মাইক্রোসফট অ্যাক্সেল (ইংরেজি: Microsoft Excel) মাইক্রোসফটের উন্নয়ন করা একটি স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, যেটার ম্যাকওএস, উইন্ডোজ এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ রয়েছে। সফটওয়্যারটি বিশাল একটি ব্যবহারকারী ভিত রয়েছে। এক্সেলে হিসাব-নিকাশ, চিত্রায়নের হাতিয়ার, পিভট টেবিল, ম্যাক্রো প্রোগ্রামিং ভাষাসহ বেশ অনেক সুবিধা রয়েছে। এক্সেল সবগুলো প্ল্যাটফর্মেই বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষ করে ১৯৯৩ সালে ৫ম সংস্করণ থেকে এক্সেল তৎকালীন ইন্ডাস্ট্রি প্রামাণিক লোটাস ১-২-৩ এর জায়গা দখল করে নেয়। এক্সেল মাইক্রোসফটের অফিস স্যুটের অংশ। এ ধরনের প্রোগ্ৰাম বা ওয়ার্ড প্রসেসর এর ফাইল কে স্প্রেডশিট বা ওয়ার্কশিট (Spreadsheet or Worksheet ) বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য
মাইক্রোসফট এক্সেল হচ্ছে একটি স্প্রেডশিট অ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম। আক্ষরিক অর্থে "স্প্রেডশিট" হলো ছককাটা বড় মাপের কাগজ, যেখানে হিসেবাদির কাজ সম্পন্ন হয়। কাগজের স্প্রেডশিটের ঠিক অনুরূপ হচ্ছে মাইক্রোসফট এক্সেল। বিশেষ কিছু কারিগরি দক্ষতা জানা থাকলে এই প্রোগ্রাম সহজেই ব্যবহার করা যায়। ব্যবসায়িক কাজ ছাড়াও শিক্ষা, দাপ্তরিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাটাবেইজ তৈরি ইত্যাদি কাজেও এর ব্যবহারের গুরুত্ব আছে।
প্রাথমিক ক্রিয়াপ্রণালী
মাইক্রোসফট এক্সেলে অন্যসব স্প্রেডশিটের সমস্ত প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে,[৩] যেমন সেলের গ্রিড ব্যবহার করা, যেখানে রোগুলো সংখ্যাক্রমে সাজানো এবং কলামগুলো অক্ষরের ভিত্তিতে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানিক, প্রকৌশলগত এবং অর্থায়ন সম্পর্কিত প্রয়োজন মেটাতে এক্সেলের নিজস্ব একসারী ফাংশন রয়েছে। এবং তার সাথে, এক্সেল লাইন গ্রাফ, হিস্টোগ্রাম, এবং চার্টের মাধ্যমে ডাটা প্রদর্শনের ক্ষমতা রাখে। [৪]
এটার নিজস্ব একটি প্রোগ্রামিং দিকও রয়েছে, যেখানে "ভিজুয়াল বেসিক ফর অ্যাপলিকেশন" ব্যবহার করে ব্যবহারকারী বিস্তৃতরকমের সংখ্যাসূচক পদ্ধতি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, উদাহরণস্বরূপ ন্যূনতম প্রভেদসংক্রান্ত গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা সমাধান করে,[৫][৬] এবং তারপর ফলাফলটা স্প্রেডশিটে প্রতিবেদন হিশেবে প্রকাশের জন্য ভিজুয়াল বেসিকে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বয়ংক্রীয়করণ করা সম্ভব। এক্সেলের মিথষ্ক্রিয় বৈশিষ্ট্যও রয়েছে কিছু, যেখানে স্প্রেডশিটকে ব্যবহারকারী থেকে পরিপূর্ণভাবে লুকিয়ে তার সামনে একটি আালাদা ব্যবহারকারী ইন্টারফেস হিশেবে উপস্থাপন করা যায়, যেখানে স্প্রেডশিটটিকেই একটি আলাদা তথাকথিত "অ্যাপলিকেশন" বা "ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম" হিশেবে উপস্থাপন করা হয়, যেমন স্টক অ্যানালাইজার,[৭] অথবা এমন কোন ডিজাইন টুল, যেখানে ব্যবহারকারীর উত্তরের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয়।[৮][৯][১০]
ফাংশন
এক্সেল ২০১৬তে ৪৮৪টি ফাংশন রয়েছে। [১১] এ ৪৮৪টি ফাংশনের মধ্যে ৩৬০টি এক্সেল ২০১০-এই অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মাইক্রোসফট এর ফাংশনসমূহকে ১৪টি শ্রেণিতে ভাগ করে। এর মধ্যে ৩৮৬টি ফাংশনকে ভিবিএ বা ভিজুয়াল বেসিক অ্যাপলিকেশন বলা হয়।
ম্যাক্রো প্রোগ্রামিং
এক্সেলের উইন্ডোজ সংস্করণ মাইক্রোসফটের ভিবিএর মাধ্যমে প্রোগ্রামিং সমর্থন করে, যেটি ভিজুয়াল বেসিকের একটি উপভাষা। ভিবিএ ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং করে স্প্রেডশিটে এমন কিছু করা যায়, যা সাধারণভাবে করা দুরুহ বা একেবারেই অসম্ভব। প্রোগ্রামাররা ভিজুয়াল বেসিক সম্পাদক বা ভিবিই ব্যবহার করে সরাসরি কোড লিখতে পারে, যেখানে কোড লেখা ও ডিবাগের জন্য আলাদা একটা উইন্ডো থাকে যার নাম ডেভলপার । ডেভলপার উইন্ডো এক্সেল অপশন থেকে এড করে নিতে হয়। ব্যবহারকারী সংখ্যাসূচক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে, ডাটা সংগঠনের কাজে ব্যবহার করতে পারে কিংবা শুধু মাত্র ফরম্যাটিঙের কাজেও এটি ব্যবহার করতে পারে।
ভিবিএ কোড তৈরীর একটি সহজ ও সাধারণ উপায় হলো ম্যাক্রো রেকর্ডার ব্যবহার।
চার্ট
নির্দিষ্ট করে দেয়া সেলসমূহ থেকে এক্সেল চার্ট, গ্রাফ অথবা হিস্টোগ্রাম তৈরী করতে সক্ষম। উদ্ভূত চিত্রলেখসমূহ বর্তমান শিটে গ্রত্থিত করা যায়, অথবা স্বকীয় অবজেক্ট হিশেবেও ব্যবহার করা যায়। সেলের উপাদানসমূহ পরিবর্তনের ফলে এ চিত্রলেখগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। kpi চার্ট তৈরি করা যায়। যা ডাটা পরিবর্তন এর সাথে সংক্রিয় ভাবে চার্টে পরিবর্তন হয়। এই ছাড়াও এক্সেল ২০১৬ এই টাইম লাইন বানানো যায়।
অ্যাড-ইন
অ্যাডইন ব্যবহার করে এক্সেলে উপর্যুক্ত সুবিধাসমূহ ছাড়াও আরও বাড়তি সুবিধা যুক্ত করা যায়। কিছু অ্যাড-ইন এক্সেলে আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত থাকে:
অ্যানালাইসিস টুলপ্যাক: প্রকৌশল ও পরিসংখ্যান সম্পর্কিত বিশ্লেষণের জন্য ডাটা বিশ্লেষণ টুল (বৈকল্পিক বিশ্লেষণ ও প্রত্যাগতি বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে)
অ্যানালাইসিস টুলপ্যাক ভিবিএ: অ্যানালাইসিস টুলপ্যাকের জন্য ভিবিএ ফাংশন
সোলভার অ্যাড-ইন: সমীকরণ সমাধানরে টুল
ওয়েবের জন্য এক্সেল
ওয়েবের জন্য এক্সেল মাইক্রোসফট এক্সেলের একটি হালকা সংস্করণ, যেটি ওয়েবের জন্য মাইক্রোসফট অফিসের একটি অংশ।
প্রভাব
এক্সেল একেবারের প্রথমদিককার অনেকগুলো স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের থেকে কিছু ভিন্ন ব্যবহারকারী ইন্টারফেস টুইক প্রদান করে, তবে মূল বিষয়গুলো এখনও অই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারগুলোর মতই রয়ে গেছে। যেমন ভিসিক্যলকপ্রোগ্রামের কথা ধরা যাক, এটা সেলগুলোকে রো এবং কলামে সাজিয়ে রাখতো, এবং প্রত্যাকটা সেল ডাটা বা ফরমুলা সংরক্ষণের ক্ষমতা রাখতো, আবার যেগুলো অ্যাবসল্যুট কিংবা রিলেটিভ রেফারেন্স ধারণ করতে সক্ষম ছিলো, যে বিষয়গুলো এখনও এক্সেলে রয়েছে।
উইন্ডোজের জন্য এক্সেল ২.০ যেটা ম্যাকের একইধরণের একটি প্রোগ্রামেরই অনুকরণ, উইন্ডেজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে একটি মোক্ষম অস্ত্র হিশেবে কাজ করেছে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের একটি ডস সংস্করণ থাকলেও, মাইক্রসফট এক্সেলের ছিলো না।
এক্সেলই প্রথম কোন স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, যেটি ব্যবহারকারীকে স্প্রেডশিটের ফন্ট, ক্যারেক্টার অ্যাট্রিবিউট, সেলের রঙসহ বিভিন্ন কিছু পরিবর্তনের সুযোগ করে দেয়। ইন্টিলিজেন্ট সেল রিকম্পিউটেশন নামের একটি নতুন সুবিধাও এক্সেল চালু করে। অটোফিল নামের আরেকটি জনপ্রিয় স্প্রেডশিট বৈশিষ্ট্যও এক্সেল নিয়ে আসে।
নিরাপত্তা
এক্সেলের ব্যাপক জনপ্রিয়তার দরুণ, বিভিন্ন সময় এটি হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। যদিও এক্সেল সরাসরি ইন্টারনেটে উন্মুক্ত নয়, তবে আক্রমনকারী ভুক্তভোগীকে যদি কোন ফাইল এক্সেলে খুলতে বাধ্য বা অনুপ্রাণিত করতে পারে এবং যদিও এক্সেলে একইধরণের কোন নিরপত্তা বাগ থাকে, তবে আক্রমনকারী ভুক্তভোগীর কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। [১২]যুক্তরাজ্যের জিসিএইচকিউর টর্নেডো এলি নামে একটি হাতিয়ারই রয়েছে এমন কাজের জন্য। [১৩][১৪]
↑কিজার, গ্রেগ (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Attackers exploit unpatched Excel vulnerability"। কম্পিউটারওয়ার্ল্ড। আইডিজি কম্যুনিকেশন ইনকর্পোরেটেড। ১৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০।
↑"JTRIG Tools and Techniques"। দি ইন্টারসেপ্ট। ফার্স্ট লুক প্রোডাকশন ইনকর্পোরেটেড। ১৪ জুলাই ২০১৪। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০।
↑কুক, জন। "JTRIG Tools and Techniques"। দি ইন্টারসেপ্ট। পৃষ্ঠা ৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ – ডকুমেন্ট ক্লাউড-এর মাধ্যমে।