মাওলানা ইলিয়াস রহ. ও তাঁর দীনি দাওয়াত (উর্দু: حضرت مولانا محمد الیاسؒ اور ان کی دینی دعوت) তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভিকে নিয়ে রচিত ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর একটি উর্দু জীবনী সাহিত্য।[১][২][৩] লেখক ১৯৪৫ সালে এটি রচনা করেন। আটটি অধ্যায়ে সমাপ্ত গ্রন্থটির প্রথম পর্বে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভির জীবনী, ত্যাগ, সাধনা, কর্মপদ্ধতি, তাবলিগ জামাতের সূচনা ও ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে তাবলিগ জামাতের কিছু আমল নিয়ে বিভিন্ন জনের নানা রকম সংশয়, এই জামাতের দার্শনিক ভিত্তি সম্পর্কে সুক্ষ্ম আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন সুলাইমান নদভী ও মনজুর নোমানী।
আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী দীর্ঘদিন মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভির সান্নিধ্যে ছিলেন। তার সাথে অনেক দাওয়াতি সফর করেছেন, কান্ধলভির ত্যাগ ও সাধনা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাবলিগ জামাতের সূচনা, প্রেক্ষাপট, আমল, নীতি ও তরিকা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন। নদভীর এই রচনাটি ইসলামে দাওয়াত ও ইসলাহের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করে। নদভী তাবলিগ জামাতকে একটি "বিশ্বাস পুনরুজ্জীবন আন্দোলন" হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন যা সচেতনভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিহার করে, সাম্প্রদায়িক বিবাদ এবং সংঘাত থেকে বিরত থাকে। এটি দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মুসলমানদের মধ্যেও নিজেদের শিকড় গেড়েছে, একটি সত্যিকারের গণআন্দোলন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের সহজ বার্তা, মৌলিক ইসলামি আচার-অনুষ্ঠানের জ্ঞান এবং অনৈসলামিক রীতিনীতি পরিত্যাগ করে, নীরবে ইসলামের প্রতিশ্রুতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে।[৪]
বিষয়বস্তু
এই রচনার প্রথম অধ্যায়ে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভির পরিবার, পরিবেশ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, তার প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষা সমাপ্তির বিশদ বিবরণ রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার শহরে কান্ধলভির বসতি এবং সেখানে সর্বোত্তম উপায়ে তার শিক্ষাদানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায় কান্ধলভির সময় এবং মেওয়াতের জনগণকে পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কারের লক্ষ্যে মেওয়াতে তাবলিগ আন্দোলনের সূচনার সময় মেওয়াতের জনগণের ধর্মীয় ও নৈতিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। পঞ্চম অধ্যায়ে কান্ধলভির সময় মেওয়াতের বাইরে তাবলিগ আন্দোলনের দাওয়াহ কার্যক্রমের সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে কান্ধলভির শেষ সময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে মাওলানা কান্ধলভির গুণাবলী এবং বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিশদ বিবরণ রয়েছে। শেষ অধ্যায়ে তাবলিগ জামাতের আদর্শগত ভিত্তি, এর নীতিমালা এবং এর ধর্মীয় ও আদর্শিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[৪]
অনুবাদ
গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ আসিফ কিদওয়াই, যা প্রকাশ করেছে মজলিসে তাহকিকাত ওয়া নাশরিয়াতে ইসলাম। হজরতজী মাওলানা ইলিয়াস নামে গ্রন্থটির প্রথম পর্বের অনুবাদ করেন মুহিউদ্দীন খান। মাওলানা ইলিয়াস রহ. ও তাঁর দীনি দাওয়াত নামে ২০১৯ সালে গ্রন্থটির পূর্ণাঙ্গ করেন আবুল ফাতাহ কাসেমী।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ