বারকোড হল তথ্য সংগ্রহের একটি ভিজুয়াল পদ্ধতি। যা মেশিনযোগে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এটি সাধারণত এর ধারণকারী জিনিস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। গতানুগতিক বারকোড হল কিছু অঙ্কিত সমান্তরাল লাইন-যার প্রস্থ এবং মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার তারতম্য ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের প্রতিনিধিত্ব করে; এটি রৈখিক বা একমাত্রিক ব্যবস্থা। পরবর্তীতে আয়তক্ষেত্র, বিন্দু, ষড়ভুজসহ অন্যান্য জ্যামিতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বারকোড ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়।যাকে ম্যাট্রিক্স কোড বা দ্বিমাত্রিক বারকোড বলা হয়। যদিও তাতে প্রকৃতপক্ষে বার বা সরলরেখা ব্যবহৃত হয় না। প্রাথমিকভাবে বারকোড স্ক্যানার নামে বিশেষ অপটিকাল স্ক্যানার দিয়ে বারকোড স্ক্যান করা হত। পরবর্তীতে এমন কিছু সফটওয়ার তৈরি হয়েছে যা ক্যামেরা সংবলিত স্মার্টফোনের ধারণকৃত ছবি পড়তে পারে।
নরম্যান জোসেফ ও বারনার্ড সিলভার বারকোড আবিষ্কার করেন। এটি ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট করা হয় (US2612994A)। এই আবিষ্কার হয়েছিল মোর্স কোডের উপর ভিত্তি করে,[১] যা ছিল পাতলা এবং পুরু দাগের রূপায়ন। যদিও এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে বিশ বছর সময় লেগেছিল। শিল্প ক্ষেত্রে বারকোডের প্রাথমিক ব্যবহারে ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে আমেরিকান রেলপথ অ্যাসোসিয়েশন প্রণোদনা দেয়। জেনারেল টেলিফোন ও ইলেক্ট্রনিক্স এবং কারট্রাক এসিআই দ্বারা তৈরিকৃত এই প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথের রোলিং স্টকে স্টিলের উপর বিভিন্ন রঙবিশিষ্ট ডোরা দেয়া হয়েছিল। একটি গাড়ির উভয়দিকে একটি করে প্লেট ব্যবহার করা হয়েছিল। যাতে ছিল মালিকানা, যানের ধরন, শনাক্তকরণ চিহ্নের তথ্য।[২] একটি ট্রাকসাইড স্ক্যানার দ্বারা সেই প্লেটগুলো শনাক্ত করা হত। উদাহরণস্বরূপ, গাড়িটি যখন চলন্ত অবস্থায় ইয়ার্ডে প্রবেশ করত।[৩] প্রকল্পটি দশ বছর পরে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। কারণ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের কারণে ব্যবস্থাটি আস্থাজনক ছিল না।[২]
বারকোড বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ঐ সময় যখন এটি বিভিন্ন সুপার মার্কেটে স্বয়ংক্রিয় চেকআউট-এর জন্য ব্যবহার শুরু হয় এবং অন্যান্য কাজে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। যাকে স্বয়ংক্রিয় তথ্য শনাক্তকরণ এবং সংগ্রহকরণ ও বলা যায়। বর্তমানে সর্বত্র ব্যবহৃত সার্বজনীন পণ্য নম্বরের প্রথম শনাক্তকরণ ছিল ১৯৭৪ সালে রাইগলি কোম্পানির চুইংগামের প্যাকেটে।[৪]কিউআর কোড নামে একধরনের দ্বিমাত্রিক বারকোড বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।[৫]
স্বয়ংক্রিয় তথ্য শনাক্তককরণ এবং সংগ্রহকরণ ব্যবস্থায় যদিও বারকোডসহ আরো অনেক পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। কিন্তু বারকোড ব্যবস্থা সহজ, সার্বজনীন এবং স্বল্পমূল্যবান হওয়ার কারণে অন্যান্য ব্যবস্থা গৌণই থেকে গেছে। বিশেষ করে ১৯৯৫ সালের আগে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন এর মত প্রযুক্তি সুলভ হওয়ার কারণে।
ইতিহাস
১৯৪৮ সালে ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র বারনার্ড সিলভার স্থানীয় খাদ্য শৃঙ্খলের প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করার পর স্বয়ংক্রিয় পণ্য শনাক্তকরণের উপর গবেষণা করার জন্য অনুমতি নেন।[৬] সিলভার তার বন্ধু নরম্যান জোসেফকে এ সম্পর্কে জানান এবং এর বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারা প্রথমে অতিবেগুনী রঙের কালি ব্যবহার করেন কিন্তু এটি সহজে হালকা হয়ে যাচ্ছিল এবং এর দাম ছিল চড়া।[৭][৮]
ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে উডল্যান্ড ফ্লোরিডাতে তার বাবার অ্যাপার্টমেন্টে চলে গিয়েছিলেন কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তার পদ্বতির আরও উন্নয়ন সম্ভব। তিনি তার কাজ চালিয়ে যান। তিনি পরবর্তী অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মোর্স কোড থেকে। সমুদ্র সৈকতের বালিতে তিনি তার প্রথম বারকোড তৈরি করেন। “আমি কেবল ডট এবং ড্যাশকে নিচের দিকে বড় করেছি। এবং তাদের জন্য চিকন এবং মোটা লাইন তৈরি করেছি।”[৭] কোড পড়ার জন্য তিনি সিনেমার অপটিক্যাল সাউন্ডট্রাক প্রযুক্তি গ্রহণ করেন। এক সাইড থেকে কাগজের মধ্য দিয়ে ৫০০ ওয়াট ক্ষমতার একটি লাইট বাল্বের আলোর মাধ্যমে একটি RCA935 ফটোমাল্টিপ্লায়ার আলোকিত করে। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে যদি এটি লাইনের বদলে বৃত্ত হিসেবে মুদ্রণ করা যায় তবে তা ভালো কাজ করবে যেকোন দিক থেকে স্ক্যান করার জন্য।
১৯৪৯ সালের ২০ শে অক্টোবর উডল্যান্ড এবং সিলভার “Classifying Apparatus and Method” এর জন্য একটি পেটেন্ট আবেদন করেন, যাতে যাতে রৈখিক এবং বুল’স আই এর নকশা মুদ্রণে বর্ণিত ছিল। পাশাপাশি তা পড়ার জন্য যান্ত্রিক এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর পেটেন্টটি ইস্যু করা হয়। ১৯৫১ সালে উডল্যান্ড আইবিএমে এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের ব্যবস্থাটি উন্নয়ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। আইবিএম অবশেষে এই ধারণার উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে এটির বাস্তবায়ন সম্ভব, কিন্তু এর প্রক্রিয়াকরণের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি দরকার যা ভবিষ্যতে হবে।
আইবিএম এর পেটেন্ট কেনান প্রস্তাব দিলেও তা গৃহীত হয় নি। ফিলকো ১৯৬২ সালে পেটেন্টটি ক্রয় করেন এবং কিছুদিন পর তা আরসিএ এর কাছে বিক্রি করে দেন। [৭]
তথ্যসূত্র
↑"How Barcodes Work"। Stuff You Should Know (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-০৪। ২০১৯-০৬-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৫।
↑Keyes, John (২২ আগস্ট ২০০৩)। "KarTrak"। John Keyes Boston photoblogger. Images from Boston, New England, and beyond.। John Keyes। ১০ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৩।
↑Fishman, Charles (১ আগস্ট ২০০১)। "The Killer App – Bar None"। American Way। ১২ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১৯।
↑ কখগSeideman, Tony, "Barcodes Sweep the World", Wonders of Modern Technology, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৯উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Seideman, Tony (Spring ১৯৯৩)। "Barcodes Sweep the World"। AccuGraphiX / History of Bar Codes। ১৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৬। Article published in Wonders of Modern Technology, Spring 1993.
Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!