পুরন পুরী (પુરણ પુરી), পুরন পুলি (rearण पोळी), হোলিগে (ಹೋಳಿಗೆ), ওব্বত্তু (ಒಬ್ಬಟ್ಟು), বোবাত্তলু (బొబ్బట్లు) , পোলি (పోళె), বকশামুলু (బక్ష్యములు) ইত্যাদি বিবিধ নামে পরিচিত এই পদটি একটি ভারতীয় মিষ্টি স্বাদের রুটি জাতীয় খাবার যা দক্ষিণ ভারত থেকে উদ্ভূত হয়েছে। .
ইতিহাস
পুরন পুলি তৈরী করার পদ্ধতিমনুচরিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মনুচরিত হল ১৪ শতকে রচিত এক তেলুগু বিশ্বকোষ যা অন্ধ্র প্রদেশের আল্লাসানি পেদান্না দ্বারা সংকলিত হয়েছিল। [১] গোবিন্দ দাস রচিত ভবপ্রকাশ এবং ভৈষজ্য রত্নাবলী রাজ্য -এ আয়ুর্বেদিক পথ্য প্রস্তুতির পদ্ধতি হিসাবে পুরন পুলির একটি রন্ধনপ্রনালী দেওয়া আছে। [২] দক্ষিণ ভারতের রাজা সোমেশ্বরের লেখা দ্বাদশ শতাব্দীর সংস্কৃত গ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে। [৩]
উপকরণ
পুরন পুলি তৈরি হয় সেনাগা পাপ্পু (ছোলা), সাধারণ ময়দা (গমের আটা), গুড় বা বেতের চিনি, এলাচ গুঁড়া এবং/অথবা জায়ফল গুঁড়া, ঘি এবং জল দিয়ে। কখনও কখনও গুজরাটে উপাদান হিসাবে কবুতর মটর ব্যবহার করা হয়। সাধারণত কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যেও এটি এক্টি প্রচলিত খাবার। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং অন্যান্য স্থানে, পেসার পাপ্পু (মুগের বীজ), ছোলা (সেনাগা পাপ্পু) ইত্যাদির একটি মিশ্রণ ব্যবহার করে এই পুরন পুলি প্রস্তুত করা হয়। পুরন পুলির অন্যান্য অনুসঙ্গিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে বাদাম, খেজুর এবং হলুদের গুঁড়া যা রান্নার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে বা নাও হতে পারে। [৪][৫]
আঞ্চলিক বৈকল্পিক
পুরন পুলি প্রস্তুতির পদ্ধতি স্থানভেদে পরিবর্তিত হয়। অঞ্চল্ভেদে ওবাত্তু প্রস্তুতিতে চিনাবাদাম, চিনি, নারকেল, তিল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার উপাদান ব্যবহার হয়। কখনও কখনও মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন অঞ্চলে কোড়ান নারকেল যোগ করে পুরন পুলি প্রস্তুত করা হয়। নারিকেল এবং গুড় -ও ব্যবহার করা যেতে পারে। চিনি এবং গুড়ের মিশ্রণ খাবারে মিষ্টিতা যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও জায়ফল বা এলাচও উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
কিছু রন্ধনপ্রনালীতে ময়দা একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। পরিবর্তে পুলিটি বেলতে তেল বা ঘি ব্যবহার করা হয়। কিছু জায়গায় এক চিমটি হলুদ যোগ করার পরে ময়দা ব্যবহার করা হয় যার ফলে রান্নার পর পুলির রঙ হলুদ বর্ণ হয়। মাখা ময়দার লেচি প্রস্তুত করে তার ভিতরে মিষ্টি ভরাট করে দেওয়া হয়। তারপর সেই লেচি বেলে নিয়ে ঘিয়ে ভেজে রান্না করা হয়। [৬]
অন্ধ্র প্রদেশ
এটি অন্ধ্রপ্রদেশে জনপ্রিয়ভাবে বোব্বাট্টু নামে পরিচিত এবং এটি প্রধানত উত্সব অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। এটি উপকূলীয় অন্ধ্রের একটি মিষ্টি স্বাদের পদ। এটি গরম গরম পরিবেশন করা হয় এবং এক চামচ ঘি লাগিয়ে খাওয়া হয়। রাভা বোব্বাত্তু হল বোব্বাত্তুর আরেকটি প্রকার। এটিকে অন্ধ্রপ্রদেশের রায়ালসিমা অঞ্চলে পলি এবং উত্তর-পূর্ব অন্ধ্র প্রদেশে ওবাট্টু বলা হয়।
কর্ণাটক
এটি কর্ণাটক রাজ্যের সকল অনুষ্ঠান, বিশেষ করে যুগাদি/উগাড়ির(কর্নাটকের নববর্ষ) সময় পরিবেশিত একটি বিশেষ খাবার। কর্ণাটকের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরণের ওবাত্তু বা হোলিগে পরিবেশন করা হয়। এটি স্থানীয় অঞ্চলে সাধারণত হলুদ ছোলা এবং চিনি বা গুড় দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ওবাত্তুতে উপাদান হিসাবে নারকেল এবং চিনিও ব্যবহার করা হয়।
মহারাষ্ট্র
এটি মহারাষ্ট্রের বিশেষ জনপ্রিয় খাবার যা গণেশ চতুর্থী এবং হোলির মতো উত্সবে বাড়িতে বাড়িতে প্রস্তুত করা হয়। এটি বাসুন্দি, আমড়া, কড়ি, আমটি ইত্যাদির সাথে খাওয়া হয়। পুনেতে পুরন পোলি আমটি বা স্বাদযুক্ত টক তরকারির সাথে খাওয়া হয় যা কাটাচি আমটি নামেও পরিচিত। মহারাষ্ট্রে পুরন পুলি তৈরি করতে চানা ডালের অবশিষ্ট অংশ ব্যবহার করা হয়। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলে, মিষ্টি স্বাদ আনতে পুরান পোলিতে গুড় ব্যবহার করা হয়।এটি ওয়াড়া (বা বড়া) দিয়ে খাওয়া হয়। ওয়াড়া হল সমস্ত মসুর ডাল দিয়ে তৈরি একটি পাকোড়া।
তামিলনাড়ু ও কেরালা
তামিলনাড়ুর ওপুট্টু এবং কেরালার পায়সাবোলি হল একপ্রকার সোনালি হলুদ মিষ্টি প্যানকেক জাতীয় খাবার যা পুরন পুলির সাথে সম্পর্কিত। কেরালার ঐতিহ্যবাহী সাদয়াতে পায়সমের সাথে এটি খাওয়া হয়। ঠেঙ্গা (নারকেল) বোলি এবং শর্করা (বাদামী চিনি) সহ বিভিন্ন ধরণের ওপুট্টু প্রস্তুত করা হয়। ওপুট্টু বিশেষ করে ভারতের তামিলনাড়ু এবং কেরালার দক্ষিণতম জেলাগুলিতে জনপ্রিয়।