ফিলিপ সিকেভিজ (১৯১৮-২০০৯) একজন মার্কিন কোষ জীববিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন। তিনি প্রোটিন সংশ্লেষণ ও ট্রফিকিং প্রক্রিয়া অধ্যয়নের একজন অগ্রদূত ছিলেন। কোষের কেন্দ্রিকার ধর্ম অধ্যয়নে তিনি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। কোষপর্দার গতিবিদ্যা বিষয়ে ফিলিপ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী জর্জ প্যালেডের সঙ্গে গবেষণা করেন। সিন্যাপস-উত্তর ঘনত্ব পরিমাপে সিকেভিজ যথেষ্ট গবেষণা করেন। [১][২][৩]
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
ফিলিপ সিকেভিজ ১৯১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ফিলাডেলফিয়া শহরের একটি অভিবাসী শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন সম্পন্ন করার পর দুই বছর তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য অর্থ সংগ্রহে কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য তালিকাভুক্ত হলেও ১৯৪২ সালে স্নাতক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানে যোগদান করেননি। অতঃপর তিনি চার বছর সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন; প্রথমে রাসায়নিক সমরাস্ত্র ইউনিটে এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞানাগারের টেকনিশিয়ান হিসেবে। [৪]
১৯৪৫ সালে সিকেভিজ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলি শাখায় ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে ডেভিড গ্রিনবার্গের অধীনে তিনি প্রাণরসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তেজস্ক্রিয় শনাক্তকারী বা ট্রেসার ব্যবহার করে তিনি গ্রিনবার্গের সাথে অ্যামিনো অ্যাসিড বিপাক নিয়ে অধ্যয়ন করেন। সিকেভিজের কাজ প্রোটিন সংশ্লেষণে অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট বা এটিপি তৈরিতে মাইটোকন্ড্রিয়ার ভূমিকা ব্যাখ্যা করে। এই কাজের ফলে তিনি শক্তি বিপাক নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যান পটারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ফেলোশিপ লাভ করেন। সিকেভিজের কাজ রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জর্জ প্যালেডকে আকৃষ্ট করে; এবং তিনি সিকেভিজকে তার নিজের এবং সহকর্মী কেইথ পোর্টারের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আহবান জানান। ১৯৫৪ সালে ফিলিপ রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং প্যালেডের সঙ্গে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম নিয়ে কাজ করেন।
অ্যাকাডেমিক কর্মজীবন
সিকেভিজ ১৯৫৯ সালে রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি অধ্যাপক নিযুক্ত হন। অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তাকে ইমেরিটাস অধ্যাপকের সম্মানে ভূষিত করা হয়।[৩] সমগ্র কর্মজীবনই তিনি প্যালেডকে সহযোগিতা করেন। তাদের অধীনে অনেকেই ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন ডেভিড ডি সাবাতিনি ও গুন্টার ব্লোবেল। ১৯৭০ এর দশকে ফিলিপ সিন্যাপস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং সিন্যাপস-উত্তর ঘনত্বের প্রোটিন গঠন নিয়ে আলোচনা করেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সিকেভিজ কোষ জীববিজ্ঞান জার্নালের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোষ জীববিজ্ঞান সমিতি ও ১৯৭৬ সালে নিউ ইয়র্ক বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অ্যারিয়েল জি লোয়ির সঙ্গে সিকেভিজ ১৯৬৩ সালে "কোষ জীববিজ্ঞান ও ক্রিয়া"নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
১৯৭৫ সালে সিকেভিজ জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি[৫] ও ১৯৭৮ সালে আমেরিকান শিল্প ও বিজ্ঞান সমিতির[৬] সদস্য নির্বাচিত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
সিকেভিজ ১৯৪৯ সালে রেবেকা বার্স্টেইনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিবাহিত জীবন ষাট বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যাপৃত ছিল। সিকেভিজ পিয়ানো বাজাতে ও সাহিত্যচর্চা করতে ভালোবাসতেন। তিনি জীবদ্দশায় দুইটি ক্ষুদ্র উপন্যাস রচনা করেছিলেন। মৃত্যুর পরে তার অপ্রকাশিত কয়েকটি ছোটগল্প পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বিজ্ঞানচর্চায় নৈতিকতা অবলম্বনের পক্ষপাতী ছিলেন এবং এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার জীবনাবসান হয়।
তথ্যসূত্র