সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামনি (বৈজ্ঞানিক নাম: Mirabilis jalapa) হচ্ছে Nyctaginaceae পরিবারের Mirabilis গণের ভেষজ গুল্ম। সন্ধ্যামালতী এমন এক ধরনের ফুল যা সাধারণত বসতবাড়ি সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। সন্ধ্যামালতী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। সম্ভবত এই ফুল পেরু হতে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যামালতীর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল এতে একটি গাছেই বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে পারে। শুধু তাই না, মাঝেমাঝে একই ফুলে বিভিন্ন রঙ দেখা যায়।
বিবরণ
এটি বহুবর্ষজীবী, গুল্মজাতীয়, ঝোপঝাড় উদ্ভিদ। যা প্রায়শই ১ মিটার দৈর্ঘ্যের উচ্চতায় পৌঁছায়, উচ্চতা ২ মিটার অবধি খুব কমই হয়। অঞ্চল ও পরিবেশভেদে এর উচ্চতার পার্থক্য হয়। এর বীজযুক্তফলগুলি গোলাকার, কুঁচকানো এবং পরিপক্ব হওয়ার পরে কালো রঙের হয়, প্রথমে সবুজ-হলুদ থাকে কিছুদিন পড়ে রঙ বদলায়। কাণ্ডগুলি ঘন, পূর্ণ, চতুর্ভুজাকার এবং বহু খাজযুক্ত এবং খাজগুলিতে মূলের হয়।[১]
ফুলের রঙ বিশেষে সন্ধ্যামালতী গাছ অনেক প্রকারের হয়। আবার একই গাছে বিভিন্ন রঙের ফুল ধরে। ফুলের রঙের মধ্যে আছে হালকা বা কাঁচা হলুদ, লাল, ম্যজেন্ডা, গোলাপী, সাদা ইত্যাদি। কিছু ফুলে ছোট ছোট তিল বা রেখা দেখা যায়।[২][৩][৪][৫][৬] এর ফুল ও রঙের উপর গাছে প্রজাতি বিভিন্ন হয়ে থাকে।[৭]
চাষ পদ্ধতি
সন্ধ্যামালতী গাছ চাষের জন্য রোদযুক্ত জায়গা ভালো। তবে রোদে পাতা শুকিয়ে যায়, তারপরে সন্ধ্যার দিকে আবার সতেজ হয়, যখন দিনের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে এবং সূর্য ডুবে যায়। শীতকালে এটি গাছের জন্য উপযুক্ত না, প্রচুর শীত ও তুষারে গাছ মরে যায়। তবে বসন্তকালে সন্ধ্যামালতী চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। এর বীজ শুকিয়ে গেলে নিজে থেকে ঝরে পড়ে ও বাগানে ছড়িয়ে যায়। অনেকে বলে বা মনে করেন যে বীজ রোপণের আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে, তবে এটির খুব একটা প্রয়োজন নেই।
এই ফুলের গাছ বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হলো খুব বেশি রোদ বা ছায়াযুক্ত স্থান নয়। রোদ ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে গাছটি বৃদ্ধি পায় সহজে। গাছ লাগানোর জমি তৈরি করার প্রথমে মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করতে হবে। মাটিতে অম্লের মাত্রা যেন কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর বীজ ১০ সেন্টিমিটার গভীরতায় স্থাপন করতে হবে। এটি সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্যন্ত বপন করার জন্য উপযুক্ত সময় হয়। ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বীজগুলি দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।[৮]
ব্যবহার
সন্ধ্যামালতী ফুল সাধারণত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে রঙের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর পাতাও খাওয়া যায়, অবশ্য তা কেবল জরুরি প্রয়োজনে রান্না করেই তা সম্ভব। এছাড়া কেক ও জেলি রঙ করতে এর রঙ ব্যবহৃত হয়।[৯] এর পাতা প্রদাহ কমাতে এবং এর ক্বাথ ফোড়া চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। পাতার রস ক্ষতের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। শিকড়ে রেচক প্রভাব রয়েছে।
বীজের চূর্ণ, কিছু প্রজাতের বীজ প্রসাধনী হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং রঞ্জক শিল্পে কাজে লাগে। তবে এর বীজগুলি বিষাক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়।[১০] ব্রাজিলের কায়াপো সম্প্রদায়, ভারতীয়রা মাথা ব্যথা নিরাময়ে, ক্ষত ধুতে শুকনো ফুলের গুঁড়ো ব্যবহার করে এবং কুষ্ঠের মতো ত্বকের চিকিৎসার মূলের ডিকোশন ব্যবহার করে। পেরুতে ফুল থেকে উত্তোলিত রস হার্পিসের ক্ষত এবং কানের জন্য ব্যবহৃত হয়। মূল থেকে বের করা রস কানের ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয়, সিফিলিস এবং লিভারের সংক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়। মেক্সিকোয়, পুরো উদ্ভিদের ডিকোশনগুলি আমাশয়, সংক্রামিত ক্ষত এবং মৌমাছি ও বিচ্ছুর কামড়ে ব্যথা নাশ করতে এর ডাল ব্যবহার করা হয়।[১১]এছাড়া বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ তৈরীতে এর ফুল ও শিকড় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর পাতার রসও ক্ষত সারানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
এই উদ্ভিদটি ক্যাডমিয়ামের মতো কিছু ভারী ধাতুর মাঝারি ঘনত্বের দূষিত মাটির দূষণ কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।[১২]
বিস্তৃতি
সন্ধ্যামালতীর আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। তবে অনেক গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয় এবং ছিটকে পড়া উদ্ভিদ হিসেবেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এটি সাধারণ উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয়।
↑Jorge M. Vivanco , " Antiviral Activity of Antiviroid and MAP-Containing Extracts from Mirabilis Jalapa Roots " Plant Disease , vol. 83, n o 12,1999, p. 1116-1121 ( ISSN 0191-2917)
↑Bernard Boullard , medicinal plants of the world, beliefs and realities , De Boeck Secundair,2001 ( আইএসবিএন৯৭৮২৮৪৩৭১১১৭৬ )
↑Growth responses and cadmium accumulation of Mirabilis jalapa L. under interaction between cadmium and phosphorus. Yu Z and Zhou Q, J Hazard Mater., 15 August 2009, volume 167, issues 1-3, pages 38-43, ডিওআই:10.1016/j.jhazmat.2008.12.082
Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!