সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ বাংলাদেশের একটি সরকারি কলেজ। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা সদর শেরখালি গ্রামে অবস্থিত এই কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে ছাত্রীরা পড়ালেখার সুযোগ পায়।[১]
ইতিহাস
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাদপুর উপজেলার সাবেক এম.সি.এ এডভোকেট আব্দুর রহমান সহ শাহজাদপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কলেজটি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর উপজেলা সদরে শেরখালি গ্রামে আব্দুল হামিদ মিয়ার দানকৃত ৭৫ শতক জমির উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তিতে ডিগ্রি অধিভূক্তির সুবিধার্থে আরও ৪৩ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়। কলেজটি ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী কর্তৃক একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে ছাত্রী ভর্তি ও পাঠদানের অনুমতি প্রাপ্ত হয়। অতঃপর কলেজটি ১লা জুলাই, ১৯৯৭ তারিখে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৫ মে, ২০০০ তারিখে এম.পি.ও ভূক্ত হয়।[২] ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ডিগ্রি (পাস) বি.এ ও বি.এস.এস কোর্স চালুর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়।[৩] ১২ অক্টোবর ২০২২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। ৩, জুন ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির জিও জারি হয়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় ‘সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ’।[৪]
বঙ্গবন্ধুর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার পটভূমি
৭৫’র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দুই দশক পরে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অনুকূলে আসে। সেই সময়ে শাহজাদপুরে বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন অনুসারী ব্যক্তি ও সুধীজন বঙ্গবন্ধুর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। শাহজাদপুরে অনেকগুলো কলেজ থাকলেও কোন মহিলা কলেজ না থাকায় নারী শিক্ষার সুবিধার্থে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কলেজটির নামকরণের বিশেষ কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুর শাহজাদপুর আগমনের স্মৃতি ধরে রাখা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। সেই ঘূর্ণিঝড়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলসহ সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, প্রায় দশ লক্ষ মানুষ নিহত হয়। সেই ঝড়ের সপ্তাহ খানকে পর উত্তরবঙ্গ সফরের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শাহজাদপুর আসেন। তাঁকে স্বাগত জানান আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ হোসেন মনসুর ও জনাব আব্দুর রহমান প্রমুখ। সকাল ১০/১১ টার দিকে তিনি গাড়ি নিয়ে মনিরামপুর বাজারের রাস্তায় আসেন। তারপর সেখান থেকে উপস্থিত কয়েকজনের সাথে হেটে হেটে দক্ষিণ দিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় গিয়ে ওঠেন। ডাকবাংলো থেকেই তিনি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিকদের কিছু আর্থিক সহায়তা করেন। শ্রমিক প্রতি তিনি ২০ টাকা প্রদান করেছলিনে। যে রাস্তা ধরে তিনি ডাকবাংলোয় যান বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার পূর্বেই তার নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সরণি’। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পূর্বে বঙ্গবন্ধু একাধিকবার শাহজাদপুরে এসেছিলেন এবং স্বাধীনতার পরেও (১৯৭৩ সালে মহাসড়কের পাশে দিলরুবা হলে ঘণ্টা খানেক অবস্থান করে বক্তৃতা দেন) একবার শাহজাদপুর আসেন।
১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরে নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি সভা আহবান করা হয়। প্রাক্তন সংসদ সদস্য (এম,সি,এ) এডভোকেট আব্দুর রহমানের আহবানে ও সভাপতিত্বে তৎকালীন বাংলাদেশ লাইব্রেরি সংলগ্ন পিছনের খোলা জায়গায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মরতুজ আলী, অধ্যাপক আব্দুল হাই, আলহাজ্ব রমজান আলী, জনাব আব্দুল মতিন মোহন, জনাব লুৎফর রহমান চৌধুরী, জনাব শামীম হোসেন, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, শ্রী বিমল কুমার কুন্ডু, জনাব আব্দুর রহিম (ভিপি), জনাব আনছার আলী মেম্বরসহ মোট ৪৩ জন।
অত্র সভায় আহবায়ক ও সভাপতি জনাব আব্দুর রহমান সাহেবের স্বাগত ভাষণে উপস্থাপিত প্রস্তাব অনুযায়ী এই কলেজের নাম “বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ” নামকরণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। কলেজ স্থাপনের যাবতীয় যোগাযোগ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সভাপতি জনাব এডভোকেট আব্দুর রহমানকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রদান করা হয়।[৫]
কলেজ ডিজিটালকরণ
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজে ও নেটিজেন আইটি লিমিটেডের[৬] মধ্যে এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ছাত্রীদের সকল তথ্য ও হাজিরা, বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি, ক্লাস রুটিন, সকল পরীক্ষার সিট প্ল্যান, প্রবেশপত্র, পরীক্ষার ফলাফল, আইডি কার্ড, প্রসংশাপত্র ইত্যাদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়। এছাড়া প্রশাসনিক বিভিন্ন ক্ষুদে বার্তা ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে পাঠানো যায়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ অনন্য ভূমিকা রাখছে।[৭] কলেজটিতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে। ছাত্রীরা ল্যাব ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান আহরণ করছে। বিভিন্ন শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর ল্যাবটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
কলেজের ফলাফল
- ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পাশের হার ৬৭.৬৭%
- ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পাশের হার ৬০.১৩%
ছাত্রীর সংখ্যা
২০২০ সালের তথ্যঃ
শ্রেণী |
মোট
|
একাদশ |
২১৫
|
দ্বাদশ
|
১৯৮
|
স্নাতক ১ম বর্ষ
|
৪৩
|
স্নাতক ২য় বর্ষ
|
৩৩
|
স্নাতক ৩য় বর্ষ
|
১৭
|
মোট
|
৫০৬
|
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ