মানিক সরকার ( আসল নাম প্রফুল্লচন্দ্র সরকার - পি সি সরকার ) হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন আলোক শিল্পী, অ্যানিমেটর, ইঞ্জিনিয়ার এবং লেজার শিল্পী [১] তিনি চারুকলা, কার্টুন, অ্যানিমেশন, লেসার আর্ট শিল্পী এবং সারা বিশ্বের প্রেক্ষাগৃহে লেসার সহযোগে প্রাণবন্ত প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার শিল্পীসত্তার পরিচয় উপস্থাপন করেন। তার এনিমেটেড সমস্ত চিত্রগুলি ভারতের শিশুদের গল্প আধারিত এবং সেগুলি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের সম্মানিত। বিগত পঁচিশ বৎসর ধরে সেগুলি সরকারি প্রচার মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে [২][৩] তার লেসার আর্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশন পরিবেশনা ইন্টারন্যাশনাল লেসার ডিসপ্লে অ্যাসোসিয়েশনের বৈশ্বিক পুরস্কার লাভ করেছে।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
মানিক সরকার বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। [৪] তিনি কিংবদন্তি ভারতীয় জাদুকর প্রতুল চন্দ্র সরকার ও বাসন্তী দেবীর জ্যেষ্ঠপুত্র। তার দুই জ্যেষ্ঠা ভগিনীরা হলেন ইলা ও গীতা এবং কনিষ্ঠ দুই ভ্রাতা হলেন প্রদীপচন্দ্র সরকার বা পি সি সরকার জুনিয়র ও প্রভাসচন্দ্র সরকার বা পি সি সরকার ইয়ং। এরা দুজনেই জাদুকর। তিনি শিখা দেবীকে বিবাহ করেন এবং তাঁদের দুই কন্যারা হলেন পিয়া ও পায়েল।
যুবা বয়সে তিনি সারা বিশ্বে ভ্রমণকারী পিতার মঞ্চে সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। পিতার মঞ্চের দৃশ্যপট অঙ্কন, মঞ্চটিকে আলোর নক্সায় সজ্জিত করতে, আলোকসম্পাতের পরিকল্পনা করতেন প্রায়ই। তবে তিনি জাদুবিদ্যাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চাননি বরং আলো ও শিল্পকলার মাঝে যে জাদু তিনি দেখেছেন, তাকে লেসারে পরিস্ফুট করতে আগ্রহী হলেন [৪]
কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর, উচ্চ শিক্ষার্থে ও আলোক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিল্পকলাচর্চা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। [৫]
কর্মজীবন
ইঞ্জিনিয়ারিং
মানিক সরকার তার কর্মজীবন শুরু করেন কলোরাডোর ডেনেভারের হাওয়ার্ডের ডব্লু বাটাররেক অ্যান্ড কোম্পানিতে ইলেকট্রিক্যাল কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। [৬] দু-বছর পরে সংস্থাটির এক অংশীদার হন এবং নাম পরিবর্তিত হয় - বাটাররেক সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শেষে সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং। চল্লিশ বৎসরের বেশি সময়ে তার ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটির উন্নতি হয়েছে এবং ডেনেভারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কলোরাডো কনভেনশন সেন্টার, জাপান ও সৌদি আরবের বহু ক্রীড়াঙ্গনসহ অসংখ্য বহু মিলিয়ন-ডলারের প্রকল্পের কাজ শেষ করেন। এই সময়ে মানিক সরকার আলোকসজ্জার উপর তিনটি বই রচনা করেন। এগুলি পাঠ্যপুস্তক হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে গৃহীত হয়েছে।
লেজার আর্ট এবং অ্যানিমেশন
মানিক সরকারের প্রথম যে খ্যাতি আসে সেটি ছিল - দুটি মেয়ে ও তার সাথে এনিমেটেড গরু ছাগল আর পাখি নিয়ে “ভারতের এক রূপকথা : দীপা ও রূপা” নামক ছবি থেকে। ছবিটি এত প্রাণবন্ত হয়েছিল যে, ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে সেটি শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সোনার থালা বা ফলক পেয়েছিল এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন টেলিভিশনের এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। [৭] এবং ভারতের ঋষি ও মুষিকের অতি পরিচিত পঞ্চতন্ত্রের উপর নির্মিত পরের ছবি -“দ্য সাগা অ্যান্ড দ্য সেজ” ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সোনার পদক লাভ করে। কাঠুরের মেয়েকে নিয়ে তৈরি তার অপর এনিমেটেড ছবি “দ্য উডকাটার্স ডটার” যেটি নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। আবোল তাবোলের “গন্ধবিচার”-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি Sniff' (স্নিফ) সোনার ঈগল লাভ করেছিল। কলম্বাস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে “দ্য রুল অফ টোয়েন্টি-ফোর” ব্রোঞ্জ ফলক পেয়েছিল।
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ হতে লেসার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এনিমেশন ছবি তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। কলকাতাকে নিয়ে তৈরি “ক্যালকাটা ফরএভার: এ লেসার ফ্যান্টাসি” - লেসার প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম তথ্যচিত্র প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছিল। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত লেসার প্রদর্শনী “ড্যান্সিং উইথ মাই সোল অ্যান্ড ইন্ডিয়া ফরএভার”-র জন্য নিউ জার্সির ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্দো-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে পান “এক্সসেলেন্স ইন আর্ট প্লেক” [৮] সানফ্রানসিকোতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় কনসুলেট জেনারেল ৬১তম প্রজাতন্ত্র দিবসের আয়োজন করলে তিনি ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত দীর্ঘ সময়কালের ইতিহাস নিয়ে লেসার তথ্যচিত্র “আওয়ার রিপাবলিক বার্থ” প্রদর্শন করেন ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিকোর ঐতিহাসিক প্যালেস অব ফাইন আর্টসে। [৯]
২০১২ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দর উপর তৈরি ঘণ্টাখানেকের লেসার তথ্যচিত্র - “স্বামীজি” এত নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে, ছবিটি রামকৃষ্ণ মিশনের, বেদান্ত সোসাইটির-সহ সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে।[১০] ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে জানুয়ারি বেলুড় মঠ ক্যাম্পাসে এটি প্রদর্শিত হলে ভারতের বেলুড়মঠের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পক্ষে বলা হয় - স্বামীজির জীবনকথা যে ত্রি-মাত্রিক প্রভাবে পরিস্ফুট হচ্ছিল, যেন উপস্থিত ১৫,০০০ মানুষের দুজোড়া চোখের সামনে যেন সুচারুরূপে আঁকা হচ্ছে। [১১]
সম্মান ও পুরস্কার
মানিক সরকার ইন্টারন্যাশনাল লেসার ডিসপ্লে অ্যাসোসিয়েশনের শৈপ্লিক পুরস্কার তিন বার লাভ করেন এবং তিনিই প্রথম ভারতীয় বংশোদভূত মার্কিন নাগরিক হিসাবেই অর্জন করেন। তিনি প্রথম পুরস্কার পান ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রেক্ষাগৃহে লেসার সহযোগে ত্রি-মাত্রিক প্রভাবে "এনলাইটেনমেন্ট অব বুদ্ধ" বুদ্ধের জীবন লেসারে চিত্রায়িত করার জন্য। [১২] তার দ্বিতীয় জয় ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে। [১৩] এটি ছিল তার লেজার-আর্ট রিফ্লেকশনের লেজার ফটোগ্রাফির জন্য, যার জন্য তিনি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দেই আইএলডিএ (ILDA) পুরস্কার প্রতিযোগিতায় লেজার ফটোগ্রাফির জন্য প্রথম স্থান অর্জন করে। তার তৃতীয় জয় ছিল লাইট আর্ট ইন শাওয়ার ওসান-এ লেজারের উদ্ভাবনী প্রয়োগের জন্য, যা ২০১৫ সালের আইএলডিএ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। তার ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের লেজার অ্যানিমেশন - বিউটিফুল মেস, অ্যাকোলেড গ্লোবাল ফিল্ম কম্পিটিশনে মেরিট পুরস্কার জিতেছিল। [১৪]
২০১১ খ্রিস্টাব্দের একুশতম বার্ষিক প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারত সম্মান পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মানিক সরকার লেসার এনিমেশন ল্যাবরেটরি গঠন করে। তিনি এরজন্য এক লক্ষ মার্কিন ভলারের লেসার ল্যাবের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম লেসার এনিমেশন কোর্সের শুভ সূচনা করেন।[১৫]
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই নভেম্বর জার্মানির অ্যালেন-এ, আন্তর্জাতিক লেজার ডিসপ্লে অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ভারতের ঐতিহ্যমণ্ডিত সংস্কৃতির ক্ষেত্রকে ব্যতিক্রমী যোগ্যতায় তুলে ধরার কারণে স্পেশাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পরবর্তী প্রজন্মকে লেজার আর্ট এবং অ্যানিমেশনে প্রস্তুত করার জন্য কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মানিক সরকার লেজার অ্যানিমেশন ল্যাবরেটরি' প্রতিষ্ঠা করে। [১৬]
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মে, ভারতের নয়াদিল্লিতে, সায়েন্স অ্যান্ড আর্টসের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি আইআইটি-বিএইচইউ অ্যালুমনি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। [১৭]
২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তার কাজের রজতজয়ন্তী বর্ষে তথা ২৫তম বার্ষিক সরকারি সম্প্রচার এনিমেশন সম্প্রচার অনুষ্ঠানে কলোরাডোর গভর্নর জন হিকেনলুপার মানিক সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন-
[৩]
"বিগত শতকের এক চতুর্থাংশ সময় ধরে আপনার এনিমেশন ছবি ছোটদের বিশেষ ভ্রমণে ভারতের সেই সমস্ত স্থানে নিয়ে গেছে, যেখানকার সংস্কৃতি ও মানুষ সম্পর্কে তারা অনেক কিছুই শিখতে পেরেছে। তার ছবিগুলি শিক্ষা প্রদান করেছে - বৈচিত্র্যতা এক সম্পদ এবং সেটি আমাদের কাছে আনে, মানবতাকে একসূত্রে বেঁধেছে....আপনার কাজ কলোরাডো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে গর্বিত করেছে।"
আরও দেখুন
মানিক সরকার শিল্পকলা এবং অ্যানিমেশন সম্পর্কে অসংখ্য নিবন্ধ, একাডেমিক গবেষণা পত্র, এবং গ্রন্থ রচনা করেছেন।[১৮] শিল্প ও বিজ্ঞানে তার যুগপৎ অবদানের জন্য নেস্টর মার্কাডো, এলনোরা মিনোজা-মার্কাডো এবং অলোক সারওয়াল রচিত ভয়েস অব কলোরাডো: পার্সপেকটিভস অফ এশিয়ান আমেরিকানস বইয়ে তাকে দ্য রেনেসাঁস ম্যান অফ আওয়ার টাইম - "আমাদের সময়ের রেনেসাঁ পুরুষ" হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আইএসবিএন ০৬১৫২০২১৩৬ )
মানিক সরকার উপর বই
আরো দেখুন
বহিঃসংযোগ
তথ্যসূত্র
- ↑ The Animator ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে (Trans World Features, Interview, 2004)
- ↑ Manick's Animation Films on US TV Stations (Pravasi Today, 2010)
- ↑ ক খ Colorado Governor Honors Manick Sorcar (India.com, 2015)
- ↑ ক খ Sur, Roma (২০০৯)। World of Manick Sorcar: Where Art Becomes Magic (First সংস্করণ)। Galaxylight Books।
- ↑ Animate Magic (The Hindu, 2006)
- ↑ "Of lasers and monks: Arvada engineer, artist illuminates a great soul"। The Denver Post। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Colorado to Ring in New Year with Animation of India (AWN, January 1, 2006)
- ↑ The Laserist Interview: Manick Sorcar ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জুন ২০২২ তারিখে (Laserist Cover Story, 2008)
- ↑ India Republic Day 2010 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-০৭-১৩ তারিখে (India West, January 2010)
- ↑ Manick Sorcar, the Man with the Laser Touch ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে (Little India, September 19, 2017)
- ↑ "Laser show on Swamiji"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Prestigious award for creator of Buddha laser show (The Buddhist Channel, 2006)
- ↑ ILDA honors LaserLight Magic photography with 2007 Artistic Award ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে (LaserFocusWorld, 2008)
- ↑ Denver, Colorado-based Laserist and Animator Manick Sorcar Wins Award at Global Film Contest ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে (India West, July 31, 2017)
- ↑ Wizard of light brings magic of laser to JU (The Telegraph, 2011)
- ↑ "Indian-American honored for laser displays of Indian heritage"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Alumni Award"। The Statesman। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ NRI animator's works get unusual tribute (Silicon India, 2005)
- ↑ Laser Art Book: World of Manick Sorcar: Where Art Becomes Magic ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে (International Laser Display Association, 2008)
- ↑ US writer pens book on India-born animator (New Kerala, 2010)