বেলুচিস্তান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল, যা পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এবং আফগানিস্তানের দক্ষিণ প্রান্ত নিয়ে গঠিত। এটি মূলত একটি পর্বতময় অঞ্চল। এর ভেতর দিয়ে অনেক মরুভূমি ও অনাবাদী সমভূমি চলে গেছে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, উদ্ভিজ্জের আকৃতি ক্ষুদ্র এবং বিরল। এখানকার অধিবাসীরা মূলত তিনটি জাতির লোক: পশতুন, বেলুচি (যাদের নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে) এবং ব্রাহুই। বেশির ভাগ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
অঞ্চলটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে পারস্য সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি মহাবীর আলেকজান্ডারের নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে পারস্য ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন রাজবংশ অঞ্চলটি শাসন করে। ৭ম ও ৮ম শতকে আরবেরা এলাকাটি দখলে নেয়। ১০ম শতকে পারসিকরা আবার বেলুচিস্তানকে তাদের সাম্রাজ্যের অংশ করে নেয় এবং তখন ১৭৪৭ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময় ধরে এটি পারস্যের অধীনে ছিল, যদিও ১৭শ শতকের শুরুর দিকে চার দশক এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। এরপর এটিকে স্বল্পকালের জন্য আফগানিস্তানের অংশ করা হয়। অঞ্চলটিতে ব্রিটিশ আধিপত্য বৃদ্ধি পায় এবং ১৯শ শতকের শেষের দিকে এটিকে ব্রিটিশ ভারতের বেলুচিস্তান প্রদেশ বানানো হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশেরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যাবার সময় বেলুচিস্তান প্রদেশের জনগণ পাকিস্তানের অংশ হবার পক্ষে ভোট দেয়। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানীর নাম কোয়েটা। বর্তমানে ইরানে বেলুচিস্তানের যে অংশবিশেষ রয়েছে সেটি দেশটি ১৯শ শতকে খণ্ডখণ্ডভাবে দখল করেছিল।
ইতিহাস
বর্তমানে বেলুচিস্তানে মানুষের পেশার প্রাচীনতম প্রমাণ পুরা প্রস্তর যুগ। প্রমাণের মধ্যে রয়েছে শিকার শিবির, লিথিক স্ক্যাটার এবং চিপড এবং ফ্লেক করা পাথরের টুল। এই অঞ্চলে প্রাচীনতম বসতি স্থাপন করা গ্রামগুলি সিরামিক নিওলিথিক (c. 7000–6000 BCE) এবং কাছি জেলা সমভূমিতে মেহেরগড় স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তী চ্যালকোলিথিকের সময় যখন মিথস্ক্রিয়া প্রসারিত হয়েছিল তখন এই গ্রামগুলি আকারে প্রসারিত হয়েছিল। এতে চ্যাঙ্ক শেল, ল্যাপিস লাজুলি, ফিরোজা এবং সিরামিক সহ তৈরি পণ্য এবং কাঁচামালের চলাচল জড়িত ছিল। ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে (ব্রোঞ্জ যুগ), বর্তমানে বেলুচিস্তান (পাকিস্তান) নামে পরিচিত অঞ্চলটি সিন্ধু সভ্যতার সাংস্কৃতিক কক্ষপথের অংশ হয়ে উঠেছিল, পূর্বে সিন্ধু নদীর অববাহিকায় বিস্তৃত জনবসতিকে মূল সম্পদ সরবরাহ করে।