মালিক ইবনে নুয়ায়রাহ (আরবি: مالك بن نويرة) ছিলেন প্রাক-ইসলামিক সময়ে বাহরাইন ও নজদের মধ্যবর্তী উত্তরপূর্ব আরব অঞ্চলের বনু তামিম গোত্রের বনু ইয়ারবু নামক উপগোত্রের সর্দার। ইসলাম আগমনের পূর্বে গোত্রটি পৌত্তলিক ছিল। মালিকের গোত্রের কেন্দ্রীয় কার্যস্থলের নাম ছিল বুতাহ।
দানশীলতা ও অতিথিপরায়ণতার জন্য সুপরিচিত মালিকের সম্পর্কে বলা হতো যে তিনি সারারাত বাড়ির বাইরে একটি বাতি জ্বালিয়ে রেখে দিতেন যেন কোন পথচারী মুসাফির জানতে পারে কোথায় তাকে আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে যেতে হবে। রাতে তিনি ওই বাতিটি পরখ করতে বাইরে যেতেন। তিনি অত্যন্ত ঘন চুলবিশিষ্ট এক সুদর্শন যুবক ছিলেন যার সম্পর্কে বলা হতো যে তিনি "চাঁদের মত সুন্দর"। তিনি অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী ছিলেন, নিজ সাহস ও বীরত্বের জন্য পরিচিত ছিলেন, এবং একজন জনপ্রিয় কবি ছিলেন। সাহসিকতা, দানশীলতা এবং কবিত্ব সে সময়ে আরবের সবচেয়ে প্রশংসনীয় গুণাবলি ছিল। তিনি লায়লা বিনতে মিনহালকে বিয়ে করেন যিনি সে সময়ে আরবের অন্যতম সুন্দরী মহিলা বলে কথিত ছিলেন।
মুহাম্মাদ(সা) তাকে বনি হাঞ্জালা গোত্রের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার প্রধান দায়িত্ব ছিল যাকাত ও সাদকাহ সংগ্রহ করা ও মদিনায় তা পৌঁছে দেয়া। মুহাম্মাদ(সা) এর মৃত্যুর খবর বুতাহে পৌঁছালে মালিক যাকাত আদায় করলেন কিন্তু তা মদিনায় পাঠালেন না বরং পুনরায় তা যাকাত ও সাদকাহ প্রদানকারীদের ফিরিয়ে দিলেন এই বলে যে,"হে বনি হাঞ্জালাহ, তোমাদের সম্পত্তি এখন তোমাদের নিজের।"
মালিক ইবনে নুয়ায়রাহর উপর আক্রমণ
মুহাম্মাদ(সা) এর মৃত্যুর পর আরবে ছড়িয়ে পড়া রিদ্দার যুদ্ধ চলাকালে, আবু বকর(রা) তার সবচেয়ে প্রতিভাবান সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে চারপাশের এলাকার গোত্রগুলোকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য ৪০০০ সৈন্যসহ নাজদে প্রেরণ করলেন। মালিক মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত ছিলেন। মুহাম্মাদ(সা) এর মৃত্যুর পর, তিনি মদিনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহে নেমে পড়েন। মুহাম্মাদ(সা) এর মৃত্যুর অল্পদিন পরেই, তিনি তার গোত্রের লোকদের কাছে সকল খাজনা ফিরিয়ে দিলেন এই বলে যে, আমি শুধুমাত্র গাধীরে নির্বাচিত লোকটির (আলী ইবনে আবু তালিব) কাছেই খাজনা দেবো।[১]
অধিকন্তু, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আরেকটি কারণ হল তিনি স্বঘোষিত নবী সাজাহর সাথে একটি বিনিময় চুক্তিতে সাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তিতে বলা হয়েছিলো, প্রথমে তারা স্থানীয় শত্রুদেরকে মিলেমিশে মোকাবিলা করবে, আর এরপর তারা মদিনা রাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে।[২]
মালিক যখন শক্তিশালী আরব গোত্রগুলোর বিরুদ্ধে খালিদের বিজয়ের খবর জানতে পারলেন, তিনি তার গোত্রের লোকদের খালিদের যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হতে বারণ করে ঘরে থেকে শান্তি কামনা করতে বললেন।[৩] তিনি নিজেও মরুর ভেতর দিয়ে নিজ পরিবার সহ পালিয়ে গেলেন। পাশাপাশি, নিজেকে মদিনা রাষ্ট্রের (ভবিতব্য ইসলামী সাম্রাজ্য) প্রতি অনুগত প্রমাণ করতে, তিনি খাজনা আদায় করে তা মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন।
তার কাফেলাটি বাত্তাহ নগরীতে খালিদের সেনাবাহিনির দ্বারা আটক হল। খালিদ তাঁদের সাজাহর সাথে চুক্তিতে সাক্ষরের বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু তারা বললেন যে এটা করা হয়েছিল শুধুমাত্র তাঁদের শত্রুদের প্রতি প্রতিশোধ নিশ্চিত করার স্বার্থে।[৪]
খলিদ নাজদে পৌঁছে, কোন প্রতিপক্ষ সেনাদলকে পেলেন না, তাই তিনি নিকটস্থ গ্রামগুলোতে অশ্বারোহী দূত প্রেরণ করলেন এবং তাঁদেরকে প্রতিটি দলের প্রতি আযান (ইসলামী প্রার্থনার ডাক) দেয়ার নির্দেশ দিলেন। জিরার বিন আযওয়ার নামের এক দলনেতা আযানের উত্তর না দেয়ার অভিযোগে মালিকের পরিবারকে গ্রেফতার করলেন।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ reference=al-Balazuri: book no: 1, page no:107.
- ↑ reference=al-Tabari: Vol. 2, page no: 496.
- ↑ reference= Tabari: Vol. 2, Page no: 501-502.
- ↑ reference= Tabari: Vol) p. 501-2.
বহিঃসংযোগ