নাওফিল ইবনে হারিস

নাওফিল ইবন হারিস (মৃত্যু ১৫ হিজরি) রাসুল এর একজন প্রসিদ্ধ সাহাবা ও চাচাত ভাই ছিলেন । তিনি একজন খ্যাতনামা কবি ছিলেন ।[]

নাম ও বংশ পরিচয়

নাওফিল ইবনে হারিসের আসল নাম নাওফিল ও উপনাম আবু হারিস । পিতার নাম হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও মাতার নাম গাযিয়া । নাওফিল কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখার সন্তান ।তিনি মুহাম্মদ এর চাচাতো ভাই ছিলেন ।

বদরের যুদ্ধ ও ইসলাম গ্রহণ

রাসূলুল্লাহ ইসলামের দাওয়াত শুরু করতেই নিকটতম আত্মীয়রা বিরোধিতা করলেও নাওফিলের মনে রাসুল এর প্রতি ভালোবাসা ছিলো । কিন্তু বদরের আগ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি । মক্কার মুশরিকদের চাপে বাধ্য হয়ে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বদরে যান । কিন্তু তিনি কোন মতেই মুহাম্মদ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না ।

বদরে মক্কার কুরাইশ বাহিনীর পরাজয় হলে অন্যদের সাথে তিনিও বন্দী হন । এই বন্দী অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন। অবশ্য অন্য একটি মতে তিনি খন্দক যুদ্ধের বছর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনায় থেকে যান ।[][]

ইসলাম গ্রহণের পূর্ব থেকেই নাওফিল ও আব্বাসের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল । এ কারণে রাসূল তাদের দুজনের মধ্যে দ্বীনী ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন এবং দুজনের বসবাসের জন্য দুটি বাড়ীও বরাদ্দ করেন । বাড়ী দু’টির একটি ছিল মসজিদে নববী সংলগ্ন ‘রাহবাতুল কাদা’ নামক স্থানে এবং অন্যটি ছিল বাজারে─ সানিয়াতুল বিদা এর রাস্তায়।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ

মদীনায় আসার পর সর্ব প্রথম মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন ।

এরপর তায়েফহুনাইনসহ বিভিন্ন অভিযানে যোগ দিয়ে বিশেষ যোগ্যতা ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বিশেষত হুনাইনে তিনি চরম সাহসিকতা দেখান । মুসলিম বাহিনী যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয় তখনও তিনি শত্রুর মোকাবিলায় পাহাড়ের মত অটল থাকেন । এই যুদ্ধে তিনি মুসলিম বাহিনীকে প্রভূত সাহায্য করেন। যাত্রার প্রাক্কালে তিন হাজার নিযা তিনি রাসূল এর হাতে তুলে দেন । রাসূল মন্তব্য করেনঃ ‘আমি যেন দেখছি, তোমার তীরগুলি মুশরিকদের পিঠসমূহ বিদ্ধ করছে ।[]

কবিতা রচনা

নাওফিল ছিলেন একজন ভাল কবি ছিলেন । ইসলাম গ্রহণের পর স্বীয় অনভূতি অনেক কবিতায় প্রকাশ করেছেন। তার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি নিম্নরূপঃ

‘দূরে যাও, দূরে যাও, আমি আর তোমাদের নই।

কুরাইশ নেতাদের দ্বীনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

আমি সাক্ষ্য দিয়েছি, মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই নবী।

তিনি তার প্রভুর কাছ থেকে হিদায়াত ও দিব্যজ্ঞান নিয়ে এসেছেন।

তিনি আল্লাহর রাসূল─তাকওয়ার দিকে আহবান জানান,

আল্লাহর রাসূল কোন কবি নন।

এই বিশ্বাস নিয়ে আমি বেঁচে ‍থাকবো।

কবরেও আমি এই বিশ্বাসের ওপর শুয়ে থাকবো।

আবার কিয়ামতের দিন এই বিশ্বাস নিয়ে ওঠবো।’

বিবাহ

রাসুল নাওফিলকে খুব ভালোবাসতেন । মদীনার এক মহিলার সাথে রাসূল তার বিয়ে দেন । তখন তার ঘরে কোন খাবার নেই। রাসূল নিজের বর্মটি আবু রাফিআবু আইউব এর হাতে দিয়ে এক ইয়াহুদীর নিকট পাঠান । তারা বর্মটি সেই ইয়াহুদির নিকট বন্ধক রেখে বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ত্রিশ সা যব খরীদ করে রাসূলুল্লাহর নিকট নিয়ে আসেন। তিনি তা নাওফিলকে দান করেন তার পারিবারিক খরচের জন্য ।

মৃত্যু

নাওফিল ইবনে হারিস ১৫ হিজরিতে মদীনায় ইনতিকাল করেন এবং খলীফা উমার তার জানাযার নামাযের ইমামতি করেন। মদীনার জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড) 
  2. টীকাঃ সীরাতু ইবন হিশাম ২/৩ 
  3. আল ইসাবা-৩/৫৭৭ 
  4. [টীকাঃ সীরাতু ইবন হিশাম-২/৩] 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!