অর্থসংস্থান বা আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিময় হার (ইংরেজি: Exchange rate) বলতে একটি মুদ্রা অন্য মুদ্রায় যে হারে বিনিময় করা হয় সেই হারকে বুঝায়। মুদ্রা বলতে সাধারণত জাতীয় মুদ্রা বোঝানো হয়, তবে ক্ষেত্র বিশেষ উপ-জাতীয় মুদ্রা, যেমন: হংকং-এর মুদ্রা এবং সুপার-জাতীয় মুদ্রা, যেমন: ইউরোকেও বোঝানো হয়।
বিনিময় হারকে এক দেশের মুদ্রার বিপরীতে অন্য দেশের মুদ্রার মান হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। [১] উদাহরণস্বরূপ, আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে $১ মার্কিন ডলার সমান ¥১১৪ জাপানি ইয়েন, অর্থাৎ, ¥১১৪ ইয়েনের বিপরীতে $১ ডলার বিনিময় করা হবে। এ ক্ষেত্রে বলা হয় যে, $১ ডলারের মূল্য ¥১১৪ ইয়েন বা ¥১ ইয়েনের মূল্য $১/১১৪ ডলার।
প্রতিটি দেশই তাদের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ, দেশের বিনিময় হার কোন পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে, স্থির বিনিময় হার থাকবে নাকি পরিবর্তনশীল বা চলমান বিনিময় হার হবে, সেটা ঠিক করে দিবে। দেশের সরকার বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য কিছু সীমা বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এটা নির্ভর করে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর। অন্যদিকে, বিনিময় হার সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অর্থাৎ বাজার উপাদানের উপর ভিত্তি করেও নির্ধারিত হতে পারে।[২]
পরিবর্তনশীল বা চলমান বিনিময় হার ব্যবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিনিময় হার নির্ধারিত হয় যেখানে মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা সর্বদা চলমান থাকে। [৩]
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও অন্যান্য পেমেন্টের জন্য মুদ্রা প্রধানত ব্যাংক থেকে কেনা হয় যেটি খুচরা বিনিময় বাজার হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে ব্যাংক খুচরা গ্রাহকদের কাছ থেকে কমিশন বা অন্যান্য সেবা বাবদ একটা নির্দিষ্ট চার্জ নেয়। সাধারণত, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে মুদ্রা বিনিময়ে বেশি খরচ হয়। [৪]
বিনিময় হার ব্যবস্থা
একটি দেশ তার মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থা ইচ্ছা অনুযায়ী পছন্দ করতে পারে। বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রধানত তিন ধরনের হয়:
১।মুক্ত-চলমান হার, .
২।পেগড (স্থির) হার এবং
৩।হাইব্রিড বা সংকর হার।
মুক্ত-চলমান ব্যবস্থায় আর্থিক বাজারে মুদ্রার চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। এই ধরনের মুদ্রার বিনিময় হার ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে পারে। পেগড (স্থির) ব্যবস্থায় মুদ্রার বিনিময় হার সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে, তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর বা প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মুদ্রামান পুনঃমূল্যায়ন করে বিনিময় হার নির্ধারণ করার হয় বা করা যায়। হাইব্রিড বা সংকর হার বলতে এই দুই ব্যবস্থার সংমিশ্রণকে বুঝায়। এই ব্যবস্থায় মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণে কিছু ক্ষেত্রে মুক্ত-চলমান ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় আবার কিছু ক্ষেত্রে পেগড (স্থির) ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। সাধারণত বিশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের সরকার সাময়িক সময়ের জন্য এই ব্যবস্থায় মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে।
বিনিময় হারের শ্রেণিবিভাগ
ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিময় হার নিন্মক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
ক্রয় হার: যে হারে বা মূল্যে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে সেটিই ক্রয় হার হিসেবে পরিচিত। মাঝেমাঝে এটিকে ক্রয়মূল্য নামেও ডাকা হয়।
বিক্রয় হার: যে হারে বা মূল্যে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের নিকট বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রয় করে সেটিই বিক্রয় হার হিসেবে পরিচিত। কখনো কখনো এটিকে বিক্রয়মূল্য নামেও ডাকা হয়।
মধ্যম হার: ক্রয়মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের গড়কে মধ্যম হার বলা হয়। সাধারণত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে এই হার ব্যবহৃত হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সময়সীমা অনুযায়ী বিনিময় হার নিন্মক্ত প্রকার:
স্পট বিনিময় হার: স্পট বিনিময় হার বলতে সেই হারকে বুঝায় যে হারে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই বা সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যে মুদ্রা সরবারহ করা হয়। সাধারণত, এই হারেই বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে মুদ্রা বিনিময় হয়।
অগ্রবর্তী বিনিময় হার: ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় পরে মুদ্রা সরবারহের চুক্তিতে যে হারে মুদ্রা বিনিময় হয় তাকে ফরওয়ার্ড বা অগ্রবর্তী বিনিময় হার বলা হয়। সাধারণত, স্পট রেটের সাথে নির্দিষ্ট বাট্টা বা প্রিমিয়াম যোগ করে এই হার নির্ধারিত হয়।
অন্যান্য শ্রেণিবিভাগ
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে পেমেন্ট পদ্ধতি অনুযায়ী বিনিময় হারকে নিন্মক্ত ভাগেও ভাগ করা হয়:
টেলিগ্রাফিক বিনিময় হার
মেইল স্থানান্তর হার
ডিমান্ড ড্রাফট হার
বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে বিনিময় হার নিন্মক্তভাবে অভিহিত হয়:
দাপ্তরিক হার: একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত বিনিময় হারকে দাপ্তরিক হার বলা হয়। সাধারণত, কঠোর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের দেশগুলিতে এই হার ব্যবহৃত হয়।
বাজার হার: মুক্ত বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য প্রকৃত বিনিময় হারকে বাজার বিনিময় হার বলা। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা এবং সরবরাহ অবস্থার পরিবর্তনের সাথে বাজার বিনিময় হার ওঠানামা করে।