মিশাল বিনতে ফাহদ আল সৌদ (১৯৫৮ – ১৫ জুলাই ১৯৭৭; আরবি: الأميرة مشاعل بنت فهد بن محمد بن عبدالعزيز آل سعود آل سعود হাউস অব সৌদের একজন সদস্য ছিলেন, তিনি ১৯ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে ব্যভিচার[১] করার জন্য বন্দুকের গুলিতে[২] মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন প্রিন্স ফাহাদ বিন মুহাম্মদের কন্যা এবং সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল আজিজের পুত্র, বাদশাহ খালিদের বড় এবং একমাত্র নিজের ভাই প্রিন্স মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজের নাতনী।
পটভূমি
রাজকুমারী মিশালের পরিবার তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী লেবাননের বৈরুতে স্কুলে পড়াশুনার জন্য পাঠিয়েছিল। সেখানে থাকাকালীন তিনি লেবাননে সৌদি রাষ্ট্রদূত আলী হাসান আল শায়েরের ভাতিজা খালেদ আল শায়ের মুহালহালের প্রেমে পড়েন এবং তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। সৌদি আরবে ফিরে আসার পর দেখা গেল যে তারা বেশ কয়েকবার নিভৃতে দেখা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনা হয়। তিনি জলে ডুবে যাবার অভিনয় করে[৩] এবং খালেদের সাথে সৌদি আরব থেকে পালানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ধরা পড়ে যান। রাজকুমারী পুরুষের ছদ্মবেশে থাকলেও জেদ্দা বিমানবন্দরে পাসপোর্ট পরীক্ষক তাকে ধরে ফেলেন।[৪] পরে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।[৫] সৌদি আরবে বর্তমান শরিয়া আইনের অধীনে, শুধুমাত্র চারজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষ্য দিলে একজন ব্যক্তিকে যৌন অনুপ্রবেশের ব্যাভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে, অথবা তারা যদি নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে, আদালতে চারবার উল্লেখ করে "আমি ব্যভিচার করেছি", তাহলেও তারা দোষী সাব্যস্ত হবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার পরিবার তাকে স্বীকার না করার জন্য অনুরোধ করে এবং তার প্রেমিকের সঙ্গে আর কখনও দেখা না করার কথা বলে। আদালতে ফিরে আসার পর, তিনি তার স্বীকারোক্তি পুনরাবৃত্তি করে বলেন: "আমি ব্যভিচার করেছি। আমি ব্যভিচার করেছি। আমি ব্যভিচার করেছি। "
ফাঁসি
১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই মিশাল এবং খালেদ উভয়েকে জেদ্দায় কুইন্স পার্কের বিল্ডিংয়ের পাশে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি তার বংশের উপর যে অসম্মান করেছিলেন তার জন্য তার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং নতজানু করা হয়েছিল। তার দাদা,[৬][৬][৭][৮] খালেদ, তার মৃত্যুদণ্ড দেখতে বাধ্য হওয়ার পর, সে একটি তলোয়ার দিয়ে মিশালের শিরশ্ছেদ করে। এ বিশ্বাসে যে, একজন পেশাদার জল্লাদের চেয়ে রাজকন্যার পুরুষ আত্মীয়দের একজনের পক্ষে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করা অনেক ভালো। তার শিরচ্ছেদ করতে পাঁচটি আঘাত লাগে।[৪][৯] উভয় মৃত্যুদণ্ড জেদ্দার প্রাসাদের কাছে পরিচালিত হয়েছিল, দীরা স্কোয়ারে নয় ।
রাজকন্যার মৃত্যু তথ্যচিত্র
স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজক অ্যান্টনি টমাস সৌদি আরবে এসে রাজকন্যার গল্প সম্পর্কে অসংখ্য মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি পরস্পরবিরোধী গল্পের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে একটি ব্রিটিশ তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে, ডেথ অফ এ প্রিন্সেস । চলচ্চিত্রটি ৯ এপ্রিল ১৯৮০ সালে আইটিভি টেলিভিশন নেটওয়ার্কে এবং তারপর এক মাস পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পিবিএস এ প্রদর্শিত হওয়ার কথা ছিল। উভয় সম্প্রচারই তীব্র প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছিল, এরপর সৌদিদের কাছ থেকে এই সম্প্রচার বাতিল করার জন্য জোরালো কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ ছিল। ব্রিটিশ সম্প্রচার বাতিল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, বাদশাহ খালিদ সৌদি আরব থেকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছিলেন।[১০] ১৯৮০ সালের মে মাসে, পিবিএসের দিকে মনোযোগ চলে যায় সেখানে তাদের কর্মকর্তারা কর্পোরেশন এবং রাজনীতিবিদদের একমাসের চাপ সহ্য করে। একটি বড় পিবিএস পৃষ্ঠপোষক, মোবিল অয়েল কর্পোরেশন , দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অপ-এড পৃষ্ঠায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এবং এটি মার্কিন-সৌদি সম্পর্ককে বিপন্ন ঘোষণা করে। কিছু দিন স্থবির থাকার পর, এটি শেষ পর্যন্ত পিবিএস প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মে ১৯৮০ -তে সম্প্রচারিত হয়, যদিও কিছু পিবিএস স্টেশন তা করেনি। উদাহরণস্বরূপ, সাউথ ক্যারোলিনায়, পিবিএস অনুমোদিত চলচ্চিত্রটির সম্প্রচার বাতিল করে, এই সিদ্ধান্তের দ্বারা প্রভাবিত যে সৌদি আরবে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন সি ওয়েস্ট, পূর্বে বাদশার গভর্নর ছিলেন । ডকুড্রামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে "ওয়ার্ল্ড" নামে একটি সাপ্তাহিক পিবিএস প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে প্রচারিত হয়। সেই প্রোগ্রামটি পরে পিবিএস ফ্রন্টলাইন নামে পরিচিত হয়। আসল সম্প্রচারের ২৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৫ সালে ফ্রন্টলাইনে ডেথ অফ এ প্রিন্সেস আবার প্রচারিত হয়।[১১] রাজা খালিদ ছবিটি বন্ধ করার জন্য নেটওয়ার্কে কাছে ১১ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব করেছিলেন বলে জানা গেছে।[৬] পরিচালক অ্যান্টনি থমাসের মতে, এখানে কোন বিচার হয়নি এবং এটা সকারীভাবে মৃত্যুদণ্ডও ছিল না।[১] ডেভিড অফ এ প্রিন্সেসের সহ-লেখক এবং নির্বাহী প্রযোজক ডেভিড ফ্যানিং বলেন, এটা এক বালিকার প্রেমের করুন পরিণতি, যা রাস্ট্র ঘটিয়েছে।
আরও দেখুন
- সৌদি আরবে ফাঁসি
- ২০১১ সালে সৌদি আরব বিক্ষোভ
- দিনা আলী লাসলুম
- সারা বিনতে তালাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ
- সমর বাদাবী
- হামজা কাশগরী
- মানাল আল-শরীফ
তথ্যসূত্র