রাধিকা মোহন মৈত্র (১৯১৭- ১৬ অক্টোবর, ১৯৮১) একজন ভারতীয় সরোদবাদক এবং নরেন্দ্রনাথ ধর, কল্যাণ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অবনীন্দ্র মৈত্র, সমরেন্দ্রনাথ সিকদার ও ঐ প্রজন্মের আরও অনেক অসামান্য সংগীতশিল্পীদের গুরুদেবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।[১] বিংশ শতাব্দীর সর্বকালের সেরা সরোদবাদক ছিলেন রাধিকা মোহন মৈত্র। তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছিলেন যেমন সংগীতচার্য উপাধি[২] এবং ১৯৭১ সালে তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।[৩]
প্রারম্ভিক জীবন
রাধিকা মোহন মৈত্র এক বাঙালি জমিদার পরিবারে জন্ম যাদের সংগীত চর্চা এবং শিল্পের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তার ঠাকুরদাদা ললিত মোহন মৈত্র তবলা বাদক ছিলেন, তার বাবা ব্রজেন্দ্র মোহন সরোদ বাদক এবং তার মা সেতার শিখতেন। তার ঠাকুরদাদা যাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ আমির খান এবং তিনিই ছিলেন রাধিকা মোহন মৈত্রের গুরু ও প্রধান শিক্ষক, যদিও শিষ্যরা তার অনুমতি নিয়ে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র ও সংগীত চর্চা করতে পারতেন। তার সংগীত প্রশিক্ষণ ছাড়াও তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দর্শনে এম.এ. ডিগ্রি এবং এলএল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীকালে, তিনি কিছু সময়ের জন্য দর্শন প্রশিক্ষণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রকাশিত গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল এবং তাকে প্রখ্যাত সংগীতবিদের স্বীকৃতি দেয়া হয়।[৪]
সঙ্গীত জীবন
১৯৫০-এর দশকে রাধিকা মোহন মৈত্র শিল্পী হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিলেন, সেই সময় তিনি ভারতে এবং বিশ্বের নানা দেশে সঙ্গীতানুষ্ঠান করতেন এবং তার চাহিদা খুব ছিল। বেতারে আবৃত্তি ছাড়া, তিনি ভারত সরকারের কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের অংশ হিসাবে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলিতে সঙ্গীতানুষ্ঠান করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারী সফরেও সঙ্গীত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে এই সময় থেকেই তিনি ধীরে ধীরে তিনি তার সঙ্গীতানুষ্ঠান কম করতে থাকেন, পরিবর্তে সরোদ এবং সেতার শেখানোর দিকে মনোনিবেশ করবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বেশিরভাগ সময় তার ছাত্রদের পাঠানো নতুন শিক্ষার্থীদেরই শেখতেন, কখনও কখনও তিনি সরাসরি পড়াতেন এবং অন্যান্য সময় তিনি কোনও ছাত্রকে এই কার্যটি অর্পণ করতেন।[৫]
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে রাধিকা মোহন মৈত্র, সুশংয়ের রাজ পরিবারের মেয়ে, ললিতা চৌধুরীকে বিবাহ করেছিলেন।[৬]
দেহত্যাগ
১৯৮১ সালে, তিনি এক দুর্ঘটনার ফলে, মাত্র ৬৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়েছিল।[৭]
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
- মুখার্জী, কল্যাণ; মানুএল, পিটার (২০১০)। "রাধিকা মোহন মৈত্র: হিজ লাইফ অ্যান্ড টাইমস"। এশিয়ান মিউজিক। 41 (2): 180–197। ডিওআই:10.1353/amu.0.0065।
বহিঃসংযোগ