দীন শরৎ (১৮৮৭-১৯৪১) নেত্রকোনা জেলার বাউল গায়ক ও গীতিকার ও সুরকার, যার পুরো নাম ছিলো ‘শরৎচন্দ্র দেবনাথ’, আবার কোথাও ‘শরৎচন্দ্র নাথ’, আবার কারো মতে ‘শরৎচন্দ্র দাস’ জানা গেলেও তিনি সবার কাছে ‘অন্ধ কবি দীন শরৎ’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন।[১] [২]
জন্ম ও কর্মজীবন
দীন শরৎ চন্দ্র নাথ নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন সাজিউড়া গ্রামে সাধারণ নাথ পরিবারে ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাম কুটীশ্বর নাথ। তিনি ছিলেন একজন তাঁর পিতা কুটীশ্বর নাথ ছিলেন একজন খ্যাতিমান বাউল শিল্পী ও সাধারণ কৃষক।[৩] শরৎ চন্দ্র নাথ যখন মাতৃগর্ভে তখন তার বাবা কুটীশ্বর নাথ অজানা রোগে মুত্যু বরণ করেন। তাই শরৎ চন্দ্র নাথ জন্মের পর থেকে যেমন ছায়াহীন ছিলেন তেমনি পিতা-মাতার ¯েœহ-মমতা থেকেও মায়াহীন ছিলেন। পরিবারের কেউ হয়তো দায়িত্ববোধের ভেতর থেকে গৌরী আশ্রমের হাওলা করেছিলেন তাকে। যে সময়ে একটা প্রান্তিক ছেলে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়েঘুরে সে সময়ে শরৎ চন্দ্র নাথ ছিলেন সিদ্ধগুরুর ধর্মগড়ে । তাই গুরু সচ্চিদানন্দ শ্রীশ্রীমৎ ভারত ব্রহ্মচারীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ঠাঁই নিলেন দীন শব্দের আকরে। গুরুবিদ্যায় অন্তসার বালকটি ভাবের সুরা পান করে পৌরষত্বের অধিকারী হলে সুর আর কথার পরিপক্বতার বাকি থাকে কই। গুরুবিদ্যাও অক্ষরজ্ঞানের উপরে ছিল বিধায় স্বহস্তে ওঠেছিল কাগজ কলমের ছাঁক-জালি। যৌবনের ঔজ্জ¦লতায় আহরিত সূধা যেন ফিনকি দিয়ে ওঠেছিল তার চারা বপন বীজতলায়। আর জ্ঞানগুরু তার নিষ্ঠাতেই বিনিময় করেছিলেন তাছাওফের ঐশ্বরিক আলো।
দীন শরৎ অন্ধ ছিলেন না, তার অনেক প্রমাণ নিয়েছেন সজলকান্তি সরকার। যারা দীন শরৎকে সাক্ষাতে পেয়েছিলেন, সজলকান্তি সরকার পেয়েছেন তাদের সাক্ষাত। তিনি এই প্রমাণকে আরও দৃঢ় করেছেন কয়েকটি ভিডিও ফোটেজের মাধ্যমে। যে বা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষদর্শী ছিলেন তাদের চ্যালেঞ্জিং কতটা শক্ত তা ফোটেজটি দেখলে অনুমিত হয়। কারণ তিনি দীন শরৎ’র কিঞ্চিৎ জীবন কথা হলেও সঠিকভাবে তুলে এনছেন। তার মাধ্যমে দীন শরৎ’র প্রায় পুরোপরি গানও ওঠে এসেছে উল্লেখিত গ্রন্থে।
দীন শরৎ’র বাউল গান ও এসলাম সঙ্গীতে রচিত প্রত্যেকটি গান গুরুধারা ও শিষ্যধারা সংবলিত দুটি গ্রন্থ। বিশেষ করে তার রচিত এসলাম সঙ্গীতে অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় ফোটে ওঠেছে। গান রচনায় তিনি কখনো অবুঝ শিষ্য হয়ে কোমল হৃদয়ের আরতি পেশ করেছেন গুরুর নিকট আবার কখনো বিজ্ঞ গুরুর পরিচয় দিয়ে শিষ্যের মনোবাসনা পূরণ করে দিয়েছেন। বাউল গান রচনায় এ যেন নতুন কোন ধারার প্রবর্তন সৃষ্টি করেছেন দীন শরৎ। দীন শরৎ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে ইহলোক ত্যাগ করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ