দ্য ভয়েজ অব দ্য ডন ট্রেডার[ক] ১৯৫২ সালে জিওফ্রি ব্লিস কর্তৃক প্রকাশিত সি.এস. লিউইসের একটি কাল্পনিক শিশুতোষ উপন্যাস। এটি দ্য ক্রনিকলস্ অব নার্নিয়ার (১৯৫০–১৯৫৬) উপন্যাস ধারাবাহিকের সাতটির মধ্যে তৃতীয় প্রকাশিত উপন্যাস এবং প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই লিউইস ১৯৫০ সালে বইটি লেখা সম্পন্ন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মতো এটিরও অলঙ্করণ করেন পউলিক বেইনিস। এটি একমাত্র নার্নিয়ান বই, যার কোন প্রধান খলনায়ক নেই।
লিউইস জিওফ্রি করবেটকে বইটি উৎসর্গ করেছিলেন।
কাহিনী-সংক্ষেপ
সবার ছোট দুই পেভেনসি শিশু লুসি ও এডমন্ড এখন তাদের বিরক্তিকর চাচাত ভাই ইউস্টাচ স্ক্রাবের সাথে থাকছে যেখানে তাদের বড় ভাই পিটার একটি পরীক্ষার জন্য প্রফেসর ডিগোরি কাইর্কির কাছে পড়াশোনা করছে এবং তাদের বড় বোন সুজান তাদের বাবা-মায়ের সাথে আমেরিকা ভ্রমণ করছে। এডমন্ড, লুসি এবং ইউস্টাচকে সমুদ্রে একটি জাহাজের ছবি মধ্য দিয়ে নার্নিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় (ছবিটি অবহেলিতভাবে অতিথি শয়নকক্ষে টাঙানো ছিল, যেখানে লুসি থাকত। ছবিটি ইউস্টাচে বাবা-মায়ের দেওয়া অযাচিত উপহার ছিল)। তারা তিনজনই সাগরে ডন ট্রেডার নামক জাহাজের নিকট গিয়ে পড়ে এবং তাদের জাহাজটিতে উঠানো হয়।
ডন ট্রেডার হলো নার্নিয়ার রাজা দশম ক্যাস্পিয়ানের, যাকে প্রিন্স ক্যাস্পিয়ান উপন্যাসে এডমন্ড ও লুসি (পিটার ও ও সুজানের সাথে) সিংহাসন অর্জনে সাহায্য করেছিল। জাহাজে আরও উপস্থিত ছিল লর্ড দ্রিনিয়ান (ডন ট্রেডারের ক্যাপ্টেন) এবং ফার্স্ট মেট রিঞ্চ।
নার্নিয়ায় ততদিনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ক্যাস্পিয়ান তার অভিষেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নার্নিয়ার সাত মহান লর্ড অর্গজ, বার্ন, মাভরামর্ন, অক্টেশিয়ান, রেস্টিমার, রেভিলিয়ান এবং রুফকে খোঁজার উদ্দ্যেশ্যে অভিযানে বের হয়েছে। নার্নিয়ায় ফিরে আসতে পেরে লুসি ও এডমন্ড আনন্দিত, কিন্তু নার্নিয়ার আগে না আসায় এবং পুর্বে এই বিকল্প মহাবিশ্বর অস্তিত্ব নেই বলে লুসি ও এডমন্ডকে উপহাস করায় সে এখন কম উদ্যমী। জাহাজে কথা বলা ইদুর রিপিসিপও ছিল। ইউস্টাচ রিপিসিপকে ক্ষেপালে ইদুরটির ঝগটাটে স্বাভাবের অনেকটাই প্রকাশ পায়।
তারা প্রথমে লুন আইল্যান্ডে নামে, যেটা মুলত নার্নিয়ারই একটি অঞ্চল, কিন্তু নার্নিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। নার্নিয়ার আইনে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এখানে দাস কেনাবেচা হয়। এক দাস ব্যাবসায়ী ক্যাস্পিয়ান, লুসি, এডমন্ড, ইউস্টাচ ও রিপিসিপকে পণ্য হিসেবে আটক করে এবং এক ব্যক্তি দাস বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাদের ক্রয় করেন। পরে জানা যায় তিনি হলেন প্রথম হারিয়ে যাওয়া লর্ড, লর্ড বার্ন। মিরাজ কর্তৃক নার্নিয়া থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি লুন আইল্যান্ডে আসেন এবং এক নারীকে বিয়ে করেন। ক্যাস্পিয়ান নিজের পরিচয় দিলে বার্ন তাকে রাজা হিসেবে স্বীকার করে। ক্যাস্পিয়ান নদর্নিয়ার জন্য লুন আইল্যান্ড পুণরুদ্ধার করে এবং লর্ড বার্নকে লোভী শাসক গাম্পাসের স্থলাভিষিক্ত করে। ক্যাস্পিয়ান বার্নকে ডিউক অব দ্য লুন আইল্যান্ডস নাম দেয়।
তারা দ্বিতীয় দ্বীপে গেলে একটি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর জাহাজকে পুনরায় সমুদ্রে নামানোর উপযোগী করতে সকলের সাথে কাজ করা এড়ানোর জন্য ইউস্টাচ দল থেকে বেরিয়ে যায়। হঠাৎ প্রবল বর্ষণ শুরু হলে সে একটি মৃত ড্রাগনের গুহায় আশ্রয় নেয়। ড্রাগনের গুপ্তধন তার লোভ জাগিয়ে তোলে। সে সোনা ও রত্ন দিয়ে নিজের পকেট পূর্ণ করে এবং একটি বড় সোনার ব্রেসলেট পরিধান করে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে সে এক ড্রাগনে পরিণত হয়। ড্রাগন হয়ে সে বুঝতে পারে তার পুর্ববর্তী আচরণ কতটা খারাপ ছিল। সে সফলতা ছাড়াই নিজের ড্রাগনের চামড়া খুলে ফেলার চেষ্টা করে। তার পুনরায় মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে আসলান তাকে সাহায্য করতে পারে, যদিও প্রক্রিয়াটি অনেক যন্ত্রণাদায়ক। ক্যাস্পিয়ান ব্রেসলেটটি চিনতে পারে। এটি হারিয়ে যাওয়া লর্ডদের একজন লর্ড অক্টেশিয়ানের। তারা সন্দেহ করে ড্রাগনটি অক্টেশিয়ানকে হত্যা করেছে অথবা হতে পারে ড্রাগনটিই অক্টেশিয়ান। আসলান ইউস্টাচকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে এবং তার অভিজ্ঞতাগুলোর প্রেক্ষিতে এখন সে অনেক ভালো মানুষ।
তারা সামান্যের জন্য এক সমুদ্র দৈত্যের তাদের জাহাজ ডোবানো থেকে রক্ষা পায় এবং এবং ডেথ ওয়াটার আইল্যান্ডে গিয়ে নামে। এর মধ্যে পড়া সকল কিছুকে সোনায় রুপান্তরিত করা এক পানির উৎসের জন্যই দ্বীপটির এমন নামকরণ করা হয়েছে। এতে লর্ড রেস্টমারকে সোনার মুর্তি অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর তারা ডাফার্স আইল্যান্ডে নামে, যেখানে লুসি ডাফার্সদের (পরবর্তীতে ডুফলিফাডস) অনুরোধে তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে থাকার জাদু সরিয়ে নেয় এবং যেই জাদুকর এই জাদু করেছে তার সাথে বন্ধুত্ব করে। স্বপ্ন সত্যি হওয়া দ্বীপ, চিরস্থায়ীভাবে অন্ধকারে লুকানো থাকার কারণে যাকে ডার্ক আইল্যান্ডও বলা হয় – তারা সেখানে মরিয়া হয়ে ওঠা লর্ড রুফকে উদ্ধার করে। এরপর তার তারাদের দ্বীপে পৌছায়, যেখানে তারা জাদুর ঘুমে নিমগ্ন থাকা অবস্থায় বাকি তিনজন হারোনো লর্ডকে খুঁজে পায়। দ্বীপটিতে বাস করা খসে পড়া তারা রামান্ডু জানায় তাদের জাগিয়ে তোলার একমাত্র উপায় হচ্ছে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে সেখানে একজন নাবিককে রেখে আসা।
ডন ট্রেডার এমন এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছায়, যেখানে মৎসমানবদের বাস। এক জলমানব তাকে লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়েছে মনে করে পানিতে ঝাঁপ দিলে রিপিসিপ আবিষ্কার করে সেখানকার পানি লবনাক্ত হওয়ার পরিবর্তে মিষ্টি স্বাদের। অবশেষে পানি এত অগভীর হয়ে পড়ে যে জাহাজ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্যাস্পিয়ান একটি নৌকা নামানোর আদেশ দেয় এবং ঘোষণা করে রিপিসিপকে নিয়ে সে পৃথিবীর শেষপ্রান্তে যাবে। নাবিকের এই বলে বাঁধা দেয় যে, নার্নিয়ার রাজা হিসাবে তাদের ছেড়ে যাওয়ার কোন অধিকার তার নেই। ক্যাস্পিয়ান রাগান্বিত হয়ে তার কামরায় প্রবেশ করে, কিন্তু পরে ফিরে এসে জানায় তার কক্ষে আসলান এসেছিল এবং তাকে বলেছিল শুধুমাত্র লুসি, এডমন্ড, ইউস্টাচ এবং রিপিসিপ সামনে এগিয়ে যাবে।
তারা চারজন ছোট একটি নৌকায় চড়ে শাপলা ভর্তি একটি সমুদ্রের মধ্য দিয়ে আকাশ পর্যন্ত প্রসারিত হওয়া এক পানির দেওয়ালের কাছে উপস্থিত হয়। রামান্ডুর শর্ত পূরণ করে রিপিসিপ তার কোরাকলের দাঁড় টেনে ঐ পানির দেওয়ালের ওপর উঠে যায়, তাকে আর কখনো নার্নিয়ায় দেখা যায়নি। এডমন্ড, ইউস্টাচ এবং লুসি একটি ভেড়া খুঁজে পায়, যে আসলানে রুপান্তরিত হয়ে এডমন্ড এবং লুসিকে জানায় তারা আর নার্নিয়ায় ফিরে আসতে পারবে না। তাদেরকে তাদের নিজ জগতে আসলানকে 'অন্য নামে' চেনা শিখতে হবে। সে তারপর তাদের তিনজনকে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়।
তাদের নিজেদের জগতে তারা প্রত্যেকেই ইউস্টাচ কীভাবে বদলে গেছে সেটা নিয়ে আলোচনা করে এবং "তোমারা আর তাকে কখনই একই বালক হিসেবে দেখবে না"। যদিও তার মা মনে করে এডমন্ড ও লুসি তার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে এবং তারা তাকে "সাধারণ ও বিরক্তিকর" করে তুলেছে।[১]
প্রধান চরিত্র
- লুসি পেভেনসি – চার পেভেনসি শিশুদের মধ্য সবার ছোট।
- এডমন্ড পেভেনসি - দ্বিতীয় কনিষ্ঠ পেভেনসি।
- ইউস্টাচ স্কার্ব – পেভেনসিদের এক চাচাতো ভাই। এডমন্ড ও লুসি তাদেরই বাড়িতে রয়েছে, যেখানে ইউস্টাচ তার বাবা-মায়েরনসাথে থাকে।
- দশম ক্যাস্পিয়ান – নার্নিয়ার রাজা।
- রিপিসিপ – একজন কথা বলা বীর ইদুর। সে ক্যাস্পিয়ানের প্রধান মিত্রদের একজন।
- লর্ড দ্রিনিয়ান – ডন ট্রেডারের ক্যাপ্টেন।
- নার্নিয়ার সাত মহান লর্ড – ক্যাস্পিয়ান এই সাত চরিত্রেরই সন্ধান করছে। সাতজনের মধ্যে দুইজন মৃত এবং তিনজন জাদুর ঘুমে নিমগ্ন। গল্পে শুধুমাত্র লর্ড বার্ন ও রুফের অংশগ্রহঙ লক্ষ্য করা যায়।
- রামান্ডু – এক "প্রাক্তন তারা" যে আগুনের বেরির সাহায্যে তারুণ্য ফিরে পায়।
- রামান্ডুর কন্যা – রামান্ডুর কন্যা ও নার্নিয়ার ভবিষ্যৎ রাণী। সে ক্যাস্পিয়ানের স্ত্রী এবং রিলিয়ানের মা।
- পাগ – দাস ব্যবসায়ী এবং লুন আইল্যান্ডের জলদস্যূ। সে গল্পের প্রধান চরিত্রদের বন্দী করেছিল।
- গাম্পাস – লুন আইল্যান্ডের গভর্নর ও সেখানে দাস প্রথার প্রবর্তক। ক্যাস্পিয়ান তাকে পদচ্যুত করে।
- কোরিয়াকিন – জাদুকর (এবং তারা)। সে তার করা কোন অজানা অজানা কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ডাফলপাডসদের শাসন করে।
টীকা
তথ্যসূত্র
- ↑ The Voyage of the Dawn Treader।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি