সন্দীপ মধূসুদন পাতিল (মারাঠি: संदीप मधुसुदन पाटील; উচ্চারণⓘ; জন্ম: ১৮ আগস্ট, ১৯৫৬) মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ভারতের সাবেক ও প্রথিতযশা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ভারত ক্রিকেট দলের সদস্য থাকাকালীন তিনি মাঝারীসারির আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন ও মাঝে-মধ্যে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। এছাড়াও তিনি ভারতের জাতীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ম্যানেজার ছিলেন। তারই নির্দেশনায় ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেকেনিয়া দল সেমি-ফাইনালে প্রবেশ করেছিল। ঐ সময়ে তিনি কেনিয়া দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন।
ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে মুম্বাই চ্যাম্পসের কোচ ছিলেন। কিন্তু, ২০০৯ সালে অনানুষ্ঠানিক লিগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পর্দার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসেন। বিসিসিআই কর্তৃক ডেভ হোয়াটমোরের পরিবর্তে তাকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক নিযুক্ত করে।[১] এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে বিসিসিআই নির্বাচন কমিটির প্রধানের দায়িত্বে বসানো হয়।[২]
প্রারম্ভিক জীবন
বোম্বে নগরীতে জন্মগ্রহণকারী সন্দীপ পাতিলের বাবা মধূসুদন পাতিলও প্রথম-শ্রেণীর সাবেক ক্রিকেটার ছিলেন।[৩] একাধারে মধূসুদন জাতীয় পর্যায়ের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, দক্ষ টেনিস খেলোয়াড় ও ফুটবলার ছিলেন। বোম্বের শিবাজী পার্কে তিনি বড় হন ও ব্রালমোহন বিদ্যামন্দির ও রামনারায়ণ রুইয়া কলেজে পড়াশোনা করেন। অঙ্কুশ আন্না বৈদ্যের কাছ থেকে খেলাধূলোয় প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
খেলোয়াড়ী জীবন
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। রোহিতন বারিয়া ট্রফিতে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পরপর সফলতম তিন বছর কাটান। এরপর ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে বোম্বেরঞ্জি দলের সদস্য হন। ১৯৭৯ সালে সেমি-ফাইনালে দিল্লির বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। ৭২ রানে ৪ উইকেটের পতনের পর ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ২৭৬ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ১৪৫ রান করেন। ১৮ চার ও ১ ছক্কায় গড়া এ ইনিংসের বিপরীতে দলের কোন সদস্যই ২৫-এর বেশি রান সংগ্রহ করতে পারেননি।[৪] ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে যথাক্রমে মিডলসেক্স লিগে এডমন্টন দলে ও পরের বছর সমারসেটের দ্বিতীয় একাদশে খেলেন।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান দল ভারত সফরে আসে। পশ্চিমাঞ্চলের পক্ষে উভয় দলের বিরুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৪ ও ২৩[৫] এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ ও ৭১ করেন।[৬] এরফলে তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত শেষ দুই টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হন। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে[৭] অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অংশ নেন ও ১৯৮০-৮১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য মনোনীত হন।[৮]
অবসর পরবর্তী জীবন
সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের খেলার পাতিল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। অবশ্য এরপরেও তিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেন ও সফলতা লাভ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৯০ সালে বোম্বের বিপক্ষে ১৮৫ রান সংগ্রহ করা।[৯] এরপর তিনি ভারতের জাতীয় দল ও এ-দলের কোচ নির্বাচিত হন। কেনিয়ার কোচ থাকা অবস্থায় দলকে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে সেমি-ফাইনালে পৌঁছান।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে বিসিসিআইয়ের নির্বাচন কমিটির প্রধানের দায়িত্বভার তার উপর দেয়া হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৮৩ সালে বিজয় সিং পরিচালিত কভী আজনবী থে ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে দেবশ্রী রায়ের সাথে সন্দীপ পাতিলের আলাপ হয়। সন্দীপ তখন বিবাহিত, তা সত্ত্বেও তিনি দেবশ্রীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। আশির দশকের মধ্যভাগে সংবাদ মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয় যা তার দাম্পত্য জীবনে অশান্তির সৃষ্টি করে। ১৯৮৫ সালে, কভী আজনবী থে মুক্তি পাওয়ার পরে সন্দীপ ও দেবশ্রীর সম্পর্ক ভেঙে যায়।[১০][১১] পরবর্তীকালে দীপা নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন পাতিল।[১২] তার সন্তান চিরাগ মারাঠি চলচ্চিত্র রাদা রক্সে অভিনয় করে।[১৩] ‘ইকাচ শাটকর’ নামের মারাঠি ক্রীড়াবিষয়ক সাময়িকীর সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ১৯৮৪ সালে ‘স্যান্ডি স্টর্ম’ নামের একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।