।
- হযরত উমারের খিলাফতকালে সেনাপতি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ইয়ারমুক যুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত সৈন্য সাহায্য তলব করলে । খলিফা উমর মদিনা থেকে সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহির নেতৃত্বে এক দল সৈন্য পাঠান ।
- ইয়ারমুকের যুদ্ধেও সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
- খলিফা উমর তাকে হিমশের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন ।[১][২][৩][৪] তখন হিমশকে কুয়াইফা বা ছোট কুফা বলা হত। তিনি সেখানে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ও দরিদ্রের ন্যায় জীবনযাপন করতেন।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
দারিদ্র জীবনযাপন
সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি হিমশের গভর্নর হিসেবে থাকাকালীন সময়েও অত্যন্ত সাদা-মাটা দারিদ্র জীবনযাপন করতেন। তিনি রাষ্ট্রীয় ভান্ডার থেকে গভর্নরের দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করতেন না।[৫][৬]
- একবার হিমশ থেকে একটি দল মদিনায় উমরের নিকট আসলে,উমর তাদেরকে একটি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের তালিকা করতে বলেছিলো। তখন তারা হিমশের দরিদ্র শ্রেণীর তালিকার মধ্যে তাদের প্রেসিডেন্ট সাঈদ ইবনে আমিরের নামও রেখেছিলো। এই ঘটনায় উমর মর্মাহত হতে তার জন্য এক হাজার দিনারের একটা থলে তার জন্য পাঠালেন ।কিন্তু এই এক হাজার দিনারও সাঈদ গ্রহণ করেননি বরং এ অর্থ দুস্থ ও অভাবী মানুষদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছে ।
- একবার খলিফা উমর মিশর,কুফা ও হিমশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্য নিজে ভ্রমণে বের হলেন ।তখন হিমশের জনগণ সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি এর বিরুদ্ধে ৪ টি অভিযোগ দাড় করালেন ।[৫]
- হিমশের জনগণ বলল, তিনি খানিকটা বেলা গড়িয়ে না পরলে আমাদের দেখা দেন না। সাঈদ উমরকে বলল,হুজুর, আমার ঘরে কোন চাকর নেই, তাই নিজেই সকালের খাবার প্রস্তুত করে খাবার গ্রহণ পূর্বক জনগণের সাথে দেখা করি।[৭]
- হিমশের জনগণ বলল, তিনি রাতের বেলা কাউকে সাক্ষাৎ দান করেন না। সাঈদ উমরকে বলল,হুজুর, আমি দিনের বেলা মানুষের সেবার জন্য এবং রাতের বেলা আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছি। তাই রাতে দেখা করতে পারিনা ।[৭]
- হিমশের জনগণ বলল, তিনি মাসের একটি দিন কাউকেই সাক্ষাৎ দান করেন না।সাঈদ উমরকে বলল,হুজুর, আমার ঘরে কোন চাকর-বাকর নেই । আর আমার পরিধানের পোশাকও একটি তাই আমি প্রতি মাসে এটা পরিষ্কার করতে ধুয়ে দেই এবং এটা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করি ।এজন্য ঐ দিন সাক্ষাত করতে বিলম্ব হয় ।[৭]
- হিমশের জনগণ বলল, তিনি মজলিসে মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সাঈদ উমরকে বলল,হুজুর, আমার মাঝে মধ্যে খুবাইব ইবনে আদিকে হত্যা করার নির্মম দৃশ্য মনে হয়,এই দৃশ্যের কথা মনে হলেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।[৭]
- এ সমস্ত অভিযোগ শুনে উমর অনেক দুঃখ করলেন এবং সাইদ ইবনে আমিরের প্রয়োজনের জন্য এক লক্ষ দিনার পাঠালেন। কিন্তু এই অর্থও পূর্বেও মত গ্রহণ করলেন না,সমস্ত দিনার গরীব মানুষদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছিলেন ।
- হিমশের শাসক থাকা অবস্থায় খলিফা উমর তাকে একবার মদিনায় ডেকে পাঠান। তিনি মদীনায় এলেন হাতে একটি লাঠি এবং খাওয়ার জন্য একটি পিয়ালা,এগুলোই তার সংসারের সমস্ত সম্পদ ।
মৃত্যু
ইবনে সাদের মতে, হিমসের গভর্নর থাকা অবস্থায় ২০ হিজরি /৬৪২ খ্রি তিনি ইনতিকাল করেন। তবে আবু উবাইদার মতে তার মৃত্যু ২১ হিজরি ।[৮]
তথ্যসূত্র