বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না বাংলা ভাষায় রচিত একটি চলচ্চিত্র সঙ্গীত। এটি ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র 'কসাই'-এর জনপ্রিয় গান। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা, আলাউদ্দিন আলীর সুর ও সঙ্গীতায়োজনে এই গানে কন্ঠ দেন কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী রুনা লায়লা।[১] চলচ্চিত্রে এই গানের চিত্রায়নে ঠোঁট মিলিয়েছেন প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী রোজিনা ও আলমগীর।[২] গানটি রুনা লায়লার সঙ্গীত জীবনে গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান। এই গানসহ 'কসাই' চলচ্চিত্রের সকল গানের সুরকার হিসেবে আলাউদ্দীন আলী ১৯৮০ সালে শ্রেষ্ঠ 'সঙ্গীত পরিচালক' শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৩]
নির্মাণ নেপথ্য
সেসময় আমরা অনেকেই প্রায় প্রতিদিন গাজী মাজহারের বাড়িতে বসতাম। তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে বসতেন। যারা যারা গান লিখতেন সবাই একসঙ্গে বসতাম। নতুন লেখা গান নিয়ে কথা বলতাম। কথার ছলে হারমোনিয়াম বাজাতাম। গানের নতুন কথা বেরিয়ে আসলে ওখানেই সুর করে ফেলতাম।
এমনই এক বৈঠকে একদিন ‘বন্ধু তিন দিন’ গানটা বেরিয়ে আসে গাজী মাজহারের লেখনীতে। আর আমিও হারমোনিয়াম বাজিয়ে সুরটা তুলে ফেলি।
-চ্যানেল আই অনলাইনকে আলাউদ্দিন আলী[১]
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ব্যক্তিগত বাসভবনে সঙ্গীতাঙ্গনের কলাকুশলীরা নিয়মিত সঙ্গীত বিষয়ক আড্ডা দিতেন। এসব আড্ডায় নতুন গান নিয়ে আলোচনা, তাৎক্ষনিক গীতি লিখন ও সুর সংযোজনের মত সৃজনক্ষম কাজ নিয়মিত ঘটতো। সুরকার আলাউদ্দিন আলীর উপস্থিতিতে এমনই এক আড্ডায় গাজী মাজহারুল আনোয়ার 'বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম' গানটির গীতি লিখেন। গীতি লিখার পাশাপাশী সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাৎক্ষনিক এই গানের সুর করেন।[১]
কন্ঠে ধারণ
চলচ্চিত্রে ব্যবহারের পূর্বে প্রাথমিকভাবে গানটি সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে ধারণ করা হয়। আলাউদ্দিন আলী ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার গানটি কসাই চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই সময় নতুন করে রুনা লায়লার কন্ঠে ধারণ ও চলচ্চিত্রে সংযোজন করা হয়।[১]
জনপ্রিয়তা ও পুনঃউৎপাদন
কসাই চলচ্চিত্র মুক্তির পরপরই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।[১] ১৯৮০ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবং ১৯৮১ সালে জার্মানিতে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে 'কসাই' চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়[৪] ফলে গানটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রচারণা পায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] রুনা লায়লা অনেক সঙ্গীতানুষ্ঠানে গানটি পরিবেশন করেন। ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন তাদের বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কের 'এশিয়ান ম্যাগাজিন' অনুষ্ঠানে গানটি রুনা লায়লার কন্ঠে প্রচার করে।[৫] জনপ্রিয়তার কারণে গানটি পশ্চিমবঙ্গেও অনেক শিল্পী গেয়েছেন।[১] গানটি বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে নিয়মিত উপস্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিক কালে সুরকার আলাউদ্দিন আলী'র কন্যা আলিফ আলাউদ্দিন গানটি নতুন করে রেকর্ড করেছেন।[৬]
তথ্যসূত্র