পেশাগত কোলাহল বা পেশাগত অপধ্বনি (ইংরেজি: Occupational noise) বলতে কোনও শিল্পখাতে কর্মরত কর্মী বা কর্মচারীর শ্রবণতন্ত্র দ্বারা যে পরিমাণ অবাঞ্ছিত শব্দশক্তি গৃহীত হয়, তাকে বোঝায়। পেশাগত কোলাহল বা শিল্পকারখানার কোলাহল (Industrial noise) পরিভাষাগুলিকে প্রায়শই পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের কোলাহলের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে থাকলে শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
ভৌত দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দ বা ধ্বনি ও কোলাহল বা অপধ্বনির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। শব্দ একটি ইন্দ্রিয়গত উপলব্ধি, আর কোলাহল বা অপধ্বনি হল অবাঞ্ছিত শব্দ বা ধ্বনি। অন্য ভাষায় কোলাহল বা অপধ্বনি হল একটি উপকারী কম্পাংক পরিসরে যেকোনও ধরনের অবাঞ্ছিত বাধাবিঘ্ন। সব ধরনের মানব কর্মকাণ্ডেই কোলাহল বিদ্যমান। যখন মানুষের সুস্বাস্থ্যের উপরে কোলাহলের প্রভাব যাচাই করা হয়, তখন এটিকে হয় পেশাগত কোলাহল (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রের কোলাহল) বা পরিবেশগত কোলাহল (অন্য সব পরিস্থিতিতে যেমন পাড়া, বাসভবন, গৃহস্থালি, সড়ক, খেলার মাঠ, সঙ্গীতবাদন, ইত্যাদি) এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
পেশাগত কোলাহলকে ঐতিহ্যগতভাবে জাহাজনির্মাণ, খনন, রেলপথের কাজ, ধাতু ঝালাই, কৃষিকাজ, নির্মাণ ও সামরিক খাতের কাজকর্মে জাতীয় উচ্চ কোলাহলে পূর্ণ শিল্পখাতগুলির সাথে সম্পর্কিত এক ধরনের পেশাগত ঝুঁকি (occupational hazard) হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক এমন যেকোনও পেশাগত কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের কোলাহল থাকতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিওশ (National Institute for Occupational Safety and Health, সংক্ষেপে NIOSH) এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন ওশা (Occupational Safety and Health Administration, সংক্ষেপে OSHA) কর্মক্ষেত্রে কোলাহল বা অপধ্বনি বিষয়ে আদর্শমান ও প্রবিধান প্রদানের ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করে থাকে।[১]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ আদর্শমান অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের কোলাহল বা অপধ্বনির মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল অতিক্রম করলে এবং দিনে ৮ ঘণ্টা এরূপ কোলাহলের সংস্পর্শে থাকলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। নিওশের ১৯৯৮ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে প্রায় ৩ কোটি শ্রমিক পেশাগত কোলাহলের সংস্পর্শে ছিলেন। ২০০১ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে জার্মানির প্রায় ৫০ লক্ষ লোক ঝুঁকিপূর্ণ কোলাহল মাত্রার সংস্পর্শে ছিলেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিল্পায়নের বিকাশের সাথে সাথে গড় কোলাহলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সেগুলি নিয়ন্ত্রণ বা সেগুলি থেকে সুরক্ষার উদ্যোগ ঐসব দেশে অপ্রতুল। পেশাগত কোলাহলজনিত রোগের বোঝা নির্ণয় ও সে অনুযায়ী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ কর্মদাতা ও কর্মচারী উভয়ের দায়িত্ব।
শ্রুতিগত নিঃশব্দকরণ নামক পদ্ধতির মাধ্যমে যন্ত্রপাতির কোলাহল কমিয়ে আনা যেতে পারে। এছাড়া অপেক্ষাকৃত নিঃশব্দ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যাপারেও ক্রেতাদেরকে উৎসাহিত করা হতে পারে।[২]
আরও দেখুন
সাধারণ:
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ