বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ভারতেরপশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত একটি অনুমোদনকারী ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। [১] এটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত। ১৯৮১ সালের [২]২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮১ (পশ্চিমবঙ্গ আইন ১৯৮১-এর আঠারো) বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন১৯৯০ সালের ১ মার্চ ধারা ১২ খ অনুযায়ী এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দান করেন। মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে আধা-গ্রামীণ পরিমণ্ডলে ১৮২.৭৫ একর জমির উপর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত – তার মধ্যে মূল ক্যাম্পাস এলাকা ১০৩.৭৯ একর, আবাসন এলাকা ৩৫ একর ও তৃতীয় প্লট ৪৩.৭৯ একর।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার বিভাগগুলি হল ফিজিওলজি ও গণস্বাস্থ্য, ডায়েটেটিকস ও গণপুষ্টি ম্যানেজমেন্ট, পদার্থবিদ্যা ও কারিগরি পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা ও অরণ্যবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও মৎস্যবিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি, গ্রামীণ উন্নয়ণসহ অর্থনীতি, নৃতত্ত্ববিদ্যা, বায়োমেডিক্যাল ল্যাবোরেটরি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রসায়ন; কলা ও বাণিজ্য শাখার বিভাগগুলি হল বাংলা, ইংরেজি, পরিবেশ ম্যানেজমেন্ট সহ ভূগোল, ইতিহাস, গ্রামীণ প্রশাসন সহ রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও জীবন-বিশ্ব, ফার্ম ম্যানেজমেন্ট সহ বাণিজ্য, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান, সংস্কৃত ও সমাজতত্ত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীত অন্যান্য বিষয়গুলি হল ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (এমসিএ ডিগ্রি), অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড ম্যানেকজমেন্ট টেকনোলজি, রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস, মাস্টার অফ সোশাল ওয়ার্ক এবং মাস্টার অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)।
প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার চাহিদার কথা স্মরণে রেখেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা। মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এখানে জাতিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক শিক্ষারও ব্যবস্থা আছে। এই সর্বত্রব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য শিক্ষা, জ্ঞান, প্রগতি।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত অনুমোদনক্ষেত্র। এই অনুমোদনক্ষেত্রের মধ্যে উক্ত জেলার ভূখণ্ড থেকে সৃষ্ট জেলাও অন্তর্ভুক্ত। প্রাথমিকভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩০টি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত হয়। বর্তমানে এই সংখ্যাটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯। হলদিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (কোলাঘাট) এবং এমসিকেভি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (লিলুয়া) – এই তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও বর্তমানে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। কলকাতার জয়প্রকাশ ইনস্টিটিউট অফ সোশাল চেঞ্জ-এর বিদ্যাসাগর স্কুল অফ সোশাল ওয়ার্কের মাস্টার্স অফ সোশাল ওয়ার্ক পাঠক্রমটিও এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। সাম্প্রতিককালে একাধিক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট দরখাস্ত পেশ করেছেন। মেদিনীপুর শহরে একটি মেডিক্যাল কলেজ চালু করার ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও স্নাতক কলেজে স্নাতকোত্তর পাঠক্রম চালুর কথাও চিন্তাভাবনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্নাতকোত্তর বিভাগটিতে এমন কিছু অপ্রচলিত বিষয়ে পঠনপাঠনের সুবিধা আছে যেগুলিতে এখনও নিবিড় গবেষণার অনেক অবকাশ রয়েছে। একবছরের ব্রিজ কোর্সের মাধ্যমে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের বটানি, বনবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, অ্যাকুয়াকালচার ম্যানেজমেন্ট ও প্রযুক্তি এবং কারিগরি প্রযুক্তিবিদ্যার মতো বিষয়ে দূরশিক্ষার ব্যবস্থা আছে।