শামসুল হক চৌধুরী (৩০ জুন ১৯৩৬– ৭ মে ২০০৮) বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যিনি তৎকালীন রংপুর-১২ ও রংপুর-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।[১][২]
প্রাথমিক জীবন
শামসুল হক চৌধুরী ১৯৩০ সালের ৩০ জুন বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়ন-এর চর বলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্তার পিতার নাম শরীফ উদ্দিন আহমদ এবং মায়ের নাম আছিয়া বেগম। তার দুই স্ত্রীর একই নাম (নুরজাহান বেগম)। বড় পক্ষের ৪ সন্তান - নুরুন্নবী হক চৌধুরী খোকন(১ম), শামসুন্নাহার চৌধুরী লিলি(২য়), সুলতানা জেসমিন নাহার চৌধুরী শেলি(৩য়), নাজনীন নাহার লিপি(৪র্থ)। ছোট পক্ষের ২ সন্তান - চৌধুরী শারমিন শামস্ মণি(৫ম), মো: নিয়ামুল আরিফ চৌধুরী নিখিল(৬ষ্ঠ)।
শামসুল হক চৌধুরী ১৯৪৪ সালে গনাইরকুঠি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৪৫ সালে সোনাহাট মহারাজা শ্রী শচন্দ্র নন্দী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি ভর্তি হন ভুরুঙ্গামারী হাই ইংলিশ উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ ১৯৫১ সালে ভুরুঙ্গামারী হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন ও পরে কারমাইকেল কলেজ এ ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী (আই.এ) পাশ করেন। কারমাইকেল কলেজ থেকে (আই.এ) পাশ করার পর শামসুল হক চৌধুরী ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ এ স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি এ কলেজ থেকে স্নাতক (বি.এ.) ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে তার বাড়ির কাছেই সোনাহাটে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় । শামসুল হক চৌধুরী এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে তিনি সোনাহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি ভুরুঙ্গামারী হাই ইংলিশ স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন।[৩]
রাজনৈতিক জীবন
শামসুল হক চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ভূরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৩] ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে শামসুল হক চৌধুরী ভুরুঙ্গামারীর জনগণকে শান্ত রেখে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরীতে "মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা সমন্বয় কমিটি" গঠিত হলে শামসুল হক চৌধুরী এই কমিটির নেতৃত্ব দেন এবং সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করতে থাকেন। ভুরুঙ্গামারী পাইলট হাই স্কুলের মাঠে ইপিআর সেনাদের জন্য তিনি ক্যাম্প তৈরি করেন এবং তাদের দ্বারা সাধারণ জনগণকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়ান এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেন। শামসুল হক চৌধুরী ১৯৭২ সালে গঠিত গণপরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন রংপুর-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১] ১৯৭৫ সালের ১৯ জুন বঙ্গবন্ধু সারাদেশে ৬০টি জেলা গঠন করেন এবং কুড়িগ্রাম জেলার গভর্নর হিসেবে শামসুল হক চৌধুরীকে নিয়োগ দেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন রংপুর-১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[২] শামসুল হক চৌধুরী ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব এত পালন করেন।[৩]
মৃত্যু
শামসুল হক চৌধুরী ২০০৮ সালের ৭ই মে বুধবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৩]
তথ্যসূত্র