মধুবনী চিত্রকলা (বা মিথিলা চিত্রকলা) ভারতীয় চিত্রকলার একটি শৈলী যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিথিলা অঞ্চলে চর্চা করা হয়। এই চিত্রকর্মটি আঙুল, পাতলা, ব্রাশ, নিব-কলম এবং দেশলাই কাঠি সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং প্রাকৃতিক রঙ ও রঞ্জক ব্যবহার করে করা হয়। দৃষ্টিনন্দন জ্যামিতিক শৈলীই হল ছবিগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য।[১] জন্ম বা বিবাহ এবং দোলযাত্রা, সূর্যশক্তি, কালীপূজা, উপনয়ন এবং দুর্গাপূজার মতো উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য এটির নির্দিষ্ট ও আলাদা রীতিগত বিষয়বস্তু রয়েছে।
উৎস
ভারতীয় উপমহাদেশের মিথিলা অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মহিলারা ঐতিহ্যগতভাবে মধুবনী চিত্র (মিথিলা চিত্রকলা) তৈরি করে আসছেন। এর উৎপত্তি বিহারের মিথিলা অঞ্চলের মধুবনী জেলা থেকে। মধুবনী এই চিত্রাদির একটি প্রধান রফতানি কেন্দ্র।[২] সমগ্র অঞ্চলজুড়ে প্রাচীর শিল্পের একটি রূপ হিসাবে দেয়াল চিত্ররূপে বহুলভাবে এই চিত্রকলার অনুশীলন করা হত। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক কালে মধুবনীর আশেপাশের গ্রামগুলোতে দেয়ালের পাশাপাশি কাগজ এবং ক্যানভাসে চিত্রকলাটির বিকাশের সূত্রপাত হয়েছে, তাই "মিথিলা চিত্রকলা" এর পাশাপাশি "মধুবনী চিত্রশিল্প" শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[৩]
শৈলী
মধুবনী শিল্পের ভার্ণি, কাচনি, তান্ত্রিক, গোড়না এবং কোহবার নামে পাঁচটি স্বতন্ত্র শৈলী রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে ভারত ও নেপালের 'উচ্চ বর্ণের' বিশেষ করে ব্রাহ্মণ এবং কায়স্থ মহিলারা ভার্ণি, কাচনি এবং তান্ত্রিক শৈলীগুলো অঙ্কন করেছিল। তাদের বিষয়বস্তু ছিল মূলত ধর্মীয় এবং তারা ঈশ্বর ও দেবদেবীর চিত্র চিত্রিত করেছিল। নিম্ন বর্ণের লোকেরা তাদের চিত্রগুলোতে তাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক এবং প্রতীক, রাজা শৈলেশের (গ্রামের রক্ষাকর্তা) গল্প এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তবে বর্তমানে মধুবনী শিল্পটি বিশ্বায়িত শিল্পে পরিণত হয়েছে, তাই বর্ণ ব্যবস্থার ভিত্তিতে কাজের কোনও পার্থক্য নেই। তারা প্রত্যেকেই পাঁচটি শৈলীতে কাজ করে। মধুবনী শিল্পটি বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে।[৪]
চিত্রশিল্পী ও পুরস্কার
বিহার সরকার কর্তৃক সীতা দেবীকে রাজ্যিক পুরস্কার প্রদান করার পরে ১৯৯৯ সালে মধুবনী চিত্রকর্মটি প্রথমবারের মত সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। মধুবনী চিত্রশিল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মিথিলার প্রথম শিল্পী ছিলেন জগদম্বা দেবী। ১৯৭৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি জগদম্বা দেবীকে পদ্মশ্রী পুরস্কার এবং মধুবনীর নিকটবর্তী জিতোয়ারপুর গ্রামের সীতা দেবীকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করেন।[৫] জগদম্বা দেবীর পালক পুত্র সত্য নারায়ণ লাল কর্ণ এবং তার স্ত্রী মতি কর্ণও মিথিলা শিল্পীদের কাছে সমাদৃত এবং ২০০৩ সালে তাঁরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। সীতা দেবী ১৯৮১ সালে পদ্মশ্রী , ১৯৮৪ সালে বিহার রত্ন এবং ২০০৬ সালে শিল্প গুরু পদক এবং পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে গঙ্গা দেবীকে [৬] পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করা হয়। [৭] মহাসুন্দরী দেবী ২০১১ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। বৌয়া দেবী, যমুনা দেবী, শান্তি দেবী, চানো দেবী, বিন্দেশ্বরী দেবী, চন্দ্রকালী দেবী, শশী কলা দেবী, লীলা দেবী, গোদাবরী দত্ত এবং ভারতী দয়ালকেও জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।[৮][৯][১০]
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ