দরিয়াও দুর্গ |
---|
ধরন | দুর্গ |
---|
অবস্থান | কান্তদুয়ার গ্রাম |
---|
নিকটবর্তী শহর | রংপুর |
---|
অঞ্চল | ৬০০ একর |
---|
প্রতিষ্ঠাকাল | তেরো শতকের প্রথমদিকে |
---|
প্রতিষ্ঠাতা | নীলাম্বর |
---|
নির্মাণের কারণ | উত্তর-পূর্ব বাংলায় মুসলিমদের অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা |
---|
মালিক | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর[১] |
---|
দরিয়াও দুর্গ মাটির তৈরি একটি প্রাচীন দুর্গ। রংপুরের কান্তদুয়ার নামক গ্রামে করতোয়া নদীর তীরে দুর্গটির অবস্থান। তৎকালীন কামরূপ রাজ্যের রাজা নীলাম্বরের আদেশে দুর্গটি নির্মাণ করা হয়।[২]
পটভূমি
১৩শ শতাব্দীর শুরুর দিকে উত্তর বঙ্গ মুসলমানদের শাসনাধীনে চলে আসে। তারা তাদের রাজ্যের সীমানা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে থাকে। এতে উত্তর-পূর্ব বাংলা ও আসামের হিন্দু রাজারা উদ্বিগ্ন হন এবং রাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধির তাগিদ অনুভব করেন। এ তাগিদ থেকেই তারা করতোয়া নদীর তীরে দেয়াল ও দুর্গ নির্মাণ করেন। এগুলোর মধ্যে রংপুরের কান্তদুয়ার, দেবীপুর, বাটাসনের কাছে দরিয়াও দুর্গ, দিনাজপুরের বেলওয়ারের কাছে বড় পাইকার গড়, ডোমারের কাছে ময়নামতীর গড় ও ধর্মপাল গড়, দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট দুর্গ, পঞ্চগড়ে ভিতরগড় দুর্গ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দরিয়াও দুর্গও এরকমই একটি দুর্গ।[২]
অবকাঠামো
দরিয়াও দুর্গ প্রায় ৬০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। আগে এটি তিন সারি ইটের দেয়ালে বেষ্টিত ছিল বলে মনে করা হয়। বর্তমানে সেখানে সাতটি পরিখা রয়েছে, যা দেখে মনে হয় সেখানে সাতটি দেয়াল ধারাবাহিকতায়ভাবে ছিল। তবে দুর্গের সীমানার বেশ কিছু স্থানে কোনো দেয়াল নেই। ধারণা করা হয়, এগুলো প্রবেশপথ হিসেবে এবং পরিখাতে পানি যাওয়া আসার পথ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। ভেতরের পরিখাটিতে দক্ষিণ দিকে ঢালু। সেখানে এটি সরু ও লম্বা দ্বীপকে ঘিরে রাখা বাঁধের নিচে একটি জলাধার সৃষ্টি করেছে। পরিখাটিতে এখনো পানি রয়েছে।
দেয়াল বেষ্টিত অংশের মধ্যে কয়েকটি ঢিবি এবং বেশ কিছু পুরাতন ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। এই ভবনগুলোর মধ্যে একটিকে রাজবাড়ি বা রাজার প্রাসাদ নামে ডাকা হয়। অধিবাসীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ অঙ্গনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় ভেতরের দেয়াল থেকে একটু সামনে একটি উঁচু পথ নির্মাণ করা হয়। এর কাছেই জলাশয়ের অপর পারে ছোট একটি মাটির ঢিবি দেখা যায়। এটি কোনো সুফি দরবেশের কবর অথবা পুরানো কোনো খানকা হয়ে থাকতে পারে।
দুর্গ থেকে দক্ষিণ দিকে একটি পুরাতন পুকুর রয়েছে। এই পুকুরের পাড়ে পানির স্তর পর্যন্ত নামানো একটি সিড়ি আছে। এই সিড়িটিকে বলা হয় রাজার ঘাট বা রাজার অবতরণের স্থান। রাজার ঘাট থেকে পশ্চিম দিকে আরো একটি সিড়ির মতো কাঠামো রয়েছে। এটি রাণীর ঘাট বা রাণীর অবতরণের স্থান নামে পরিচিত।[২]
বর্তমান অবস্থা
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্গটির বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয়। অনেক জমি স্থানীয় কৃষকদের দখলে চলে গিয়েছে। সীমানা প্রাচীরের কোনো অস্তিত্ব দৃশ্যমান নেই। পুকুরের রাণীর ঘাটটি বেশ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাহ্যিকভাবে দুর্গটিকে এখন একটি 'অবয়বহীন মাটির ঢিবি' বলে মনে হতে পারে।[২]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ