লোহা সেতুর যুদ্ধ ৬৩৭ সালে রাশিদুন সেনাবাহিনী ও বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ অরনটিস নদীর উপর অবস্থিত একটি নয় আর্চ বিশিষ্ট সেতুর কাছে সংঘটিত হয়। এ থেকে এর এমন নাম হয়েছে। সিরিয়া প্রদেশে এটি বাইজেন্টাইন ও রাশিদুন খিলাফতের মধ্যে অনুষ্ঠিত শেষ যুদ্ধ। যুদ্ধের পর সিরিয়া প্রদেশকে খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়।
পটভূমি
রাশিদুন সেনাবাহিনীইয়ারমুকের যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় লাভ করার পর লেভান্ট, জেরুজালেম জয় করে। এরপর সেনাবাহিনী উত্তরে যাত্রা করে লেভান্টের বাকি অংশও জয় করা হয়। তারা এন্টিওক দখলের উদ্দেশ্যে উত্তর সিরিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত পৌছায়। উত্তর দিক থেকে বিজিত অঞ্চলগুলোর উপর কোনো প্রকার হামলার সম্ভাবনা হ্রাস করাও এর উদ্দেশ্য ছিল। আলেপ্পো জয়ের পর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহতোরোস পর্বতমালার পূর্বে উত্তর সিরিয়ার আজাজ অঞ্চল জয়ের জন্য মালিক আল আশতারকে পাঠান। আলেপ্পোর উত্তর দিকে বড় আকারের কোনো বাইজেন্টাইন বাহিনী নেই এমন নিশ্চয়তার জন্য এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখান থেকে এন্টিওক অভিযানের সময় রাশিদুন সেনাদের পিছনে পার্শ্ববর্তী অংশে আক্রমণের আশঙ্কা ছিল।[১] মালিক মূল বাহিনীর সাথে যোগ দেয়ার পর আবু উবাইদাহ এন্টিওক জয়ের জন্য পশ্চিমে যাত্রা করেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ অগ্রবর্তী অবস্থানে থাকা তার মোবাইল গার্ড বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বাহিনী আলেপ্পো থেকে হারিমের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে এবং পূর্ব দিক থেকে এন্টিওক পৌছায়।[২]
যুদ্ধ
শহর থেকে বার মাইল দূরে বর্তমান মাহরুবার নিকটে অরনটিস নদীর উপর লোহার একটি সেতু অবস্থিত ছিল। রাশিদুন সেনাবাহিনী ও বাইজেন্টাইন গেরিসনের মধ্যে এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধ বড় আকারের ছিল তবে এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়নি। খালিদ বিন ওয়ালিদ তার মোবাইল গার্ডদের নিয়ে ইয়ারমুকের যুদ্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাইজেন্টাইনরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরাজিত হয়। মুসলিমদের সিরিয়া বিজয়ের সময় আজনাদয়ান ও ইয়ারমুকের যুদ্ধ বাদে এখানে বাইজেন্টাইন পক্ষে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।[৩] এরপর রাশিদুন সেনারা এন্টিওকের দিকে যাত্রা করে ও এর অপর অবরোধ আরোপ করে। ৬৩৭ সালের ৩০ অক্টোবর শহর আত্মসমর্পণ করে। চুক্তি মোতাবেক বাইজেন্টাইন সৈনিকদেরকে শান্তিতে শহর পরিত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হয়।
পরবর্তী অবস্থা
এন্টিওকের আত্মসমর্পণের পর রাশিদুন সেনারা দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে এগিয়ে যায় এবং লাতাকিয়া, জাবলা ও তারতুস (সিরিয়া) জয় করে। এভাবে উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা জয় করা হয়। উত্তর সিরিয়ার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাকি সৈনিকদের প্রেরণ করা হয়। খালিদ বিন ওয়ালিদকে তার অশ্বারোহী বাহিনী সহ পূর্ব দিকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত পাঠানো হয়। তবে তিনি কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি। ৬৩৮ সালের জানুয়ারির প্রথমদিকে অভিযান শেষ হয়। ৬৩৮ সালের মার্চে এমেসায় অবরোধ করা আল জাজিরার বাইজেন্টাইনপন্থি খ্রিষ্টান আরবরা পরাজিত হওয়ার পর আবু উবাইদাহ খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আয়াজ ইবনে গানামকে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জাজিরা ও আনাতোলিয়া দখল জন্য পাঠান। এই সেনাদলগুলো উত্তরে আরারাত সমভূমি ও পশ্চিমে তোরোস পর্বতমালা পর্যন্ত পৌছায়। তুরস্কের তোরোস পর্বতমালা আনাতোলিয়ায় রাশিদুন খিলাফতের পশ্চিম সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়।[৪]
তথ্যসূত্র
↑ কখগঘAkram, A.I. (১৯৭০)। The Sword of Allah: Khalid bin al-Waleed, His Life and Campaigns, chapter 36। Nat. Publishing. House, Rawalpindi। আইএসবিএন0-7101-0104-X।