পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পূর্বভাগে এক সংকীর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই রাজ্যের প্রসার। রাজ্যের একাধিক স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি অত্যন্ত মনোহর। ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির কয়েকটি এই রাজ্যে অবস্থিত। এগুলির মধ্যে রয়েছে রাজ্যের উত্তর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, রাজ্যের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সন্দকফু (৩,৬৩৬ মি অথবা ১১,৯২৯ ফু)[২] এবং রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর অবস্থিত সুন্দরবনম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে ১৭০০ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। এই কারণে কলকাতায় নিও-গথিক, ক্যারোক, নিও-ক্ল্যাসিকাল, প্রাচ্য ও ইসলামি শৈলীর প্রচুর অট্টালিকা ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠে। উত্তর ভারতের অনেক শহরে নির্মাণকার্যের উপর সংক্ষিপ্ততায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু কলকাতার ভবন ও স্থাপনাগুলির স্থাপত্যশৈলীতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য দেখা যায়। প্রধানত ব্রিটিশরা এবং অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ও ফরাসিরা যে ইউরোপীয় স্থাপত্য ও রুচির আমদানি এই শহরে করেছিল, সেটিই এই বৈচিত্র্যের কারণ।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান বিশ্বের বৃহত্তম মোহনাস্থিতম্যানগ্রোভ অরণ্য। এটি একাধারে একটি জাতীয় উদ্যান, ব্যাঘ্র প্রকল্প, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক অফ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেরও অংশ। সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলের আয়তন ১০,০০০ কিমি২ (৩,৯০০ মা২)। এর মধ্যে ৫,৯৮০ কিমি২ (২,৩১০ মা২) বাংলাদেশের এবং অবশিষ্টাংশ পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। সুন্দরবন অঞ্চলটি বঙ্গীয় অববাহিকায় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়া গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পলিগঠিত ৮০,০০০ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী বদ্বীপ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বদ্বীপটি বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ। সমগ্র অববাহিকাটি পরস্পর-সংযুক্ত জলপথের এক জটিল জালের দ্বারা আবদ্ধ। ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত বনাঞ্চলটির সংরক্ষণ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। তার আগে ১৯৭৩ সালে এই বনের কেন্দ্রীয় অংশটিকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে এবং ১৯৭৭ সালে সেই ব্যাঘ্র প্রকল্পের ২,৫৮,৫০০ হেক্টর (৬,৩৯,০০০ একর) অঞ্চলের কেন্দ্রস্থ ১৩৩,০০০ হেক্টর অঞ্চল একটি বন্যপ্রাণী অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৮৪ সালের ৪ মে এটি জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হয়। ১৯৮৭ সালে এটি প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার ও লবণাক্ত জলের কুমির সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী দেখা যায়।[৬][৭]
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণের একমাত্র উপায় হল জলযান। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম এম. ভি. চিত্রলেখা ও এম. ভি. সর্বজয়া নামে দু-টি স্থানীয় জলযান পরিষেবা প্রদান করে। বনের মধ্যে রাত্রিবাস ও সাফারির ব্যবস্থা করে সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্প। এটিই এই অঞ্চলের একমাত্র সরকার-অনুমোদিত বিলাসবহুল রিসর্ট। বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও নৌ-সাফারি ছাড়া পর্যটকেরা ভগতপুর কুমির প্রকল্প, জম্বুদ্বীপ, সুধন্যখালি ওয়াচটাওয়ার, বুরিডাবরি ব্যাঘ্র প্রকল্প, নেতিধোপানি ওয়াচটাওয়ার, হলিডে আইল্যান্ড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কনক ও সজনেখালি পাখিরালয়ও দেখতে যান।
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হাজারদুয়ারি প্রাসাদে বিশ্বের বৃহত্তম ঝাড়বাতি ও ভারতের বৃহত্তম সিঁড়ি দেখা যায়। ১৮৩৭ সালে বাংলার তৎকালীন নবাবনবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের জন্য ডানকান ম্যাকলিয়ড ইন্দো-ইউরোপীয় শৈলীর এই তিনতলা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।[১৩] "হাজারদুয়ারি " নামটির অর্থ "[যে প্রাসাদে] এক হাজারটি দরজা "। এগুলির মধ্যে ৯০০টি মাত্র সত্যিকারের দরজা। ১৯৮৫ সালে সুসংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রাসাদটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়।[১৪][১৫] হাজারদুয়ারি প্রাসাদ সংগ্রহালয়টিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বৃহত্তম ক্ষেত্র জাদুঘর মনে করা হয়। এই জাদুঘরের ২০টি প্রদর্শশালায় ৪৭৪২টি প্রত্নসামগ্রী রক্ষিত আছে। এগুলির মধ্যে ১০৩৪টি সামগ্রী পর্যটকেরা দেখতে পারেন। এই সামগ্রীগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইতালীয় শিল্পীদের অঙ্কিত তৈলচিত্র, শ্বেতপাথরের মূর্তি, দুষ্প্রাপ্য বই, পুরনো মানচিত্র, ভূমি রাজস্বের নথিপত্র ও পালকি (প্রধানত ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীতে ব্যবহৃত)। ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহ্যাম প্রাসাদের আদলে নির্মিত হয় কোচবিহার রাজবাড়ি।
কুইনস বিল্ডিং, পার্ক স্ট্রিট
শ্যামরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর
হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, মুর্শিদাবাদ
কোচবিহার রাজবাড়ি
সমুদ্র সৈকত
পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। রাজ্যের উপকূলভাগ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল থেকে ওডিশা রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। রাজ্যে কয়েকটি সুন্দর সৈকত শহর রয়েছে। এগুলি হল দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, বকখালি, গঙ্গাসাগর ও তাজপুর। এই সৈকতগুলির মধ্যে কয়েকটি সৈকত গাড়ি চলাচলেরও উপযোগী।[১৬]
ইডেন গার্ডেনস, ভারতের বৃহত্তম এবং আসন-সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম[১৮]
বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম নন-অটো রেসিং স্টেডিয়াম। ১৯৮৪ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা থ্রি-টায়ার আকৃতিতে ৮৫,০০০[১৯]