লুই ফার্ডিনান্ড সেলিন হল লুই ফার্দিনান্দ আগস্টে ডিটু (২৭ মে ১৮৯৪ - ১ জুলাই ১৯৬১) নামক এক ফরাসি ঔপন্যাসিক, pamphleteer এবং চিকিৎসক - এর ছদ্মনাম। আধুনিক ফরাসি সাহিত্যের এক অন্যতম প্রবর্তক রূপে তাকে গণ্য করা হয়ে থাকে। নিজের রচনার মধ্যে তথাকথিত বুর্জোয়াদের "অতিপ্রাকৃত" ভাষা বর্জন করে, তিনি সাধারণ শ্রেণীর দ্বারা ব্যবহৃত কথ্য ভাষার ব্যবহার করেন।[১]
তার কাজগুলি কেবলমাত্র ফ্রান্সের সাহিত্য মণ্ডলকেই নয়, পাশ্চ্যাত্য বিশ্বের বহু সাহিত্যিককে এবং সাহিত্য জনারকে-ও প্রভাবিত করেছে। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত উপন্যাস - "জার্নি টু দ্য এন্ড অফ দ্য নাইট" তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তিকে সমর্থন এবং ইহুদি-বিদ্বেষপূর্ণ ও প্রো-ফ্যাসিবাদি পুস্তিকা লেখন তার খ্যাতিকে প্রভাবিত হয়েছে।[২][৩]
জীবনী
প্রথম জীবন
ফার্নান্ড ডিটু এবং মার্গেরিতে-লুয়েস-সেলাইন-গিলৌক্সের একমাত্র সন্তান, লুই ফার্দিনান্দ, ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কোর্বেভোয়া-য় জন্মগ্রহণ করেন, সেইনে ডেপার্টমেন্টে, প্যারিসের পার্শবর্তী অঞ্চলে। ডিটু পরিবারের আদিনিবাস ছিল নর্ম্যান্ডি এবং গিলৌক্সের পরিবারের আদিনিবাস ছিল ব্রিটানি। লুই-এর পিতা এক বীমা সংস্থার মাঝারী কর্মচারী ছিলেন এবং তার মায়ের একটি বুটিক-এর দোকান ছিল। 1905 সালে, তিনি সার্টিফিট ডি'ট্যুডস-এ ভূষিত হন এবং অতপর, বিভিন্ন ব্যবসায়ে শিক্ষানবিশ বা বার্তাবহ-ছেলে রূপে কাজ করেন।
১৯০৮ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে, লুই ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে, বিদেশী ভাষা অর্জনের জন্য, এক বছরের জন্য জার্মানি ও এক বছরের জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি দেয়। আঠারো বছর বয়স (১৯১২ অব্দি) পর্যন্ত লুই বিভিন্ন রকমের চাকুরীতে যোগদান করে থাকেন কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলি ছেড়ে দিতেন বা বিতাড়িত হতেন। এই সময়পটে তিনি প্রায়শই জহুরিদের জন্য কাজ করে ছিলেন; প্রথমত, এগারো বছর বয়সে, চাকর রূপে, এবং পরে এক স্থানীয় স্বর্ণকারের বিক্রয়কারী হিসেবে।
১৯১০ এর পরবর্তী সময়ে তিনি কোনোরুপ প্রথাগত শিক্ষা না লাভ করে থাকলেও, নিজ-উপার্জিত অর্থের সাহায্যে পুস্তক ক্রয় করে, নিজে কিয়ৎদুর পড়াশোনা করেছিলেন। আর এই সময় থেকেই লুই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ এবং আফ্রিকা
191২ সালে, মাতা-পিতার বিরুদ্ধে একপ্রকার বিদ্রোহ স্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই বছর আগে, লুই ফরাসি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। লক্ষণীয়ভাবে, 1911 সালে আগাদির সংকটের পর, ফ্রান্সে (বিশেষত প্যারিস এবং পার্শবর্তী অঞ্চলে) জাতীয়তাবাদ এক বিশালাকার ধারণ করেছিল - এক ইতিহাসবিদ সেই সময়কে (1911-1914) "দেশপ্রেমের বেহেস্ত" বলে বর্ণনা করেছেন।
লুই রাম্বৌললেটের ১২তম কুইরাসিয়ার রেজিমেন্টে, তিন বছরের জন্য অন্তর্ভুক্ত হন। প্রথম পর্যায় সামরিক জীবনের সাথে তীব্র মাত্রায় অসন্তুষ্ট হয়ে, তিনি বাহিনী পরিত্যাগ করার বিবেচনা করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি সামরিক জীবন যাপনের সহিত নিজেকে মানিয়ে নেন এবং শেষ অবধি সার্জেন্ট পদ অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই লুই এর বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে সংজোযিত হয়েছিল। ১৯১৪ সালের ২৫ অক্টোবর, জার্মানির ভারী গলা বর্ষণ এর কারণস্বরূপ, অন্যান্য সেনাগণ একটি গুরুত্যপূর্ণ যুদ্ধ-বার্তা প্রেরণ করতে অনিচ্ছুক হলে, তিনি স্বেচ্ছাসেবক হন। ওয়াইপ্রেস-এর কাছাকাছি, বার্তা প্রদানের সময়, তিনি ডান হাতে আঘাত লাভ করেন। তবে জনপ্রিয় গুজবের বিপরীতে, তিনি মাথায় আহত হননি। অসীম সাহসিকতা জন্য, লুইকে নভেম্বরে মেডাইলে মিলিটারি প্রদান করা হয়।
১৯১৫ সালের মার্চ মাসে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল, ফরাসি পাসপোর্ট অফিসে কাজ করার জন্য। লন্ডনে থাকাকালীন তিনি সুজান নেবাউটকে বিয়ে করেন কিন্তু এক বছর পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সেই সালেরই সেপ্টেম্বরে, তার অস্ত্র ক্ষতগুলির কোনোরূপ আরোগ্য হওয়ার লক্ষণ না দেখা গেলে, তাকে সামরিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯১৬ সালে, সাঙ্ঘা-ওব্বাঙ্গুই বনপালন কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে লুই আফ্রিকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সফরটি অসফল ছিল কিন্তু তা ব্যতিরেকে এই সময় সম্পর্কে খুব কমই জ্ঞাত। তাকে একবার ব্রিটিশ ক্যামেরুনে পাঠানো হয়েছিল এবং ১৯১৭ সালে তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন। এরপর কয়েক মাস তিনি রকফেলার ফাউন্ডেশনের হয়ে এক দল স্বাস্থ্যসেবক এর সাথে ব্রিটানি-র বাসিন্দাদের যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণ এবং এক সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা নিয়ে উপদেশ দিতেন।
চিকিৎসক
১৯১৯ সালের জুন মাসে, লুই বোর্ডাউক্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং তার baccalaureat এর দ্বিতীয় ভাগ সম্পন্ন করেন। এই সময়ে, রেঁনেসার চিকিৎসাবিদ্যা বিদ্যালয়ের পরিচালিকা ফোলেট এর সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরী করেন। ১৯১১ সালের ১১ ই আগস্ট, লুই এর সাথে ফোললেটের মেয়ে এডিথ ফোললেটের বিবাহকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপর ফোললেটের প্রভাবের ফলে, লুইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই সময়কালে, তিনি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। এরইমধ্যে, ১৫ জুন, ১৫২০, তাদের এক কন্যাসন্তান হয় - কলেত্তে ডিটু।
রেঁনেসাতে মেডিক্যাল প্রোগ্রাম শুরু করার তিন বছর পর ১৯২৩ সালে লুই তার ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। তার ডক্টরাল থিসিস, "দ্য লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক অফ ইগনাজ সেমেলওয়েস", (প্রকাশনা সাল:-১৯২৪) তার সর্বপ্রথম সাহিত্যিক কাজ বলে গণ্য করা হয় - লুই এর মতানুসারে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে ইগনাজ সেমেলওয়েসের অবদান ছিল অসীম পরিমাপের এবং তার নিজ জীবনের দুঃখের সরাসরি অনুপাতে।
19২4 সালে প্যারিস মাতৃত্ব হাসপাতালে তিনি ইন্টার্নের পদে যোগদান করেন।
লেখক
১৯২৫ সালে, সেলাইন তার পরিবার ত্যাগ করেন চিরকালের মতো। নবগঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জর (লিগ অফ নেশনস) এক কর্মচারী হিসেবে তিনি সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ক্যামেরুন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবা ভ্রমণ করেন। এই সময়ে তিনি এল ইগ্লাইস (1933; দ্য চার্চ) নামক এক নাটক রচনা করেন।
১৯২৬ সালে লুই কে আমেরিকা সফরে পাঠানো হয়, ডেট্রয়েটের ফোর্ড অটোমোটিভ কোম্পানির কর্মপরিবেশ বিষয়ে গবেষণা করার জন্য। তিনি "Assembly লাইন" এর তীব্র বিরোধী মত পোষণ করেন এবং এক নিবন্ধে বর্ণনা করেন কীভাবে ওই প্রযুক্তিটি প্রত্যেক কর্মীকে ডিহিঊমানাইজ করে আক্ষরিকভাবে মেশিনটির এক অংশে পরিবর্তন করেছিল।
১৯২৮ সালে, তিনি চিকিৎসাচর্চায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং প্যারিসের উত্তরে, মন্টমার্ট্রে, এক প্রাইভেট প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩১ সালে তিনি একটি পাবলিক ডিসপেনশারীতে যোগদান করেন।