মৌসুমি বায়ুদক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ।[১] ধারণা করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়।
*গ্রীষ্মমৌসুমি:------
গ্রীষ্মকালে প্রবল উষ্ণতায় স্থলভাগে যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে সংলগ্ন সমুদ্র অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে।
একেই বলে মৌসুমী বায়ুর আগমন বা গ্রীষ্ম মৌসুমী।
*শীত মৌসুমী:--------
শীতকালের স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণে শীতল হয় এবং সমুদ্র তুলনামূলক উষ্ণ থাকে।ফলে সমুদ্র ে সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ এবং স্থলভাগে উচ্চচাপ। এই অবস্থায় মৌসুমী বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বয়ে যায় এটি মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাগমন বা শীত মৌসুমী।
ব্যুৎপত্তি
মৌসুমি বায়ু শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ (Monsoon) মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ (مَوْسِمٌ) বা মালয়লম শব্দ 'মনসিন'(Monsin) থেকে এসেছে। ‘মাওসিম’ শব্দের অর্থ ঋতু বা কাল। [১]।মৌসুমি শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী 'এডমন্ড হ্যালি'(১৬৫৬)।
প্রক্রিয়া
গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ভূখণ্ডে প্রচণ্ড তাপের কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়, একই সময়ে ভারত মহাসাগর তুলনামূলকভাবে শীতলতর হওয়ায় উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পসহ সাগর থেকে ভূখণ্ডে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় যা ভারি বৃষ্টিপাত ঘটায়।[১]
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুই শাখায় বিভক্ত: আরব সাগর প্রবাহ এবং বঙ্গোপসাগর প্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহ ভারতের কেন্দ্রভূমির আবহাওয়ার ওপর অধিক প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি মূলত গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জুন মাসের শুরুর দিকে এই বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের কেন্দ্র-অঞ্চলের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে।[১]
শীতকালে ভারত মহাসাগরের জলের তুলনায় ভারতীয় ভূখণ্ড দ্রুত শীতল হয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে শীতকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহের একটি ধারা বাংলাদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ধাবিত হয়।[১]