Schoenobius bipunctifer ab. quadripunctellifera Strand, 1918
হলুদ মাজরা পোকা (ইংরেজি: Yellow stem borer) বা ধানের হলুদ মাজরা পোকা (ইংরেজি: Rice yellow stem borer) ধানের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচ্য।[১] এরা Pyralidae গোত্রের এক ধরনের কীট যার বৈজ্ঞানিক নাম Scirpophaga incertulus (Walker)।
আকার আকৃতি
হলুদ মাজরা পোকার প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী পোকার মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। পূর্নাঙ্গ স্ত্রী পোকার গায়ের রঙ হালকা হলুদ এবং ডানার উপর দুটি পরিষ্কার কালো দাগ বা বিন্দু থাকে।[২] পুরুষ পোকা হালকা বাদামি রঙের। এগুলোর সামনের ডানার কিনারায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূসর বর্ণের ফোঁটা দাগ থাকে। মথগুলো লম্বায় প্রায় ১৩-১৬ মিলিমিটার।[১]
স্বভাব
সব মাজরা পোকার মথই নিশাচর। দিনে এগুলো পাতার নিচে লুকিয়ে থাকে। কেবল রাতে অন্ধকারে এরা চলাফেরা করে। এরা সবাই আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়।
জীবনবৃত্তান্ত
ডিম
পূর্নবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মথ সাধারনত সন্ধ্যার পর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে। উভয় মথেল যৌনমিলন ঘটে কেবল রাতে। মিলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী মথ ডিম পাড়তে শুরু করে। একটি স্ত্রী মথ ধানের পাতার উপরে ৩-৭ টি গুচ্ছে ডিম পাড়ে। প্রতিটি গুচ্ছে ৫০-৮০ টি ডিম থাকে। গুচ্ছগুলো হালকা ধূসর রঙের লোম দিয়ে ঢাকা থাকে। একটি স্ত্রী পোকা সর্বমোট ১০০-৩০০ টি ডিম পাড়তে পারে।
লার্ভা দশা
ডিম পাড়ার ৭-১০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বা শূককীট বের হয়। এগুলোকে শুয়াপোকা বলে। এ সময় এরা পাতার বহিঃত্বক খেয়ে জীবনধারন করে। এক ধরনের সুতার সাহায্যে ঝুলে এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে যায়। অতঃপর পাতার খাপের মধ্যে প্রবেশ করে। এগুলো ২-৩ দিন পর কাণ্ড ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে যায় এবং পরিনত মথ হয়ে বাইরে আসার পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই থাকে। অনুকূল আবহাওয়ায় শতকরা ৭৫ ভাগ শূককীট কাণ্ডের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১০% শূককীট মথ হতে পারে।
পিউপা দশা
কাণ্ডের ভেতরে এরা ৬ বার খোলস বদলায়। প্রতিবার সময় লাগে ৪-৬ দিন। এভাবে শূককীট থেকে মূককীট হতে সময় লাগে ৩-৬ সপ্তাহ। মূককীট রেশমি সূতা দিয়ে তৈরি কোকুন এর মধ্যে থাকে। এটি দেখতে সাদাটে-হলুদ অথবা খয়েরি রঙের এবং লম্বায় প্রায় ১৬ মিলিমিটার। পূর্নাঙ্গ মূককীট কাণ্ডের নিচের দিকে থাকে বলে ধান কাটার পর নাড়ার মধ্যে এগুলোকে পাওয়ায় যায়।
পূর্নাঙ্গ দশা প্রাণী
অনুকূল আবহাওয়ায় মূককীট অবস্থায় ৬-১০ দিন কাটাবার পর তা থেকে পূর্ণ মথ বেরিয়ে আসে। আবহাওয়ার অবস্থাভেদে হলুদ মাজরার জীবনচক্র সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৫২-৭১ দিন। প্রাপ্তবয়স্ক মথ ৪-৫ দিন বেঁচে থাকে। এরা প্রায় ৫-১০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে। বছরে এগুলোর অন্ততঃ পাঁচটি জীবনচক্র বা জেনারেশন সম্পন্ন হয়।
ক্ষতির প্রকৃতি
হলুদ মাজরা পাতার উপরে ও নিচে ডিম পাড়ে ও ডিমের গাদার উপর হালকা ধূসর রংয়ের আবরন পড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে আস্তে আস্তে কাণ্ডের ভিতর প্রবেশ করে ভিতরের নরম অংশ কুড়ে কুড়ে খায়। ক্রমে গাছের ডিগ ও পাতার গোড়া খেয়ে ফেলে ফলে ডিগ মারা যায়। শীষ আসার আগ পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরাডিগ দেখা যায় এবং ডিগ টান দিলে সহজেই উঠে আসে। শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে সাদাশীষ বা মরাশীষ বলে।[৩]
দমন
হলুদ মজরা পোকা দমনে কীটপতঙ্গের রেসিস্টেন্স বিরোধী নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সিস্টেমিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ধানের চারা লাগানোর ২০ দিন পর প্রথম প্রয়োগ করতে হবে বায়ার ক্রপ সাইন্স এর "বেল্ট এক্সপার্ট" প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিগ্রাম, প্রতি একরে ১০০ মিলিগ্রাম কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। অথবা সিনজেনটা কোম্পানির মাইনেকটো এক্সটা ব্যবহার করতে পারেন হলুদ মাথা মাজরা পোকার দমনে, ১০ লিটার পানিতে ১ মিলিগ্রাম, একরে ২০ মিলিগ্রাম।
বেল্ট এক্সপার্ট দ্বিতীয়বার প্রয়োগ ধান লাগানো ৪৫ থেকে ৫০ দিন পর।
এছাড়াও বায়ার ক্রপ সাইন্সের নতুন কীটনাশক ভায়াগো প্রতি লিটারে ০.৪ মিলিগ্রাম, একরে ৮০ মিলিগ্রাম হারেও ব্যবহার করতে পারেন।