জেরুসালেম সংলক্ষণ একটি বিরল ধর্মীয় মানসিক অসুস্থতা। এটি কোন একক ধর্ম বা মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু ইহুদি, খ্রিস্টান এবং বিভিন্ন পটভূমির মুসলমানদের প্রভাবিত করেছে। একে ইংরেজিতে জেরুসালেম সিনড্রোম নামে ডাকা হয়।
ইতিহাস
জেরুসালেম সংলক্ষণকে আগে বিবেচনা করা হত সাময়িক স্নায়ু-বৈকল্য সংক্রান্ত রোগ হিসেবে। তখন এর নাম ছিল জেরুসালেম স্কোয়াবল পয়জন বা fièvre Jérusalemienne"।[১] ১৯৩০ সালে জেরুসালেমেরই মনোচিকিৎসক হেইঞ্জ হারম্যান সর্বপ্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানের আঙ্গিকে রোগ হিসেবে একে ব্যাখ্যা করেন। হেইঞ্জ হারম্যান হলেন ইসরায়েলের আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।[২]
ধরন ও উপসর্গ
চিরায়ত জেরুসালেম সংলক্ষণ বা জেরুসালেমে ভ্রমণকালে কোনো ব্যক্তির তীব্র মনোব্যাধির শিকার হওয়া এবং জেরুসালেম থেকে প্রস্থান করার পর দ্রুতই সুস্থ্য হয়ে যাওয়া চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনও একটি বিতর্কিত বিষয়।
[৩][৪]
ধরন ১
ধরন ২
ধরন ৩
মনোবিশারদ বার-এল জেরুসালেম সংলক্ষণকে মোট সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রত্যেকটির রয়েছে অনন্য উপসর্গ।
অনিশ্চয়তাবোধ: এই ধাপের একদম প্রথম থেকেই রোগী নিজেকে অদ্ভুত এক উদ্বেগের ভেতর আবিষ্কার করেন।
একাকী থাকার ইচ্ছা: একাই শহর ঘুরে দেখার ইচ্ছে জন্মায় রোগীর মনে। ফলশ্রুতিতে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যান তিনি।
পবিত্রতা: বার-এলের মতে, দ্বিতীয় ধাপেই হাসপাতালে নেয়া না হলে রোগী পাগলের মতো গোসল করতে থাকেন এবং নিজেকে অপরিষ্কার ভেবে পরিষ্কার করার চেষ্টায় লিপ্ত হন। হাত-পায়ের নখ নিখুঁতভাবে কাটার প্রতি থাকে তার অপরিসীম যত্ন।
প্রস্তুতি: এই ধাপে রোগী পরিধেয় বা অন্য কোন চাদর ছিঁড়ে টোগা বানিয়ে নেন। সর্বদা সাদা হয় এই টোগা, লম্বায় হয় গোড়ালি পর্যন্ত। এছাড়া আর কোনো পোশাক গায়ে তোলেন না তিনি।
চিৎকার-চেঁচামেচি: এই পর্যায়ে রোগী হুট করে চেঁচিয়ে ওঠেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় বাইবেলের কোনো স্তব অথবা কোনো প্রশংসাগীতি। জেরুসালেমের সব হোটেল কর্মচারীকে নির্দেশ দেয়া আছে- এই অবস্থা দেখলে যেন হাসপাতালে খবর দেয়া হয়।
দ্রুতপায়ে চলা: বার-এলের মতে, এরপরই রোগীর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব শহরের কোনো পবিত্র স্থানের দিকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
ধর্মপ্রচার: সেই পবিত্র স্থানে পৌঁছাবার পর আক্রান্ত ব্যক্তি ধর্মপ্রচার করতে শুরু করেন। পবিত্র এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপনের দিকে আহ্বান করাই হয়ে থাকে তার প্রধান লক্ষ্য। অদ্ভুত সব বাক্য উচ্চারণ করতে থাকেন তিনি, বেশিরভাগই নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
↑Kalian M, Witztum E. (1999) "The Jerusalem syndrome—fantasy and reality a survey of accounts from the 19th and 20th centuries." Isr. J. Psychiatry Relat Sci., 36(4):260-71. Abstract