টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো কুটিরশিল্প। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এই ঐতিহ্যবাহী শাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় তৈরী হয় এবং এই জেলার নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে।[১]
টাঙ্গাইল তাঁতশিল্পের উৎপত্তি ও প্রসার
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে টাঙ্গাইল তাঁত শিল্পের ব্যাপ্তি পপ্রসারিত হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা মূলত ঐতিহ্যবাহী মসলিন তাঁতশিল্পীদের বংশধর। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার ধামরাই ও চৌহাট্টায়। তারা দেলদুয়ার, সন্তোষ ও ঘ্রিন্দা এলাকার জমিদারদের আমন্ত্রণে টাঙ্গাইল যায় এবং পরবর্তিতে সেখানে বসবাস শুরু করে। শুরুতে তারা নকশাবিহীন কাপড় তৈরী করত। ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের ল্যাঞ্চাশায়ারের তৈরী কাপড় বর্জন করা। এই সময়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) এর তাঁত শিল্পের প্রসার লাভ করে। ১৯২৩-২৪ সালে তাঁতের কাপড়ে নকশা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৩১-৩২ সালে শাড়ি তৈরীর জন্য জাকুয়ার্ড তাঁত প্রবর্তন করা হয়।[১]
টাঙ্গাইল তাঁতশিল্পের বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান অবস্থা
টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প কুটির শিল্পও এবং তাঁতগুলো তাঁতীদের বাড়ির অভ্যন্তরে বসানো হয়। ৭২% কুটিরশিল্প পাঁচটি তাঁতের সমন্বয়ে গঠিত, ১১% তাঁত ছয় থেকে দশটি তাঁতের সমন্বয়ে গঠিত এবং ৬% তাঁত এগার থেকে বারোটি তাঁতের সমন্বয়ে গঠিত এবং অবশিষ্ট ১১% কুটিরশিল্প বারো এর অধিক তাঁতের সমন্বয়ে গঠিত। বারো এর অধিক তাঁত সংবলিত কুটিরশিল্পগুলো ছোট কারখানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১]
১৯৯২ সালে, টাঙ্গাইল জেলায় ১ লাখের অধিক তাঁত ছিল এবং ১৫০০০০ তাঁতী সদর, কালিহাতি, নাগরপুর ও বসিল উপজেলায় বসবাস করত। ২০০৮ সালে ১০০০০০টি ছোট ও বড় কারখানায় ৩৭২২২টি তাঁত ছিল এবং ৭০০০০ তাঁতী টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেসিক সেন্টার এর অধীনে কাজ করত।[২] ২০১৩ সালের এক্টি শুমারীতে পাওয়া তথ্য অনুজায়ী, টাঙ্গাইল জেলায় অই সময়ে ৬০০০০ তাঁত ছিল। এর মধ্যে ৮৩০৫ টি পিট তাঁত, ৫১১৪১ টি চিত্তরঞ্জন তাঁত এবং ৮৯২ টি পাওয়ার তাঁত।
টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প এর একক বৈশিষ্টর জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদ্দিত। টাঙ্গাইল শাড়ির তাতীরা বিশেষ দক্ষতার মাধ্যম টাংগাইল শাড়ি তৈরী করে। পাটাইল ইউনিয়নের বসাক সম্প্রদায় সব থেকে পুরোন সম্প্রদায় যারা এখপ্নো আদি ও অইতিহ্যবাহীতার সাথে তাঁতের শাড়ি তৈরী করে। এই শাড়ি তারা বাজিতপুর ও করটিয়া হাটে সপাহে দুই দিন বিক্রি করে। [১]
বর্তমানে সর্বমোত ৩২৫০০০ জন তাঁতী, মালিক ও ব্যবসায়ী-ক্রেতা এই পেশার সাথে সম্প্রিক্ত। ৩০০-২০০০০ টাকাইয় টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি হয়ে থাকে।
টাঙ্গাইল শাড়ির প্রকারভেদ
- সুতি শাড়ি
- আধা-রেশমি শাড়ি (হাফ সিল্ক শাড়ি)
- সফট সিল্ক শাড়ি
- সুতি জামদানি শাড়ি
- গ্যাস-মারচেন্ডাইযড শাড়ি
- টুইস্টেড-সুতি শাড়ি
- ডাংগ্য শাড়ি
- বালুচুরি শাড়ি
[৩]
রপ্তানি
টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যপক চাহিদা আছে এবং ইন্ডিয়া, আমেরিকা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশেষত টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতে খুব সমাদৃত। প্রতি সপ্তাহে ভারতে ৫০০০০ টাঙ্গাইল শাড়ি রপ্তানি হয়। [১]
বিদ্যমান সমস্যা
তাঁত, রঙ ও অন্যান্য কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও পরিবহন সুবিধার অব্যবস্থার কারণে টাংগাইল তাঁতশিল্প ঝুকির সম্মুখিন হচ্ছে। এ কারণে অনেক তাঁতী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে এবং অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
[২][৪]
তথ্যসূত্র