২০০৫ সালের জুলাই মাসে আটলান্টিক হারিকেন ঋতুতে ফ্রাঙ্কলিনের ক্রান্তীয় ঝড় সংগঠিত হয়। এটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত একটি ঝড়। ফ্রাঙ্কলিনের ক্রান্তীয় ঝড় ছিল ওই ঋতুর ষষ্ঠ ঝড় । ফ্রাঙ্কলিনের ক্রান্তীয় ঝড় ২১ জুলাই বাহামা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর দিকে ধাবিত হয়। তারপর ২৬ জুলাই ফ্রাঙ্কলিন বারমুডার দিকে প্রবাহিত হয়। ফ্রাঙ্কলিন বৃহৎ আকার ধারণ না করেই,৩০ জুলাই অতিক্রান্তীয় নিউফাউন্ডলেন্ডের নিকট এসে থেমে যায়। বাতাসের তীব্রতার জন্য যে সমস্যার সৃষ্টি হয় ন্যাশনাল হারিকেন সেণ্টার সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ক্রান্তীয় ঝড় ফ্রাঙ্কলিন ভূমিতে তেমন ভাবে ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি । ১৯৯১ সালে হারিকেন ফ্লোয়েড দুর্বল হওয়ার কারণে,২০০৫ সালে প্রথমবারের মত এর নামকরণ করা হয় হারিকেন ফ্রাঙ্কলিন।
আবহবিদ্যাগত ইতিহাস
১০ জুলাই একটি ক্রান্তীয় ঝড় আফ্রিকান উপকূলে আঘাত হানে। পরবর্তীতে ২১ জুলাই এটি বাহামায় প্রবেশ করে এবং ক্রান্তীয় এলুথ্রার অঞ্চলের ৭০ মাইল (১১০ কি. মি.) পূর্বে সংগঠিত হয়।[১] প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে এই ঝড় প্রথমে উত্তর দিকে এবং উচ্চচাপে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হবে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস থেকে বুঝা যাচ্ছিলো যে, ঝড়টি মধ্য ফ্লোরিডার পশ্চিম দিকে যাচ্ছিল।[২] কিছূক্ষণ পরে নিম্নচাপের কারণে ফ্রাঙ্কলিন ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিনিত হয়।
ফ্রাঙ্কলিন ক্রান্তীয় ঝড় জাটের সাথে যুক্ত হয়ে বাতাসের গতিবেগ আরও বৃদ্ধি করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার ধারণা করে যে, এই অবস্থা আরও কিছুদিন বিদ্যমান থাকবে।[৩] যাইহোক এরপর ফ্রাঙ্কলিন ঝড়টি দুর্বল না হয়ে,উত্তরপূর্ব দিকে আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবাহিত হয়। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করে যে, হারিকেন ফ্রাঙ্কলিন একইভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে বারমুডার দিকে অগ্রসর হবে।[৪] ২৩ জুলাই এ ক্রান্তীয় ঝড় ফ্রাঙ্কলিনের বাতাসের গতিবেগ ছিল সব্বোচ্চ ৭০ এমপিএইচ (১১০ কি. মি./ঘণ্টা)।[১]
ফ্রাঙ্কলিন পূর্বদিকে অনিয়তভাবে ভাবে দুর্বল হতে থাকে ফলে ঝড় বিভিন্ন দিকে বিভিক্ত হয়ে পড়ে। এন এইচ সি পূর্বাভাস দেয় যে,২৫ জুলাই এর দিকে এই ঝড় দুর্বল হবে এবং কিছুটা ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিনিত হতে পারে।[৫] এই ঝড় পশ্চিম বারমুডার ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ।২৬ জুলাই ফ্রাঙ্কলিনের গতি কমে যায় এবং এই ঝড় উত্তর দিকে উষ্ণ ভাবাপন্ন বাতাসসহ উপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কলিনের দিক পরিবর্তিত হয়ে আবার একটু শক্তিশালী হয়।২৮ জুলাই এর গতিবেগ ছিল ৬০ এমপিএইচ (৯৫ কি. মি./ঘণ্টা)। উত্তরপূর্ব দিকে ফ্রাঙ্কলিন দ্রুততার সাথে অগ্রসর হয় এবং ৩০ জুলাই আরও ক্রান্তীয় হয়ে দক্ষিণের নতুন দিকে প্রবাহিত হয়। এই অতিক্রান্তীয় ঝড় এভালন পেনিনসুলার দক্ষিণ দিক পার হয়ে ৩১ জুলাই এটি থেমে যায় ।[১]
প্রভাব
প্রথমে উত্তরপশ্চিম বাহামায়ক্রান্তীয় ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়।কিন্তু পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কলিন ঝড় দ্বীপ হতে সরে গিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হওয়ায় সতর্কতা স্থগিত করা হয়। ২৫ জুলাই বারমুডাতে ফ্রাঙ্কলিনের সতর্কতা জারি করা হয় কিন্তু এই সতর্কতা ও তুলে নেওয়া হয়,ফ্রাঙ্কলিনের দিক পরিবর্তন হওয়ার ফলে।[১]
ক্রান্তীয় ঝড় ফ্রাঙ্কলিন বাহামার খুব নিকতেই সৃষ্টি হয় এবং বারমুডার নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভূমির এর প্রভাব সম্পর্কে তেমন কিছু নথিভুক্ত নেই,তবে সবচেয়ে তীব্রতর বায়ুপ্রবাহ ৩৭ এমপিএইচ (৬০ কি. মি./ঘণ্টা) রেকর্ড করা হয় বারমুডাতে। পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কলিন ঝড় ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাইরে প্রবাহিত হয়,তখন নিউফাওল্যান্ডের দক্ষিণপূর্ব অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৬] ১ ইঞ্চি (২৫ মি. মি.) বৃষ্টিপাত নিউফাওল্যান্ডে হয়। ক্রান্তীয় ঝড় ফ্রাঙ্কলিনের কারণে কোন ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি ।[১]