নিউ ইয়র্ক শহর, যার সরকারি নাম সিটি অফ নিউ ইয়র্ক (ইংরেজি: City of New York) ও প্রচলিত কথ্য নাম নিউ ইয়র্ক সিটি (New York City), উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বন্দর শহর। শহরটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, হাডসন নদী ও ইস্ট নদীর মোহনায়, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত। নিউ ইয়র্ক শহর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী মহানগরী। শহরটি ম্যানহাটন দ্বীপ, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড দ্বীপ, লং আইল্যান্ড দ্বীপটির পশ্চিম অংশ এবং ম্যানহাটনের উত্তরে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মূল ভূখণ্ডের এক চিলতে অংশের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। নিউ ইয়র্ক শহরটিতে বহুসংখ্যক আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকা রয়েছে এবং এগুলিকে প্রশাসনিকভাবে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা "বারো"-তে (Borough) বিভক্ত করা হয়েছে; এগুলি হল ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, দ্য ব্রংক্স, কুইন্স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, যাদের প্রতিটিরই নিজস্ব জীবনধারা রয়েছে। নিউ ইয়র্কের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের। গড় তাপমাত্রা জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন শূন্যের নিচে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুলাই-আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।[৯]
মূল নিউ ইয়র্ক শহরের আয়তন ৩০২.৬ বর্গমাইল (৭৮৪ কিমি২)।[১০][১১] নিউ ইয়র্ক শহরকে ঘিরে অবস্থিত একটি অতিবৃহৎ নগর অঞ্চল কেবল নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যই নয়, দক্ষিণে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য ও উত্তরে কানেটিকাট অঙ্গরাজ্য পর্যন্তও বিস্তৃত। মূল শহরে প্রায় ৮৬ লক্ষ লোকের বাস।[৭] এই শহরের নাগরিকদের ইংরেজিতে "নিউ ইয়র্কার" বলা হয়। নিউ ইয়র্ক শহর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নগরী।[১২] এছাড়া নিউ ইয়র্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনঘনত্ববিশিষ্ট শহর।[১৩] নিউ ইয়র্ক আক্ষরিক অর্থেই একটি বিশ্বনগরী; এখানে বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের অভিবাসী সম্প্রদায় পাশাপাশি বাস করে; শহরের প্রায় ৩৬% অধিবাসীই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেনি।[১৪] শহরের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকাতে যাওয়াকে দেশ পরিবর্তনের সাথে তুলনা করা যায়। নিউ ইয়র্কে তেল আভিভের চেয়েও বেশি ইহুদী, ডাবলিনের চেয়েও বেশি আইরিশ, নাপোলির চেয়েও বেশি ইতালীয় আর সান হুয়ানের চেয়েও বেশি পুয়ের্তোরিকান মানুষ আছে। শহরের মানুষ ৮০০রও বেশি ভাষায় কথা বলে।[১৫] আধুনিক এই নগরীর এক-চতুর্থাংশ মানুষই ধর্মকর্ম করেন না; বাকিদের মধ্যে লাতিনো খ্রিস্টান ক্যাথলিক মতাবলম্বী, কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টান প্রোটেস্টান্ট মতাবলম্বী ও ইহুদীরা সবচেয়ে বড় তিনটি ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়।[১৬]
বিগত দুইশত বছর ধরে নিউ ইয়র্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সম্পদশালী শহর। শহরটি একসময় নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী এমনকি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও রাজধানী ছিল। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক শহর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কেন্দ্রগুলির একটি। বিশ্বব্যাপী নিউ ইয়র্ক শহরের রাজনীতি, গণমাধ্যম, বিনোদন ও পোশাকশৈলীরর প্রভাব বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত যার কারণে একে আন্তর্জাতিক কূটনীতির তীর্থস্থান বলা যায়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত এরিক অ্যাডামস নিউ ইয়র্ক শহরের বর্তমান নগরপ্রধান বা মেয়র।
মার্কিন জাতির সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মানসপটে নিউ ইয়র্ক শহরের প্রভাব অন্য যেকোনও মার্কিন শহরের চেয়ে বেশি। ওয়াল স্ট্রিট বললেই ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্রডওয়ে বললেই মঞ্চনাটক, ফিফথ অ্যাভিনিউ বললেই কেনাকাটা, ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ বললেই বিজ্ঞাপন শিল্প, গ্রিনিচ ভিলেজ বললেই বোহেমীয় জীবনযাপনের ধারা, সেভেনথ অ্যাভিনিউ বললেই পোশাকশৈলী, ট্যামানি হল বললেই কূটনীতি রাজনীতি আর হারলেম বললেই জ্যাজ সঙ্গীতের আদিযুগ ও আফ্রিকান-মার্কিনীদের জীবনাকাঙ্খার ছবি ভেসে ওঠে।
বিশ্বের চতুষ্কোণ থেকে আগত অভিবাসীদের স্বাগত জানানো স্ট্যাচু অফ লিবার্টি (১৮৮৬) নামক বিশালাকার তাম্রমূর্তিটি শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেরই নয়, সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও স্বাধীনতার মূল্যবোধগুলির প্রতীক।[১৭] কিন্তু শহরটির মূল প্রতীক হল শহরটি নিজেই। ম্যানহাটনের দক্ষিণতম প্রান্তে লোয়ার ম্যানহাটন নামক এলাকাটিতে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্থে সরু সরু রাস্তার ওপরে ব্যবসায়িক কার্যালয় ধারণ করার জন্য কয়েক ডজন আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়, যাদের মধ্যে আর দেকো শৈলীতে নির্মিত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং (১৯৩১) ও ক্রাইসলার বিল্ডিং ভবন দুটি ছিল সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া। সাগর থেকে লোয়ার ম্যানহাটনের দিকে তাকালে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো এই অট্টালিকার যে গুচ্ছটি চোখে পড়ে, সেই দিগন্ত রূপরেখাটিই নিউ ইয়র্ক শহরের ঐশ্বর্য ও খ্যাতির প্রধান প্রতীক। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নামক গগনচুম্বী যুগ্ম অট্টালিকাদ্বয় ছিল নিউ ইয়র্ক শহর এবং গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্যের প্রতীক। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক শহরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা তাদের বৃহত্তম আক্রমণটি পরিচালনা করে এবং দুইটি বিমান দিয়ে উচ্চশক্তিতে আঘাত করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনগুলিকে ধ্বংস করে। এই ধ্বংসকাণ্ডে কেবল জানমালের অপরিসীম ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি, বরং তা নিউ ইয়র্কবাসী তথা মার্কিনীদের মনেও গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। বর্তমানে ঐ একই জায়গায় ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নামের আরও উঁচু একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক শহরে বাস্কেটবল, মার্কিন ফুটবল, বরফ হকি ও বেসবল খেলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে; এই চারটি ক্রীড়ার জাতীয় পেশাদারী লিগের সদর দফতরগুলি নিউ ইয়র্কেই অবস্থিত এবং এগুলির প্রতিটিতে নিউ ইয়র্ক কমপক্ষে দুইটি করে দল পাঠায়। এছাড়া টেনিসের চারটি প্রধান প্রতিযোগিতার একটি ইউ এস ওপেন নিউ ইয়র্কের কুইন্সে অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা বিশ্বের বৃহত্তম।
নিউ ইয়র্ক শহরে ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের মহাবিদ্যালয় আছে। এখানে বিশ্বের বৃহত্তম সরকারি বিদ্যালয় ব্যবস্থাটি অবস্থিত, যাতে ১৭০০টি বিদ্যালয়ে ১১ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করে। নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি একটি গণগ্রন্থাগার ব্যবস্থা যা বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম; এর ৯২টি শাখায় প্রায় ৫ কোটি বই আছে।
নিউ ইয়র্ক শহরের বেশির ভাগ মানুষ গণপরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এখানে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে নামে বিশ্বের বৃহত্তম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থাটি অবস্থিত; এই পাতাল রেল ব্যবস্থাটি ৪৭২টি স্টেশন নিয়ে গঠিত। শহরটি হাডসন নদীর তলদেশ দিয়ে খননকৃতি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ হল্যান্ড টানেলের মাধ্যমে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের সাথে সংযুক্ত। ব্রুকলিন ব্রিজ (১৮৮৩), উইলিয়ামসবার্গ ব্রিজ (১৯০৩), জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ (১৯৩১) এবং ভেরাজানো-ন্যারোস ব্রিজ (১৯৬৪) নামক সেতুগুলির প্রতিটিই উদ্বোধনের সময় বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুর দাবীদার ছিল। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি উত্তর আমেরিকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর। নিউ ইয়র্ক সমুদ্রবন্দরটি সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান বন্দর। এটি বহিরাগতদের উত্তর আমেরিকা মহাদেশে প্রবেশের প্রধানতম প্রবেশদ্বার এবং একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের মহাসমুদ্রগুলিতে বের হবার প্রধান প্রস্থানপথ।
১৬২৪ সালে ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্রের উপনিবেশ স্থাপনকারীরা নিউ ইয়র্কের বর্তমান লোয়ার ম্যানহাটন এলাকাটিতে একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন, ১৬২৬ সালে যার নাম দেওয়া হয় "নয়া আমস্টারডাম"।[১৮] ১৬৬৪ সালে নয়া আমস্টারডাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলটি ইংরেজদের দখলে চলে আসে।[১৮] ইংল্যান্ডের রাজা ২য় চার্লস তাঁর ভাই ও ইয়র্কের ডিউক ২য় জেমসকে এই ভূমিগুলি দান করলে এলাকাটির নাম বদলে "নিউ ইয়র্ক" রাখা হয়।[১৯] ১৭৮৫ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত ৬ বছর নিউ ইয়র্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ছিল।[২০] ১৭৯০ সাল থেকেই এটি দেশটির বৃহত্তম শহর।[২১] ১৯শ শতকের শেষভাগে ও ২০ শতকের শুরুর দিকে বহু লক্ষ অভিবাসী নিউ ইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।[২২] ২১শ শতকে এসে নিউ ইয়র্ক উদ্ভাবন ও শিল্পোদ্যোগ,[২৩]সামাজিক সহনশীলতা[২৪], টেকসই পরিবেশ[২৫][২৬] এবং স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মত ক্ষেত্রগুলিতে বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় শহর।[২৭]
১৫২৪ সালে ইতালীয় অভিযাত্রী জোভান্নি দা ভেরাৎসানো প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে বর্তমান নিউ ইয়র্ক শহর যেখানে অবস্থিত, সেই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেন। তখন এখানে প্রায় পাঁচ হাজার আদিবাসী আমেরিকান লেনাপি জাতির লোকের বসতি ছিল। ভেরাৎসানো তদানীন্তন ফ্রান্সের রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় এই আবিষ্কার করেছিলেন। আবিষ্কারের পর তিনি এই অঞ্চলের নাম দেন "নুভেল অঁগুলেম" তথা নতুন অঁগুলেম। অঁগুলেম হল ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমভাগে শারঁত দেপার্ত্যমঁ বা জেলার একটি শহর। এখানে প্রথম ইউরোপীয় বসতি স্থাপন শুরু হয় যখন ওলন্দাজরা ১৬১৪ সালে ম্যানহাটনের দক্ষিণ প্রান্তে একটি পশম ব্যবসার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। তারা পরবর্তীতে এই স্থানের নাম দেয় "নতুন আমস্টারডাম"। ওলন্দাজ উপনিবেশের পরিচালক পিটার মেনুইট১৬২৬ সালে ম্যানহাটন দ্বীপটি স্থানীয় লেনাপিদের কাছ থেকে কিনে নেন। কিংবদন্তি রয়েছে, ম্যানহাটন মাত্র ২৪ মার্কিন ডলার মূল্যে বিক্রিত হয়েছিল, যদিও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ১৬৬৪ সালে ব্রিটিশরা শহরটি দখল করে নেয় এবং এর নতুন নাম দেয় নিউ ইয়র্ক। তারা ইংল্যান্ডের ইয়র্ক এবং আলবাবেনির ডিউকের নামানুসারে এই শহরের নাম রেখেছিল। ইঙ্গ-ওলন্দাজ যুদ্ধের শেষে ওলন্দাজরা রান দ্বীপের কর্তৃত্ব পাওয়ার শর্তে নতুন আমস্টারডামের কর্তৃত্ব বিট্রিশদের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন রান দ্বীপের গুরুত্বই বেশি মনে হয়েছিল। ১৭০০ সাল নাগাদ শহরাঞ্চলে লেনাপি জাতির জনসংখ্যা কমতে কমতে ২০০-তে এসে দাড়ায়।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নিউ ইয়র্ক শহরটি বন্দরনগরী হিসেবে প্রভাব অর্জন করে। ১৭৫৪ সালে নিম্ন ম্যানহাটনে ব্রিটেনের রাজা ২য় জর্জের অনুমোদনে কিংস কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এটিই ছিল নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রূপ। মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের সময় এই শহরে বেশ কিছু ছোটখাটো যুদ্ধ সংঘটিত হয় যেগুলোকে একত্রে বলা হয় নিউ ইয়র্ক ক্যাম্পেইন। মহাদেশীয় কংগ্রেস এই নিউ ইয়র্ক সিটিতেই একসাথে মিলিত হয়েছিল এবং ১৭৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেছিল। প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের অভিষেক হয় এই শহরের ওয়াল স্ট্রিটে স্থাপিত ফেডারেল হলে। ১৭৯০ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্খ সিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ছিল।
নগর ও মহানগর এলাকা
নিউ ইয়র্ক ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরগুলো একটি নির্দিষ্ট কাউন্টির ক্ষুদ্র অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক শহরটি নিজেই পাঁচটি পৃথক পৃথক কাউন্টি নিয়ে গঠিত। এই কাউন্টিগুলোকে বরো বলা হয়। শহরটি একসময় মূলত ম্যানহাটন বরো নিয়েই গঠিত ছিল যা হাডসন এবং ইস্ট রিভারের মাঝের একটি দ্বীপে জুড়ে অবস্থিত। ১৮৯৮ সালে আশেপাশের বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় এই শহরের অন্তর্ভুক্ত হয় যেগুলো অন্য চারটি বরো গঠন করেছে। এগুলো হল: কুইন্স, ব্রুকলিন, ব্রঙ্ক্স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। একমাত্র ব্রঙ্ক্স যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমিতে অবস্থিত, বাকি চারটি বারো-ই জলবেষ্টিত। ম্যানহাটন এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড পানি দ্বারা সম্পূর্ণ বেষ্টিত এবং কুইন্স ও ব্রুকলিন লং দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত।[২৮]
কুইন্স: পাঁচটি বরোর মধ্যে কুইন্স বৃহত্তম যার সর্বমোট আয়তন ২৮২.৯ বর্গ কিমি (১০৯.২ বর্গ মাইল)। এটি লং দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত, ব্রুকলিন থেকে নিউটাউন খাঁড়ি এবং দ্বীপের অন্যান্য শহর থেকে ইস্ট রিভার ও লং আইল্যান্ড সাউন্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এটি দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং পূর্বে নাসাউ কাউন্টির সীমানা নির্দেশ করে। ২০০০ সালের তথ্য মোতাবেক এই বরোর জনসংখ্যা ২,২২৯,৩৭৯। পাঁচটি বরোর মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিতীয়, প্রথম ব্রুকলিন।
ব্রুকলিন: এটি নিউ ইয়র্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনবহুল বরো। লং দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। ম্যানহাটন থেকে আপার বে এবং ইস্ট রিভার পার হয়ে এখানে আসতে হয়। মোট আয়তন ১৮২.৯ বর্গ কিমি (৭০.৬ বর্গ মাইল) এবং ২০০০ সালের তথ্যমতে মোট জনসংখ্যা ২,৪৬৫,৩২৬। এর জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন একক শহর থেকে বেশি, অবশ্য সমগ্র নিউ ইয়র্ক শহর বা লস অ্যাঞ্জেল্স ও শিকাগো শহর ধরলে এটি চতুর্থ হয়ে যায়। ১৮৯৮ সালের আগে এটি যখন পৃথক মিউনিসিপ্যালিটি ছিল তখন এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহৎ শহর ছিল।
স্ট্যাটেন আইল্যান্ড: তৃতীয় বৃহৎ বরো এবং এর জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। এটি আপার ঊর্ধ্ব নিউ ইয়র্ক বে এবং নিম্ন নিউ ইয়র্ক বে'র সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভৌতভাবে এটি প্রধানত নিউ জার্সির বেশি কাছে অবস্থিত। নিউ জার্সির সাথে চারটি সেতুর মাধ্যমে এটি যুক্ত। নিউ ইয়র্ক সিটির সাথে এর সংযোগ সাধন করে কেবল ভেরাজানো-ন্যারোস সেতু এবং বিখ্যাত স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ফেরি। এর মোট আয়তন ১৫১.৫ বর্গ কিমি (৫৮.৫ বর্গ মা)। সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত এই বরোর জনসংখ্যা ২০০০ সালের তথ্য মোতাবেক ৪৪৩,৭২৯ যা পুরো শহরের জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ৫ ভাগ।
ব্রঙ্ক্স: চতুর্থ বৃহৎ এবং সর্ব উত্তরের বরো। কেবল এই বরোটিই আমেরিকার মূল ভূমিতে অবস্থিত। অবশ্য এর তিন দিকেও রয়েছে পানি। তিন দিকের জলাশয়গুলো হল পূর্বে লং আইল্যান্ড সাউন্ড, দক্ষিণে হারলেম ও ইস্ট রিভার এবং পশ্চিমে হাডসন নদী। সর্বমোট আয়তন ১০৯ বর্গ কিমি (৪২ বর্গ মা) এবং ২০০০ সালের তথ্য মোতাবেক মোট জনসংখ্যা ১,৩৩২,৬৫০।
ম্যানহাটন: পাঁচটি বরোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম। এর অপর নাম নিউ ইয়র্ক কাউন্টি। মূলত ম্যানহাটন দ্বীপ নিয়ে গঠিত হলেও গভর্নর্স দ্বীপ, রান্ডাল্স দ্বীপ, ওয়ার্ডস দ্বীপ, রুজভেল্ট দ্বীপ, উথান্ট দ্বীপ এবং মার্বল হিল (ব্রঙ্ক্স'র মূল ভূমির প্রান্তে অবস্থিত একটি এনক্লেভ) এই শহরের অন্তর্ভুক্ত। মোট আয়তন ৫৯.৫ বর্গ কিমি (২৩ বর্গ মা) এবং ২০০০ সালের তথ্য মোতাবেক মোট জনসংখ্যা ১,৫৩৭,১৯৫। ১৯১০ সালে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ২.৩ মিলিয়ন যা ১৯৮০ সাল নাগাদ কমে গিয়ে ১.৪ মিলিয়নে দাঁড়ায়। এরপর কিছুটা বেড়েছে। ম্যানহাটনই মূলত নিউ ইয়র্ক শহরের প্রাণ। এখানেই এর বিখ্যাত সব গগনচুম্বী দালানের অধিকাংশ অবস্থিত যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে এম্পায়ার স্টেট দালান (১৯৩১), ক্রিস্লার দালান (১৯৩০) এবং সিটিকর্প সেন্টার (১৯৭৭)। ১০১ তলা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দালান যুগল এই দ্বীপেই অবস্থিত ছিল। নিউ ইয়র্কের নগরায়িত অঞ্চলের মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রাচীন, ঘন এবং সুগঠিত।[২৮]
↑the Mayor, New York City Office of (জানুয়ারি ৮, ২০১০)। "Biography"। New York, City of। মার্চ ১৭, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৮, ২০১০।
↑ কখBureau, U.S. Census। "American FactFinder – Results"। factfinder.census.gov (ইংরেজি ভাষায়)। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৬, ২০১৭।
↑"Say what?", The Economist, Septembr 10, 2011এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Robert P. Jones (13 April, 2016), Religion in New York City’s Five Boroughs, Public Religion Research Instituteএখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Statue of Liberty"। World Heritage। UNESCO World Heritage Centre 1992–2011। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৩, ২০১১।