এখানে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণগুলি ইঙ্গিত দেয়, মানুষ সম্ভবত ৬০,০০০ বছর আগে নিউ গিনিতে এসেছিল। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। [১][২]বরফ যুগে, তারা সম্ভবত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সমুদ্রপথে এখানে এসেছিল। তখন সমুদ্র-তল নিচু থাকায় দ্বীপগুলির মাঝের দূরত্ব কম ছিল। প্রথম আগমনকারীরা যদিও ছিল শিকারী এবং সংগ্রহকারী, তবুও প্রাথমিক নিদর্শণগুলি প্রমাণ করে, তারা বনের পরিবেশকে খাদ্য সরবরাহের উপযোগী করে নিয়েছিল। মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে যখন কৃষিক্ষেত্রের বিকাশ ঘটেছিল, সেই একই সময়ে কুক-এ নতুন প্রস্তরযুগীয় উদ্যানচর্চার ইঙ্গিতও রয়েছে। এখনকার প্রধান খাদ্য - মিষ্টি আলু এবং শূকর পরে এলেও, শেলফিস এবং মাছ দীর্ঘকাল ধরে উপকূলের বাসিন্দাদের খাদ্যতালিকার মূল ভিত্তি ছিল। সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ৫০,০০০ বছর আগে উষ্ণতর উপকূল অঞ্চলে সীমাবদ্ধ না থেকে, মানুষ ২,০০০ মিটার (৬,৬০০ ফুট) উচ্চতার জায়গাগুলিও দখল করেছিল।[৩]
ইউরোপীয় যোগাযোগ
ইউরোপীয়রা যখন প্রথম এখানে উপস্থিত হয়, তখন নিউ গিনি এবং আশেপাশের দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের প্রযুক্তি ছিল হাড়, কাঠ এবং পাথরের সরঞ্জাম, আর ছিল একটি উৎপাদনশীল কৃষিব্যবস্থা। তাদের বাণিজ্য চলত উপকূলে (মূলত মৃৎশিল্প, ঝিনুকের অলঙ্কার এবং খাবারের জিনিসপত্র) এবং দেশের অভ্যন্তরে (ঝিনুক ও সমুদ্রিক পণ্যের বিনিময়ে বনজ সম্পদ)।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রার সময় নিউ গিনি দেখা প্রথম ইউরোপীয় ছিল, সম্ভবত ১৬ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ নাবিকরা। ১৫২৬-১৫২৭ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী জর্জি ডি মেনেজেস দুর্ঘটনাক্রমে মূল দ্বীপে আসেন এবং তাঁকেই "পাপুয়া" নামকরণের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি মেলানেশিয়ান মানুষদের কুঁচকানো চুলের জন্য এই মালয় শব্দটি ব্যবহার করেন। স্পেনের ইয়াগিও আর্তিজ দে রেতেজ, ১৫৪৫ সালে দ্বীপটির জন্য "নিউ গিনি" শব্দটি প্রয়োগ করেন। কারণ এই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা এবং আফ্রিকান গিনি উপকূলে মানুষগুলির মধ্যে তিনি একটি মিল দেখতে পান।
যদিও ইউরোপীয় নাবিকরাই দ্বীপগুলি প্রথম পরিদর্শন করে এবং পরে সেখানের উপকূল অঞ্চলে অনুসন্ধান করে, তবুও ইউরোপীয় গবেষকরা এখানের বাসিন্দাদের সম্পর্কে খুব কমই জানতেন। ১৮৭০-এর দশকে, রাশিয়ান নৃবিজ্ঞানী নিকোলাই মিকলুখো-মাকলাই নিউ গিনিতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালান এবং বেশ কয়েকটি বছর আদিবাসীদের মধ্যে বাস করে, তাঁর গ্রন্থে তাদের জীবন যাত্রার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
পাপুয়ার ভূখণ্ড
১৮৮৩ সালে কুইন্সল্যান্ডের উপনিবেশ, পূর্ব নিউ গিনির দক্ষিণ অঞ্চলকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা অনুমোদন করে নি। যাইহোক, জার্মানি যখন উত্তর অংশে জনবসতি শুরু করে, তখন ১৮৮৮ সালে নিউ গিনির দক্ষিণ উপকূল ও তার সংলগ্ন দ্বীপপুঞ্জের উপর একটি ব্রিটিশ সুরক্ষার কথা ঘোষণা করা হয় এবং ৪ সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ নিউ গিনি নামে অভিহিতটি জোটটি কার্যকর করা হয়। ১৯০৫ সালে পাপুয়া আইন পাস হওয়ার পরে, ব্রিটিশ নিউ গিনি, পাপুয়ার ভূখণ্ডে পরিণত হয়, এবং ১৯০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রেলীয় প্রশাসন শুরু হয়। যদিও ১৯৭৫ সালে পাপুয়া নিউগিনির স্বাধীনতা পর্যন্ত পাপুয়া ছিল, ব্রিটিশদের দখলে, তাদের নিয়ন্ত্রণেই।[৪]
পাপুয়ায় সামান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চালু ছিল। পাপুয়া আইনের আওতায়, অস্ট্রেলিয়া একে আলাদাভাবে পরিচালনা করত। কিন্তু ১৯৪১ সালে জাপান সাম্রাজ্য আক্রমণ করলে, সিভিল প্রশাসন স্থগিত করে দেওয়া হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের সময়, অস্ট্রেলীয় সামরিক প্রশাসন দ্বারা পোর্ট মোরসবি থেকে পাপুয়া শাসন করা হত। জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থার কখনো কখনো সেখানে তাঁর সদর দফতর পরিচালনা করতেন।
জার্মান নিউ গিনি
ইউরোপে নারকেল তেল-এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সাথে, প্রশান্ত মহাসাগরের বৃহত্তম বাণিজ্য সংস্থা হামবুর্গের গোডেফ্রয়, নিউ গিনি দ্বীপপুঞ্জের কোপরা-য় বাণিজ্য শুরু করে।
১৮৮৪ সালে জার্মান সাম্রাজ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপের উত্তর-পূর্বের চতুর্থাংশের দখল নিয়ে, তার শাসনভার একটি চার্টার্ড ট্রেডিং সংস্থার হাতে তুলে দিতে গঠন করে, জার্মান নিউ গিনি কোম্পানি। ১৮৮৫ সালের মে মাসে, জার্মান ইম্পেরিয়াল সরকার, এই সংস্থাকে প্রদত্ত সনদে, এই অঞ্চলে সরকারের নামে অন্যান্য "অবৈধ" জমিগুলির উপর সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা এবং স্থানীয় বাসিন্দদের সাথে সরাসরি "সমঝোতা" করার ক্ষমতা দেয়। কেবল বিদেশী শক্তির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতাটি জার্মান সরকার নিজের সংরক্ষণে রাখে। যে ছাড়গুলি তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, তার বিনিময়ে নিউ গিনি কমপানি সরাসরি স্থানীয় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অর্থ প্রদান করত। ১৮৯৯ সালে, জার্মান ইম্পেরিয়াল সরকার, এই অঞ্চলটির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এরপর থেকে তা জার্মান নিউ গিনি নামে পরিচিত হয়।
নিউ গিনি ছিল মূলত একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ। হাজার হাজার স্থানীয় কর্মীকে কোকো এবং কোপরা বাগানে সস্তা শ্রমিক হিসাবে ভাড়ায় নেওয়া হত। ১৮৯৯ সালে, জার্মান সরকার বার্লিনের নিউ গিনি সংস্থার কাছ থেকে উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। শিক্ষার ভার ছিল মিশনারীদের হাতে। ১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, জার্মান উপনিবেশটিকে দখল করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ান যুদ্ধের প্রবীণদেরকে বৃক্ষরোপণের ভার দেওয়া হয় এবং ১৯২১ সালে লীগ অব নেশনস, অস্ট্রেলিয়াকে নিউ গিনির ট্রাস্টিশিপ দেয়। বৃক্ষরোপণ এবং স্বর্ণ খনির কারণে এখানে কিছুটা সমৃদ্ধি আসে।[৫]
নিউ গিনির ভূখণ্ড
নিউ গিনির সাবেক জার্মান অঞ্চল শাসন করার জন্য কমনওয়েলথ অস্ট্রেলিয়া, ১৯২০ সালে লীগ অফ নেশনস থেকে একটি ম্যান্ডেট গ্রহণ করেছিল। এই আদেশের অধীনে এই অঞ্চলটি পরিচালিত হত। কিন্তু ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান আগ্রাসনের কারণে, এই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক প্রশাসন বরখাস্ত হয়। যুদ্ধের অন্তিম মাসগুলিতে অস্ট্রেলিয়ান এবং আমেরিকান বাহিনী ঐ অঞ্চলগুলি পুনরায় দখল করার আগে পর্যন্ত, নিউ গিনির বেশিরভাগ অঞ্চল, বাওগেইনভিলিয়া এবং নিউ ব্রিটেন দ্বীপপুঞ্জ সহ বেশিরভাগ অঞ্চল, জাপানি বাহিনীর দখলে চলে যায়।