বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান (১ জানুয়ারি ১৯৫১ - ১৫ জুন ২০২০) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তিনি সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন
বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট নগরীর চরপাড় মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন আহমেদ ও মাতার নাম নুরুননেসা বেগম লাকলেন।[১] তিনি দুর্গা কুমার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি ১৯৭১ সালে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে এখান থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে তিনি মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[১]
১৯৭৩ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি সিলেটের ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১]
কর্মজীবন
তিনি সিলেট পৌরসভার কনিষ্ঠ কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১] তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার হিসাবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[২] ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।[৩]
২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের মেয়র হন। ২০ হাজারের বেশি ভোটে কামরান বিজয়ী হন। ২০০৫ সালে, একটি টেনিস কোর্টের উদ্বোধন করতে গেলে, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ সদস্যরা তাকে হত্যার প্রয়াসে তাঁর দিকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে হরকত উল জিহাদ-আল-ইসলামী বাংলাদেশের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।[৪]
২০০৭ সালে তিনি সিলেট কিচেন মার্কেট ঘুষ মামলায় গ্রেপ্তার হন।[৫][৬] মামলায় জামিন পেলেও কামরানকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার দায়ের করা অন্য মামলায় আটক করা হয়। প্রথম আলো সেই কামরানের দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সিরিজ প্রকাশ করে। [৭]
২০০৮ সালে কারাবন্দি থাকা অবস্থায়, ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনের প্রতিযোগিতা করার জন্য তিনি তার মনোনয়ন ফরম জমা দেন ও মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ভোটাররা তাকে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা অন্যায়ভাবে আটক হিসাবে দেখেছিলেন।[৮] নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।[৯][১০]
কামরান ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।[১১]
২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনেও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।[১২]
ব্যক্তিগত জীবন
বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান আসমা কামরানকে বিয়ে করেন। তিনি দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। তারা হলেন আরমান, আশা ও আদনান।
মৃত্যু
বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ও তার স্ত্রী আসমা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্য ভ্রমণে যান ও ৫ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর কোয়ারান্টিনে থাকার পরেও কামরানকে ঢাকা ও সিলেটের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়।[১৩] এরপরে তিনি কোয়ারান্টিন লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চান।
২০২০ সালের ৫ জুন কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়[১৪] ও তাঁকে সিলেট শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে, ২০২০ সালের জুনে তাকে বিমান অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৫ জুন ২০২০ সালে রাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।[১৫] পরে তাকে তার নিজ শহর সিলেটে সমাহিত করা হয়।[১৬]
তথ্যসূত্র