রোয়াইলবাড়ি দুর্গ বা কোটবাড়ী দুর্গ নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়ায় অবস্থিত একটি প্রাচীন দুর্গ ও বাংলাদেশের অন্যতম একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার সমাহার।[১] এটি ‘কোটবাড়ী দুর্গ’ নামেও পরিচিত।[২] প্রাচীন রোয়াইলবাড়ি দুর্গের স্থাপনা হিসেবে বর্তমানে ছাদবিহীন কিছু ইমারত অবশিষ্ঠ রয়েছে। এটি বেতাই নদীর তীরে কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নে অবস্থিত।
ইতিহাস
রোয়াইলবাড়ি দুর্গের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না তবে প্রত্নতত্ত্ববিদগণদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে সুলতানী আমলের স্থাপনা বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ এটিকে জনৈক কোন মুঘল জেনারেলের তৈরি স্থাপনা বলে মনে করেন। ৮০-এর দশকে আবিষ্কৃত এ স্থাপনাটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পরাকীর্তি হিসেবে নথিভূক্ত করে।[৩]
দুর্গটি সংরক্ষিত ঘোষণার পর ১৯৯১-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানে খননকাজ পরিচালনা করে ও দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও দুটি ঢিবি আবিষ্কার করে। অনেকেই মনে করেন, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ্-এর পুত্র নছরত শাহ্, এ অঞ্চলে বসবাসের সময় দুর্গটি তৈরি/সম্প্রসারণ করেন। পরবর্তিতে ঈশা খাঁ ও তার পরবর্তি শাসকের আমলেও দুর্গে ব্যাপক সম্প্রসারণের কাজ করা হয়।
অবকাঠামো ও স্থাপনাসমূহ
৪৬ একর জমির উপর অবস্থিত পুরো দুর্গটি পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা ও প্রাচীর দ্বারা বিভক্ত। দূগের প্রাচীর নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও, দুর্গে রয়েছে পাঁচটি পুকুর, একটি প্রধান দরজা, বেশ কিছু প্রবেশদ্বার, সীমানা প্রাচীর এবং প্রাকৃতিক প্রাচীর ছাড়াও বেশকিছু প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। খননকাজ পরিচালনাকালে এখানে প্রাচীন ইটের ভংগ্নাংশ, মৎপ্রাত্র, মূর্তি ও মূল্যবান কিছু পরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। দুর্গে রয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ঘোষিত চারটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
বার দুয়ারী ঢিবি
রোয়াইলবাড়ি দুর্গের চারটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এটি। বার দুয়ারী ঢিবির নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না তবে প্রত্নতত্ত্ববিদগণদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে সুলতানী আমলের স্থাপনা বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ এটিকে জনৈক কোন মুঘল জেনারেলের তৈরি স্থাপনা বলে মনে করেন। ৮০-এর দশকে আবিষ্কৃত এ স্থাপনাটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পরাকীর্তি হিসেবে নথিভূক্ত করে।[৪] বার দুয়ারী ঢিবিটি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের সীমানা প্রাচীরের ভেতর দক্ষিণাংশে অবস্থিত। ১৯৯১-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক দুর্গের ভেতর খনন কার্য পরিচালনার সময় এটি আবিষ্কৃত হয়। খননের ফলে এখানে পাওয়া যায় একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।[৫]
বুরুজ ঢিবি
রোয়াইলবাড়ি দুর্গের চারটি স্থাপনার মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান স্থাপনা এটি। বুরুজ ঢিবিটি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের সীমানা প্রাচীরের ভেতর উত্তরাংশে অবস্থিত। ১৯৯১-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক দুর্গের ভেতর খনন কার্য পরিচালনার সময় এটি আবিষ্কৃত হয়। খননের ফলে এখানে পাওয়া যায় একটি ইমারতের ধ্বংসাবশেষ।[৫]
ছাদবিহীন পুরাতন ইমারত
রোয়াইলবাড়ি দুর্গের চারটি স্থাপনার মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটাতে মোট পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। সাম্প্রতিককালের প্লাস্টার দেবার কারণে স্থাপনাটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। [৬]
কবরস্থান
রোয়াইলবাড়ি দুর্গের আরেকটি স্থাপনা হচ্ছে এর অভ্যন্তরে অবস্থিত কবরস্থানের স্থাপনা। এটিকে নিয়ামত বিবির মাজার ও ডেঙ্গু মিয়ার সমাধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে একটি বাঁধাই করা সুড়ঙ্গের অবশেষ টিকে রয়েছে।
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র