বনসাই (盆栽, "ট্রের মধ্যে ফলানো" উচ্চারণⓘ)।[১] শক্ত কাণ্ড রয়েছে এমন গাছের খর্বাকৃতি করার শিল্পকে বনসাই বলা হয়। শক্ত কাণ্ড বিশিষ্ট গাছকে নান্দনিক ভাবে ক্ষর্বাকৃতি করার যে শিল্প।গাছের গড়ন নির্ণয় থেকে শুরু করে তাতে পানি দেয়া তথা বাঁচিয়ে রাখা এবং যে পাত্রে বা টবে তা চাষ করা হয় তা নির্ধারণ এবং প্রতিস্থাপন সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
শব্দের উৎপত্তি
প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানী ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। বনসাই করতে ব্যবহৃত ট্রের মত যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকেই সাধারণভাবে ‘বন’ বলা হয়। পাশ্চাত্যে পাত্রে ক্ষর্বাকৃতির গাছ বলতে ‘বনসাই’ বোঝায়।
ইতিহাস
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পাত্রে বা টবে গাছ বা বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা উৎপাদনের কথা জানা যায়। ৪০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের রাজনৈতিক নথিপত্র থেকে পাথর কেটে তৈরি করা পাত্রে গাছ চাষের হদিস পাওয়া যায়। প্রচুর মন্দিরে ফারাও তৃতীয় রামেসেস পাত্রে লাগানো জলপাই, খেজুর এবং অন্যান্য গাছের বাগান দান করেছিলেন। প্রাচীন ভারতে ঔষধ আর খাবারের জন্য টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর প্রচলন ছিল।
২৬৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৪২০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী চীন সাম্রাজ্যের সময়ের লেখালেখিতে প্রথম ‘পেনজাই’ শব্দের উল্যেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে চীন দেশের নানা জায়গায়, জাপানে, কোরিয়াতে, ভিয়েতনামে এবং থাইল্যাণ্ডে ভিন্ন আকারে এর চর্চা বিস্তার লাভ করে। চৈনিক ছং রাজবংশের সময় জাপানে পাত্রে উৎপাদিত গাছের জনপ্রিয়তা পায়। জাপানের সাংস্কৃতিক বিনির্মাণের এই সময়ে তারা বেশকিছু চীন দেশীয় বৈশিষ্ট্য নিজেদের মত করে আত্মস্থ করে নেয়। পাত্রের ক্ষুদ্র গাছকে এই সময় ‘গামলার গাছ’(হাচি-নো-কি) বলা হত। জনৈক জাপানী জেন পুরোহিত, কোকান শিরেন-এর লেখা ‘ক্ষুদ্রাকৃতি বৃক্ষরাজির বাগান নিয়ে লেখা গদ্য’ বইয়ে ‘বনছেকি’ বা বনসাই এর নান্দনিক বৈশিষ্ট্য ও বাগান পরিকল্পনার আলোচনা পাওয়া যায়।
প্রথম প্রথম জাপানীরা পাত্রে জন্মানো বামনকৃত গাছ ঘরবাড়ী আর গাছ সাজাতে ব্যবহার করত। টকুযাওয়ার সময়ে বিস্তৃর্ণ বাগান তৈরি বিশেষ গুরুত্ব পায়। ধনীদের অবসরে বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠে আজালিয়া এবং ম্যাপলের মত গাছ পালন করা। বামনকৃত গাছ পাত্রে পালন করাও জনপ্রিয় ছিল। মোটামুটি ১৮০০ সালের দিকে জাপানীরা তুলনামূলকভাবে কম গভীর পাত্রে ক্ষুদ্র গাছ পরিচর্যা করার সাথে সাথে চৈনিক ‘পেনজাই’ শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তন করে ফেলে।
টোকিওর রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরানো জীবিত একটি বনসাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বনসাই এর উপযুক্ত গাছ
যে সকল গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়। গাছের কাণ্ড মোটা হয়। বছরে একবার পাতা ঝরে। গাছের বয়স হলে গাছের ছাল মোটা হয়। গাছের ঝুরি নামে এমন গাছ, শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড়ের কাজ করে। গাছ অনেকদিন সতেজ থাকে এবং গাছের বয়স অনুযায়ী বেঁচে থাকে। যেখানে বা যেদেশে বনসাই করা হবে সে স্থানের আবহাওয়া উপযোগী হতে হয়।