পুণ্যিপুকুর ব্রত

পুণ্যিপুকুর ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্ৰতগুলির অন্তর্গত একটি কুমারীব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সী কুমারী মেয়েরা চৈত্র মাসের সংক্রান্তি থেকে বৈশাখ মাসের শেষদিন (সংক্রান্তি) পর্যন্ত একমাসব্যাপী এই ব্রত পালন করে। ব্রতের উদ্দেশ্য হল বৈশাখ মাসের খরায় যাতে পুকুর জলশূন্য না হয় অথবা গ্রীষ্মঋতুতে যেন গাছ না মরে এবং ফসল যেন ভাল হয়।[] ব্রতের ছড়ায় প্রকৃতির মঙ্গল কামনা ছাড়াও কুমারী নারীর সৌভাগ্য ও সন্তানলাভের কামনা পরিস্ফুট।[]

ব্রতের নিয়ম

গ্রাম-বাংলার বসতবাড়ির মেঠো আঙিনা বা শানের মেঝেতে আল দিয়ে অথবা পুকুরপাড়ে বা বাগানে এই ব্রত করা হয়। অশাস্ত্রীয় মেয়েলি ব্রত হওয়ার দরুন ব্রতপালনে কোন মন্ত্র বা পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না।

পুণ্যিপুকুর ব্রতের তিনটি পর্যায় আছে। যথা: আহরণ, ক্রিয়া ও ছড়া।

  • প্রথম পর্যায়ে ব্রত পালনের প্রয়োজনীয় উপাচার অর্থাৎ সাদাফুল, চন্দন, দূর্বা ঘাস, তুলসী গাছ, পাতাসমেত বেলগাছের ডাল, কয়েকটি কড়ি ও একঘটি জল সংগ্রহ করতে হয়।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ে চারদিকে চারটি ঘাটসহ চৌকো একটি পুকুর খনন করে প্রতিটি ঘাটের দুপাশ কড়ি দিয়ে সাজিয়ে পুকুরের মাঝখানে ফুলের মালা সজ্জিত তুলসীগাছ বা বেলগাছের ডাল বসানো হয়।
  • তৃতীয় পর্যায়ে চার-ছয় পংক্তির ছড়া আবৃত্তি করে ঘটি দিয়ে গাছে জল ঢালা হয়।
  • ব্রতের শেষে তিনবার চন্দন সহযোগে সাদাফুল ও দূর্বা ঘাস পুকুরে অঞ্জলি দিয়ে গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করা হয়।

চারবছর পরপর নির্ধারিত সময়ে ব্রতপালনের পর এক কাহন কড়ি দিয়ে ব্রত উদ্‌যাপন করা হয়। ব্রতশেষে ব্রতিনীর ইচ্ছানুযায়ী এক বা চারজন ব্রাহ্মণকে সোনার বেল ও ষোড়শদান দক্ষিণা দিয়ে ভোজন করানোর রীতি আছে।[]

তথ্যসূত্র

  1. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ২৫৯
  2. চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ২৪৩–২৪৪। আইএসবিএন 81-86036-13-X 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!