দ্বিতীয়লিওপোল্ড[১] (৯ এপ্রিল ১৮৩৫ – ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৯) ১৮৬৫ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বেলজীয় রাজা এবং ১৮৮৫ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত কঙ্গো ফ্রি স্টেট এর অধিপতি এবং একচ্ছত্র শাসনকর্তা ছিলেন।
তিনি প্রথম লিওপোল্ডের দ্বিতীয় ও জ্যেষ্ঠ জীবিত পুত্র। তিনি ব্রাসেলসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬৫ সালে তিনি বেলজিয়ামের সিংহাসনে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪৪ বছর রাজত্ব করেন, যা কোনও বেলজীয় সম্রাটের দীর্ঘতম রাজত্ব। তিনি কোন জীবিত বৈধ পুত্র না রেখেই মৃত্যুবরণ করেন। বেলজিয়ামের বর্তমান রাজা, তার ভাতিজা ও উত্তরাধিকারী প্রথম আলবার্ট এর বংশধর।
লিওপোল্ড কঙ্গো ফ্রি স্টেট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একচ্ছত্র অধিকর্তা ছিলেন, এটি ছিল তার নিজের উদ্যোগে পরিচালিত একটি ব্যক্তিগত প্রকল্প। তিনি হেনরি মর্টন স্ট্যানলির সাহায্যে কঙ্গো (বর্তমান গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র) অধিকার করেন। ১৮৮৪–১৮৮৫ সালের বার্লিন সম্মেলনে, ইউরোপের ঔপনিবেশিক দেশগুলো, কঙ্গো ফ্রি স্টেট এর স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার উন্নতির প্রতিশ্রুতির সাপেক্ষে, তার অধিকারে প্রেরণের দাবি অনুমোদন করে।[২] লিওপোল্ড এই শর্তগুলো উপেক্ষা করেন এবং তার ব্যক্তিগত লাভের জন্য ভাড়াটে বাহিনী ব্যবহার করে কঙ্গো পরিচালনা করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে আইভরি সংগ্রহ করে এবং ১৮৯০-এর দশকে প্রাকৃতিক রাবারের দাম বৃদ্ধির পর, স্থানীয় জনসাধারণকে জোরপূর্বক রাবার চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বাধ্য করে এই অঞ্চল থেকে ব্যাপক ধনসম্পদ আহরণ করেছিলেন।
কঙ্গো ফ্রি স্টেট এ লিওপোল্ডের প্রশাসনের সহজাত বৈশিষ্ট্যই ছিল অত্যাচার , নির্যাতন, হত্যা ও কুখ্যাত পদ্ধতিগত বর্বরতা। ১৮৯০ সালে, জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস, কঙ্গো ফ্রি স্টেট এ দ্বিতীয় লিওপোল্ড এর প্রশাসন বর্ণনা করার জন্য ক্রাইমস এগেইন্সট হিউম্যানিটি বা "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" বাক্যাংশটি প্রথম ব্যবহার করেন।[৩] তৎকালীন কঙ্গোতে, রাবারের কোটা পূরণ করতে না পারলে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের হাত কেটে ফেলা হতো এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কঙ্গোলিয় মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এ সম্পর্কিত ঔপনিবেশিক বর্ণনাসমূহে সাধারণত লিওপোল্ডের কারণে যে গণমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল তার বদলে কঙ্গোতে তার আধুনিকীকরণ কর্মকাণ্ডের উপর অধিক জোর দিতে দেখা যায়।
এই তথ্যসমূহ সেই সময়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন কর্তৃক ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ১৯০৪ সালের কেসমেন্ট রিপোর্ট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আধুনিক অনুমান অনুযায়ী, মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষ থেকে থেকে দেড় কোটি, অধিকাংশের মতেই সংখ্যাটি ১ কোটির কাছাকাছি।[৪][৫][৬] কিছু ইতিহাসবিদ এই পরিসংখ্যানের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন নির্ভরযোগ্য আদমশুমারির অভাব, গুটিবসন্ত এবং আফ্রিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিসের কারণে ব্যাপক মৃত্যুহার এবং রবার শোষণকান্ড পরিচালনার দায়িত্বে মাত্র ১৭৫ জন প্রশাসনিক প্রতিনিধি নিয়োজিত থাকার তথ্য। ১৯০৮ সালে, মৃত্যুর বিবরণ এবং কঙ্গো রিফর্ম অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপের কারণে বেলজীয় সরকার, লিওপোল্ড এর কাছ থেকে কঙ্গোর প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে নতুন অঞ্চল হিসেবে বেলজিয়ান কঙ্গোর প্রকাশ ঘটে।
প্রারম্ভিক জীবন
লিওপোল্ড ১৮৩৫ সালের ৯ এপ্রিল ব্রাসেলসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেলজিয়ামের তৎকালীন সম্রাট প্রথম লিওপোল্ড এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফ্রান্সের রাজা লুই ফিলিপের কন্যা লুই অফ অর্লেয়ঁ এর দ্বিতীয় সন্তান।[৭]১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লব তার মাতামহ লুই ফিলিপকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।[৮] দ্বিতীয় লিওপোল্ড ও ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী রানি ভিক্টোরিয়া পারিবারিকভাবে সম্পর্কিত, কারণ লিওপোল্ডের পিতা এবং ভিক্টোরিয়ার মাতা পরস্পরের ভাইবোন।[৯] ১৮৫০ সালে লুই ফিলিপ মৃত্যুবরণ করেন। লিওপোল্ডের মাতা, তার নিজের পিতার মৃত্যুতে গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। একই বছর তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, যেসময় লিওপোল্ডের বয়স ছিল ১৫ বছর।[১০]
প্রারম্ভিক রাজনৈতিক জীবন
লিওপোল্ডের জ্যেষ্ঠ ভাই, পূর্ববর্তী যুবরাজ লুই ফিলিপ, লিওপোল্ডের জন্মের আগের বছর মৃত্যুবরণ করেন। ফলে, লিওপোল্ড তার জন্মের সময় থেকেই বেলজিয়ামের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। নয় বছর বয়সে, লিওপোল্ড ডিউক অফ ব্রাবান্ট উপাধি লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীতে সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। তিনি পরিশেষে লেফটেন্যান্ট-জেনারেল পদ লাভ করেন এবং ১৮৬৫ সালে তার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া অবধি তিনি সেনাবাহিনীতেই দায়িত্বরত থাকেন।
লিওপোল্ড ১৮৫৫ সালে বেলজিয়ান সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি সিনেটের কার্যক্রমে সক্রিয় আগ্রহ গ্রহণ করেন, বিশেষত বেলজিয়ামের উন্নয়ন এবং এর বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে এবং তিনি এসময় বেলজিয়ামের উপনিবেশসমূহ অধিগ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে শুরু করেন। লিওপোল্ড ১৮৫৪ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে বিদেশ ভ্রমণ করেন। এসময় তিনি ভারত, চীন, মিশর এবং আফ্রিকারভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের দেশসমূহ পরিদর্শন করেন। ১৮৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন এবং লিওপোল্ড, ১৭ ডিসেম্বর, ৩০ বছর বয়সে সম্রাট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
কঙ্গো ফ্রি স্টেট
কঙ্গো ফ্রি স্টেট অধিকারকরণ
শোষণ, নৃশংসতা এবং মৃতের সংখ্যা
কঙ্গো ব্যবস্থাপনার সমালোচনা
কঙ্গো পরিত্যাগ
মৃত্যু
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
↑ওলন্দাজ: Leopold Lodewijk Filips Maria Victor; ফরাসি: Léopold Louis Philippe Marie Victor; জার্মান: Leopold Ludwig Philipp Maria Viktor