ইমাম মালিক ইবনে আনাস ইবনে মালিক ইবনে আবি আমির আল-আসবাহি (আরবি: مالك بن أنس) (জন্ম: ৭১১ খ্রিস্টাব্দ/৯৩ হিজরী - মৃত্যু: ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ/১৭৯ হিজরী) একজন বিখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং ফিকহের অত্যন্ত সম্মানিত পণ্ডিতদের একজন ছিলেন। তিনি মুসলমানদের প্রধান চার ইমামের একজন। মালেকী মাযহাব তারই প্রণীত মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তার সংকলিত মুয়াত্তা বিখ্যাত এবং প্রাচীনতম হাদীসগ্রন্থ [২][৩]
বংশ
ইমাম মালিক (রহ.)-এর পূর্বপুরুষ ইয়েমেনের অধিবাসী ছিলেন। তার দাদা আবু আমের দ্বিতীয় হিজরীতে (৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে) ইসলাম গ্রহণের পর সপরিবারে মদিনা চলে আসেন। পরবর্তীতে মদিনাতে ইমাম মালিক জন্মগ্রহণ করেন।ইমাম মালেক (রহ.)-এর বংশপরম্পরা ইয়েমেনের শাহি খানদান হুমাইরের শাখা ‘আসবাহ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে তাকে আল-আসবাহী বলা হয়। এ মতকেই প্রখ্যাত ইসলামি ইতিহাসবিদ প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে মুহাম্মদ বিন ইসহাক বলেন, ইমাম মালিক এবং তার পূর্বপুরুষ তায়ম গোত্রের মাওয়ালি ছিলেন।[১][৪][৫]
জীবনী
শিক্ষা
শৈশবেই তিনি পুরো কুরআন শরিফ মুখস্থ করেন। এরপর তিনি মদিনার বিখ্যাত তাবেয়ী আবু সুহাইল নাফের কাছে হাদিস শিক্ষা করেন। এছাড়াও ইমাম মালেক তৎকালীন বহু বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্বদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের মাঝে অন্যতম হলো হিশাম বিন উরওয়া, জাফর সাদিক এবং ইবনে শিহাব যুহরী। এভাবে তিনি বহু শায়খের সান্নিধ্য গ্রহণ করেন।[১]
রিসালাহ মালিক ইলা ইবনি মিতরাফ (رسالہ مالک الی ابن مطراف)
রিসালাহ মালিক ইলা ইবনি যাহাব (رسالہ مالک الی ابن ذہب)
কিতাবুল আক্বজিয়াহ ( کتاب الاقض ہی)
কিতাবুল মানাসেক (کتاب المناسک)
তাফসীরু গারীবিল কুরআন (تفسیر غریب القرآن)
কিতাবুল মাজালিস ‘আন্ মালিক (کتاب المجالس عن مالک)
তাফসীরুল কুরআন (تفسیرالقرآن)
কিতাবুল মাসায়িল
ইমাম মালিকের আকিদাহ
কুরআন সম্পর্কে
যারা কুরআন কে আল্লাহর কালাম না বলে আল্লাহর সৃষ্টি বলতো ইমাম মালিক(রহ.) তাদের যিনদীক বলতেন। আবু নুআইম(রহ.) ইয়াহইয়া বিন রাবী‘ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
আমি মালিক বিন আনাসের নিকটে বসেছিলাম। এমন সময় এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ আব্দুল্লাহ! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে কুরআনকে সৃষ্ট বলে? মালিক বললেন, زِنْدِيقٌ اقْتُلُوهُ ‘সে যিনদীক। তোমরা তাকে হত্যা কর’। সে বলল, হে আবূ আব্দুল্লাহ! আমি তো একটা শোনা কথা নকল করেছি মাত্র’। মালিক বললেন, لَمْ أَسْمَعْهُ مِنْ أَحَدٍ إِنَّمَا سَمِعْتُهُ مِنْكَ ‘আমি তোমাকে ছাড়া আর কারো থেকে এ কথা শুনিনি। এ বড় সাংঘাত।[৬]
ইমাম লালকাঈ(রহ.) এ কথা আবূ মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া বিন খালাফের বরাতে মালেক থেকে উদ্ধৃত করেছেন।[৭] একই কথা তুলে ধরেছেন কাযী ইয়ায(রহ.) ও।[৮]
আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলি
ইমাম মালিক(রহ.) আল্লাহর সিফাত সমূহের কোন রূপ তাবিল বা ভিন্নার্থ গ্রহণের পক্ষপাতি ছিলেন না।বরং আল্লাহর হাত,পা,মুখ এসবের হুবুহু অর্থই নিতেন।
আমি মালিক,সাওরী, আওযাঈ ও লায়ছ বিন সা‘দকে আল্লাহর গুণাবলী সংক্রান্ত হাদিসগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বলেছিলেন, এগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবেই বর্ণিত।
[৯][১০][১১][১২]
অর্থাৎ যা আছে হুবুহু সেটাই বিশ্বাস করা লাগবে।আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদাহ এটাই।
ইবনু আব্দিল বার্র (রহ.) বলেন,
মালিককে কিয়ামত দিবসে আল্লাহকে দেখা যাবে কি না তা জিজ্ঞেস করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
অনুবাদঃ‘কখনই না। তারা সেদিন তাদের প্রতিপালকের দর্শন হতে বঞ্চিত থাকবে’ (মুতাফফিফীন ৮৩/১৫)।[১৩]
অর্থাৎ ইমাম মালিক(রহ.) এর মত হচ্ছে আল্লাহকে বান্দারা কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে।
আল্লাহর অবস্থান
ইমাম মালিক(রহ.) এর আকিদাহ হচ্ছে আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত আর এ বিষয়ে বিশ্বাস করা ওয়াজিব।আল্লাহর সমুন্নত হওয়ার ধরন সম্পর্কে প্রশ্ন করা ব্যাতিরেকেই এ বিষয়ে বিশ্বাস করতে হবে।
আবূ নুআইম(রহ.) জাফর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
আমরা মালেক বিন আনাসের মজলিসে ছিলাম। এ সময় এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ আব্দুল্লাহ! রহমান (আল্লাহ) তো আরশে সমুন্নত। তিনি কীভাবে সমুন্নত? তার প্রশ্নে ইমাম মালিক এতটাই রাগান্বিত হলেন যে আর কিছুতে তিনি অত রাগান্বিত হননি। তিনি মাটির দিকে চোখ করলেন এবং তাঁর হাতে থাকা একটি ডাল দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটতে লাগলেন। রাগে তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তিনি ডালটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাথা তুললেন এবং বললেন,
الْكَيْفُ مِنْهُ غَيْرُ مَعْقُولٍ، وَالِاسْتِوَاءُ مِنْهُ غَيْرُ مَجْهُولٍ، وَالْإِيمَانُ بِهِ وَاجِبٌ، وَالسُّؤَالُ عَنْهُ بِدْعَةٌ
অনুবাদঃ ‘তাঁর সমুন্নত হওয়ার ধরন অবোধগম্য, তবে তাঁর সমুন্নত হওয়া অজ্ঞাত নয়, এ(আরশের উপর আছেন) বিষয়ে ঈমান রাখা ফরয এবং প্রশ্ন তোলা বিদআত। আমার ধারণা তুমি একজন বিদআতী। তারপর তিনি তাকে বের করে দিতে আদেশ দিলেন। ফলে তাকে বের করে দেওয়া হল।[১৪]
এই ঘটনা আস-সাবূনী(রহ.) জাফর বিন আব্দল্লাহর সনদে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন।[১৫] ইবনু আব্দিল বার্র(রহ.) আব্দুল্লাহ বিন নাফে‘র সনদে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন।[১৬]
ইমাম বায়হাকী(রহ.) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহহাবের সনদে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন।[১৭]