এই নিবন্ধটির বর্ণনা ভঙ্গি উইকিপিডিয়ার বিশ্বকোষীয় বর্ণনা ভঙ্গি প্রতিফলিত করেনি। এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। নির্দেশনা পেতে সঠিক নিবন্ধ লেখার নির্দেশনা দেখুন। (এপ্রিল ২০২৩)
এই নিবন্ধটির নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। অনুগ্রহ করে বিতর্ক নিরসন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলবেন না।(এপ্রিল ২০২৩)
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন তল্লাশি মূলত ভিন্ন মতের লোকেদের দমন পীড়নের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় যা রাজনৈতিক কারণে উদ্ভূত হয়েছিল।[১][২][৩] ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।[৪] যে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ কর্তৃক পথচারীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি ও মোবাইল ঘেঁটে বিএনপি সংশ্লিষ্ট ছবি বা তথ্য পেলে তাকে মারধর বা পুলিশে দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে।[৫] ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মী সন্দেহে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক মানুষজনকে মারধরের ঘটনা একই সঙ্গে একটি অপরাধমূলক ও আইন ভঙ্গকারী কর্মকাণ্ড, যা স্পষ্টত বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন।[৬]
শুধু পুলিশ বা ছাত্রলীগ নয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় এ ধরনের হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগে আইন ও সালিশ কেন্দ্র তীব্র নিন্দা জানায়।[৭][৮]
ঘটনাবলী
২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে থেকেই পুলিশ পাহারা এবং তল্লাশি শুরু করে। গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকা প্রবেশের এটিই একমাত্র রাস্তা হওয়ায় পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রমটি শুরু হয় ঠিক টঙ্গী সেতুর মাথায়।[৯] তবে ঢাকায় আসা অনেকে অভিযোগ করেন যে, পুলিশের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও তাদের তল্লাশি করেছে। এসময় তাদের মোবাইল ফোন খুলে ফটোগ্যালারি তল্লাশি করা হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ জানায়।[৫][১০]নীলক্ষেতে মারধরের শিকার ফারুক হোসেন জমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি বলেন, তিনি ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে যাচ্ছিলেন বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে। নীলক্ষেতের মোড়ে চড়াও হয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের ফোন কেড়ে নেয় তারা। এরপর তাদের কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।[১১][১২] ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও দিনভর অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় যুবলীগের এমন একটি অবস্থান থেকে এক সাংবাদিকসহ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়।[১৩]
চেকপোস্টে থাকা পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ, বস্তা, মোবাইল ফোন চেক করলে যাত্রী ও চালকরা অনেকেই অস্বস্তি প্রকাশ করেন।[১৪]নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জেও এমন চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে রাজধানীতে ঢোকার বাসগুলোর যাত্রীদের দেহ তল্লাশি ছাড়াও তাদের মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করে দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।[১৫] আবুল আরীম নামের এক গাড়ি চালক বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর চন্দ্রায় পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়েছে। তারা আমাদের যাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঢাকায় ১০ তারিখের বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে ধারণা। যাত্রীদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। যে যার মতো জরুরি কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশ তাদের গাড়ি থামিয়ে দেহ তল্লাশিসহ মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ, ছবি ঘাটাঘাটি করে দেখছে। তবে তল্লাশির তালিকায় বেশি রয়েছে মোটর সাইকেল।[১৬] যদিও পুলিশ কর্তৃক সাধারণ পথচারীদের এভাবে মোবাইল ফোন তল্লাশির চিত্র সাংবাদিকদেরক্যামেরায় ধরা পড়ে।[১৭][১৮]
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অবস্থান নিয়ে বিএনপি সমর্থক সন্দেহে ১০-১২ জনকে নীলক্ষেতের তোরণের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করে এবং মুঠোফোন ঘাঁটার পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ প্রসঙ্গে নীলক্ষেতে অবস্থান নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জানান, ‘দুই দফায় ১০-১২ জনকে আমরা পুলিশে দিয়েছি। তাঁদের মুঠোফোন চেক করে বিএনপি সমর্থক বলে নিশ্চিত হয়েই শাহবাগ থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আবারো জানান, ‘বিএনপি ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এসব সন্ত্রাসীকে রুখতে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা বিএনপি-জামায়াতের অশুভ রাজনীতির কবর রচনা করবই।’[১৯]
এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রাষ্ট্রীয় গুম-খুন-নীপিড়নের বিরুদ্ধে বের হওয়া মশাল মিছিলে ২ দফা বাধা এবং এক আন্দোলকারীর মোবাইল ফোন তল্লাশির অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সীমান্ত বর্ধন নামের একজন জানান, 'শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। কিন্তু আমি তো ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। তারা আমার মোবাইল তল্লাশি করে, যা অনৈতিক। এটা আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় আঘাত।'[২০]
তিনি আরো বলেন, ‘তারা যৌক্তিক আন্দোলনকে বানচাল করতে ছাত্রদল-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনে। সনাতন ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও আমার মোবাইল তল্লাশি করে। যা পুরোপুরি অনৈতিক। প্রগতিশীল দলের একজন কর্মী হয়েও যদি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা না পাই, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থা কি হবে?’[২][২১]
এর আগে ২০২২ সালের জুনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন তল্লাশি এবং ছাত্রদলের একজন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।[২২]
গোপনীয়তা নীতি লঙ্ঘন
আইনজীবীরা জানান, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোবাইল ফোন দেখতে চাইলে যেকোনো নাগরিক তাতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। কারণ হিসেবে বলা হয় আইন অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ ছাড়া তারা সেটা করতে পারেন না। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, মোবাইল ফোন পুরোপুরি একজনের ব্যক্তিগত একটি যন্ত্র। আদালতের আদেশ ছাড়া কোনভাবেই সেটা সার্চ করার এখতিয়ার কারও নেই। কারণ এই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার তাকে বাংলাদেশের সংবিধানে দেয়া হয়েছে।।[২৩]
যুক্তরাষ্ট্রেরক্যালিফোর্নিয়ায় ২০১৫-এ সান বার্নার্দিনোয় হামলাকারীর ব্যবহৃত আইফোনের লক খোলার জন্য এফবিআই অনুরোধ করলেওে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে জানিয়ে অ্যাপল তা প্রত্যাখ্যান করে।[২৪][২৫] ফলে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।[২৬][২৭][২৮][২৯] সেই বরাত দিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘’মোবাইল হচ্ছে খুব পার্সোনাল একটি গ্যাজেট, যেটা মালিকের পারমিশন ছাড়া ধরার কারও আইনগত এখতিয়ার নেই। যদি কোন মামলার অংশ হিসাবে মোবাইল ফোন আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তখন আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তকারী ব্যক্তিরা সেটা দেখতে পারবে। এছাড়া আর কোন সুযোগ নেই।‘’ এছাড়াও তিনি জানান, ‘’আমাদের সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, সেটার গুরুতর লঙ্ঘন। একপ্রকার ফৌজদারি অপরাধের মধ্যেও পড়ে।’’[৫] বড়ুয়া আরও বলেন, যেহেতু এটা একপ্রকার হয়রানি, সেজন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। অথবা তিনি ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে আসলে এরকম প্র্যাকটিস নেই।[৩০]
মানুষের মুঠোফোন হস্তান্তর এবং তাঁদের ব্যক্তিগত বার্তা ও ছবি দেখাতে বাধ্য করার মাধ্যমে গণহারে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাই লঙ্ঘন করা হয়নি, পাশাপাশি এগুলো সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মোবাইল যোগাযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনারও পরিপন্থী।[৩১]নরওয়ের মতো দেশে গাঁজা সেবনের অপরাধে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদেরও পুলিশকে মোবাইল ফোন তল্লাশি করার অধিকার দেয়নি সেদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল।[৩২][৩৩]
মুঠোফোন দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে এর বাহক আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধমত পোষণ করেন না জানিয়ে পুলিশ তল্লাশিতে হয়রানির শিকার এক যাত্রী জানান, ‘আমাদের কোনো ব্যক্তিস্বাধীনতা নাই। সাধারণ মোবাইল ফোনটা পর্যন্ত পুলিশের হাত থেকে নিরাপদ না। গাইবান্ধা থেকে আসতে পথে আরও দুইবার তল্লাশি হইছে। প্রতিবারই তাদের (পুলিশ) মোবাইল দেখাইতে হইছে। এটা পুলিশের কেমন আচরণ?’ তিনি আরো বলেন, ‘মুঠোফোন মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত জিনিস। রাজনীতির বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, ছবি বা গোপনীয় জিনিস থাকতে পারে। কিন্তু তল্লাশির নামে পুলিশের মোবাইল দেখাটা খুবই বিব্রতকর এবং একই সঙ্গে অপমানজনক।’[৩৫] তবে মুঠোফোনের এ রকম অবৈধ তল্লাশি এবং পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুধু পুলিশ বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছাত্রলীগের সদস্যরাও তা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পুলিশ সরাসরি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন যেমন বন্ধ করেইনি, তেমনি ছাত্রলীগের কর্মীরা কয়েকজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশ ছাত্রলীগের কর্মীদের এখতিয়ার নিয়েও কোন প্রশ্ন তোলেনি।[৩১]
মোবাইল ফোন তল্লাশির এমন কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশিষ্টজনেরা বিবৃতি দেন যে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমত দমন করার জন্য পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর খবরদারি, নাগরিকদের মুঠোফোন ও দেহ তল্লাশিসহ যে ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে, তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।[৩৬]
সরকারের নির্দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক জানান, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষের মুঠোফোন তল্লাশি করে দেখছে বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগ করে। এটা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।[৩৭]
সংবিধান লঙ্ঘন
দীর্ঘদন ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিশেষ করে সরকারবিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করা; গ্রেপ্তার করা; সন্দেহভাজন কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা এমনকি বিরোধী মতের লোকজনের ওপর লাঠিপেটা করা; পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলার আসামি করার অভিযোগ থাকলেও সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার চেক করার মতো সংবিধান বিরোধী ঘটনা ২০২২-এর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের ঠিক দুদিন আগেই সংগঠিত হওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।[৩৮] রাজনৈতিক কারণে হয়রানির শিকার অনেক সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেন, পুলিশি তল্লাশির সময় তাদের মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তাও চেক করে দেখা হয়।[৩৯] যদিও ‘গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ’ শিরোনামে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’[৪০][৪১]
২০২২-এর ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে মানুষজনের মুঠোফোনে থাকা ছবি ও বার্তা যাচাই করে, গণমাধ্যমে এমন অনেক সংবাদ ওঠে আসে। মুঠোফোনে যেমন মানুষের ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, তথ্য ও ছবি থাকে, তেমনি এটা বর্তমান সময়ে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। রাস্তায় তল্লাশির সময় পুলিশ বা অন্য কেউ মুঠোফোন পরীক্ষা করলে, সেটা ব্যক্তির গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ন করে। যা সাংবিধানিক অধিকারের একটি গুরুতর লঙ্ঘন।[৬]
প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের মোবাইল ফোন নিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ঘাঁটাঘাঁটির নিন্দা জানিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বিবৃতিতে জানায়, এভাবে মোবাইল ফোন ঘাঁটাঘাটি করা একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারের চরম লঙ্ঘন। ব্যক্তির গোপনীয়তার সঙ্গে তার মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত।[১১]
জানা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একই সঙ্গে মোবাইলের ফটো গ্যালারি এবং ডাটা চালু করে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার চেক করে, ফেসবুকে যদি কোনো ধরনের বিএনপি রিলেটেড পেইজেলাইক পাওয়া যায় তখন ছাত্রলীগের জেরার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে পথচারীদের অনেকেই প্রশ্ন করেন, মোড়ে মোড়ে সাধারণ নাগরিকদের পথরোধ করে যানবাহন থেকে থামিয়ে ছাত্রলীগের তল্লাশি করার আইনি ভিত্তি আছে? তারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে। যা অবৈধ।[৪২]
শাহিন নামের এক যুবক আজিমপুর যাওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেট এলাকায় ছাত্রলীগের কয়েকজন লোক তাকে থামিয়ে ফোন আনলক করার অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমাকে এবং আরও কয়েকজনকে রাস্তায় হয়রানি করা হয়েছে। তারা আমাদের মোবাইল ফোন দেখতে চায়, যা অযৌক্তিক। এমনকি ফোন দেখাতে না চাওয়ায় কয়েকজনকে তারা চড়-থাপ্পড়ও মারে। আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে দিলেও গালিগালাজ করেছে তারা।[৪৩]
রাজবাড়ী থেকে আসা একজন বলেন, ‘’গাবতলীতে পুলিশ থামিয়ে জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবো, কেন ঢাকায় এসেছি। বললাম আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবো। তখন বলে মোবাইল বের করে ছবিগুলো দেখাও। সেখানে কিছু না পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে।‘’ তিনি আরও জানান, পুলিশ মোবাইল চেক করছে জানতে পেরে ঢাকায় আসার আগেই গ্যালারি থেকে দলের ছবি বা ভিডিও ডিলিট করে দেন।[৫]
গাজীপুর থেকে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় ফিরার পথে মনসুর আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমি কোন সমাবেশে যাচ্ছিলাম না। ব্যবসার কাজে প্রায়ই গাজীপুরে আসতে হয়। কিন্তু শুক্রবার পথে তিন জায়গায় পুলিশ থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। দুই জায়গায় মোবাইল ফোন বের করে ছবি, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেজ ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেছে। এর আগে এমন কখনো হয়নি।[২৩]
ছাত্রলীগের কর্মীদের অভিযুক্ত ইঙ্গিত করে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন একজন ভুক্তভোগীর একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করে অভিযোগ করেন, নীলক্ষেত এলাকা থেকে আসার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু ছেলে একজনের মোবাইল, ব্যাগ মানিব্যাগ চেক করে কিছু না পেয়ে জোর করে বিকাশের পিন নিয়ে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।[৩০]
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা সাংগঠনিক নির্দেশনা ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার চেষ্টা প্রতিহত করতে শুধু রাজনৈতিক অবস্থান, মিছিল, মিটিং ও রাজু ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্য কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ন্যূনতম কোনও সম্পর্ক নেই।[৪৪]
↑Sanger, David E.; Chen, Brian X. (সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪)। "Signaling Post-Snowden Era, New iPhone Locks Out N.S.A."। The New York Times। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Zakrzewski, Cat (অক্টোবর ১২, ২০১৫)। "Encrypted Smartphones Challenge Investigators"। The Wall Street Journal। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)