দক্ষিণ আরবি অভিলিখনগুলিতে আল-লাতের পূজা প্রত্যয়িত হয়েছে লাত ও লাতান নামে, কিন্তু উত্তর আরব ও হেজাজে তিনি অধিকতর প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন এবং তাঁর কাল্ট দূরে সিরিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।[৩]সাফাইয়া লিপির লেখকেরা প্রায়শই তাঁদের অভিলিখনে আল-লাতকে আবাহন করতেন। নবতাঈ জাতির লোকেরাও তাঁকে পূজা করত এবং তাঁকে যুক্ত করেছিল আল-উজ্জার সঙ্গে। তাঁর কাল্টের উপস্থিতি পালমিরা ও হাত্রা দুই স্থানেই প্রত্যয়িত হয়েছিল। গ্রিকো-রোমান প্রভাবে তাঁর মূর্তিনির্মাণে গ্রিক পুরাণের যুদ্ধদেবী আথিনা ও তাঁর রোমান প্রতিরূপ মিনার্বার প্রভাব দেখা গিয়েছিল।
ইসলামীয় সূত্র অনুযায়ী, তাইফেবনু সাকিফ জাতিগোষ্ঠী বিশেষভাবে তাঁর পূজা করত। ইসলামি প্রথায় তাঁর পূজা সমাপ্ত হয়েছিল, যখন মুহাম্মদের আদেশে তাইফে তাঁর মন্দির ধ্বংস করা হয়।[৪]
বর্ণনা
পুরাতন উৎস থেকে জানা যায় আল-লাত ছিলো মেসোপটেমীয়দের পাতালের[৫][৬] দেবী, যিনি এরেশকিগাল নামে পরিচিত, কার্থেজে তাকে আল্লাতু[৭] নামে ডাকা হতো।
পেত্রার নবতাঈগণ এবং হাত্রার জনসাধারণ লাতের পূজা করতো। তাকে গ্রীক দেবী এথেনা ও টাইচি এবং রোমান দেবী মিনার্ভার সাথে তুলনা করা হতো। প্রাচীন পূঁথিতে তাকে মহান দেবী নামে সম্বোধন করা হয়েছে।[৮]
গ্রীকঐতিহাসিকহেরোডোটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে তার লেখায় লাতকে আফ্রোদিতির সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন।
অ্যাসিরিয়ানরা আফ্রোডাইটকে মাইলিটা, আরবীয়রা আলিলাট [গ্রীক বানান: Ἀλιλάτ],এবং পারসিকদের মিথ্রা বলে। এছাড়াও সেই দেবতা ভারতীয় দেবতা মিত্রের সাথে যুক্ত।[৯]
হেরোডোটাসের মতানুসারে প্রাচীন আরবগণ দুইজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতঃ
তারা ডায়োনিসাস এবং স্বর্গীয় আফ্রোডাইট ছাড়া অন্য কোনো দেবতাকে বিশ্বাস করে না; এবং তারা বলে যে তারা ডায়োনিসাসের মতো চুল পরে, মাথার চারপাশে কেটে দেয় এবং মন্দিরগুলি শেভ করে। তারা ডায়োনিসাসকে ডাকে,ওরোটাল্ট; এবং অ্যাফ্রোডাইট,আলিলাত।
আল কোরআনের সুরা নজমে উজ্জা এবং মানাতের সঙ্গে লাতকে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ নম্বর আয়াতে। আল কোরআন, সুরা নজম, আয়াত ১৯,২০
হিশাস্ম ইবনে আল কালবি লিখিত কিতাব আল আসনাম (মূর্তি সম্পর্কিত বই) থেকে জানা যায় ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে আরবগণ বিশ্বাস করতেন লাত কাবা শরীফে বাস করেন। এবং সেখানেও তার একটি মূর্তি স্থাপিত ছিলো।
আল-লাত এর দায়িত্বে ছিল সাকিফ গোত্রের বনু আত্তাব ইবনে মালিক, যে এর উপর একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে। কুরাইশসহ অন্যান্য আরবরা একে অনেক সম্মান করত। তারা এই দেবীর নামে তাদের সন্তানদের নাম রাখত 'জায়েদ আল-লাত' এবং 'তাইম আল-লাত' এভাবে। আল তায়েফ মসজিদের মিনারের বামদিকে এটি দাঁড় করানো ছিল। সাকিফ গোত্র ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত আল লাতের উপাসনা অব্যাহত রেখেছিল। যখন আল্লাহর নবী (হযরত মুহাম্মদ সা.) আল মুগিরাহ ইবনে-শুবাহকে পাঠান, তিনি একে ধ্বংস করেন এবং তার মন্দির মাটির সাথে মিশিয়ে দেন।[১১][১২][১৩]
মন্দির ধ্বংস
তায়েফ বাসী লাতের পূজা করত।[১৪]তাবুক যুদ্ধ[১৫] পরিচালিত হওয়ার একই বছরে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে[১৬]মুহাম্মদ এর নির্দেশে আবু সুফিয়ান ইবনে হার্বের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তায়েফে লাতের মন্দির ধ্বংস করা হয়। এর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী বনু হাওয়াজিন গোত্র মালিকের নেতৃত্রে তায়েফ অবরোধ করে রাখে।[১৭]
↑«A History Of Art In Chaldæa & Assyria» Georges Perrot, Professor in The Faculty of Letters, Paris; Member of The Institute, and Charles Chipiez. New York, 1884.
↑Encyclopedia of Gods, Michael Jordan, Kyle Cathie Limited, 2002
↑Healey, John F. (২০০১)। "4"। The Religion of the Nabataeans: A Conspectus। Religions in the Graeco-Roman World। 136। Boston: Brill। পৃষ্ঠা 107–119। আইএসবিএন90-04-10754-1।