মহেন্দ্র সিং সোধা একজন ভারতীয় পদার্থবিদ যিনি এমএস সোধা নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি প্লাজমা পদার্থবিদ্যা, আলোকবিজ্ঞান ও শক্তি বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়, দেবী অহল্যা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরকতউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য। [১][২] ১৯৭৪ সালে তিনি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে পুনরায় ভারত সরকার তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছিল। [৩]
জীবনীক্রম
এম. এস. সোধা ১৯৩৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [৪] ১৯৫১ সালে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ১৯৫৩ সালে নয়াদিল্লির তৎকালীন ডিফেন্স সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (বর্তমান কালে এটি লেজার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কেন্দ্র) যোগ দিয়ে কনিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।[১] একই সময়কালে তিনি তার ডক্টরাল পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরাল ডিগ্রি (ডি.ফিল.) অর্জন করেন।[৫] তিনি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ডিফেন্স সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে যুক্ত ছিলেন। তারপর তিনি কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান এবং ১৯৫৮ সাল অবধি সেখানে ডক্টরেটাল ফেলো হিসাবে পড়াশোনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়ে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি শিকাগোর আর্মার গবেষণা ফাউন্ডেশনে জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে এবং পরবর্তীকালে নিউইয়র্কের রিপাবলিক এভিয়েশন কোম্পানিতে পদার্থবিজ্ঞানের প্রধান হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং দিল্লিতে অবস্থিত ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন, যেখানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ডিন, বিভাগীয় প্রধান এবং অবশেষে ১৯৯২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব অবধি একজন উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়কালে তিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দেবী অহল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি তিন বছরের (১৯৯২—১৯৯৫) মেয়াদে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পরে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে বরকতউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ড্রেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শন অধ্যাপক এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের রামন ফেলো এবং পরিদর্শন অধ্যাপক হিসাবেও কাজ করেছেন।
উত্তরাধিকার
সোধা প্লাজমা এবং শক্তি বিষয়ক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শাখাগুলিতে বিস্তৃত গবেষণা করেছেন। [২] ন্ন সমকালীন পর্যালোচনা পত্রিকাতে তার ৫০০টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে[৬][৭][৮][৯]। পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের ডক্টরেট গবেষণায় সাহায্য করেছিলেন।
সোধা, দিল্লির ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে শক্তি অধ্যয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র, অপ্টো-ইলেকট্রনিক্স গ্রুপ এবং প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান গ্রুপের মতো মতো বিভাগগুলো প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন। [১] লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেবী অহল্যা বিশ্ব বিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে তিনি একাডেমিক পড়াশোনার বিকল্প হিসাবে স্ব-অর্থায়ন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং দেবী অহল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানা গেছে। [৫] তিনি ভারতের প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান সমিতি এবং ভারতের আলোকবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
সোধা ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি [১] এবং ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির একজন নির্বাচিত ফেলো। [৪][৫] তিনি ১৯৭৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। [২] চার বছর পরে তিনি হরি ওম প্রেরিৎ শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে তিনি বিশ্ব নবায়নযোগ্য শক্তি নেটওয়ার্ক এবং ইউনেস্কো থেকে বনায়ন শক্তিতে পথিকৃৎ পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী নাগরিক পুরস্কারে তাকে সম্মানিত করে। [৩] তিনি ২০০৪ সালে ডা. কে এস রাও স্মৃতি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। দিল্লিতে অবস্থিত ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান ২০১১ সালের ২১শে মার্চে অনার দ্য মেন্টর প্রোগ্রামে ভূষিত করে। [১০]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ