জি.কে.সূর্য প্রকাশ (জন্ম ১৯৫৩) একজন অধ্যাপক, যিনি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের বিভাগের হাইড্রোকার্বন শাখার জর্জ এ. ও জুডিথ এ. ওলা চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি লকার হাইড্রোকার্বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে তার বিজ্ঞানাগারটি বিশেষ স্বীকৃতি লাভে সক্ষম হয়েছে। তিনি বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭২ সালে বি.এস.সি.(অনার্স), ১৯৭৪ সালে মাদ্রাজ আইআইটি থেকে এম.এস.সি. ও জর্জ অ্যান্ড্রু ওলার অধীনে ১৯৭৮ সালে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সেখানে সুপার-এসিড বা মহা-অম্লে স্থিতিশীল কার্বোকেশন প্রক্রিয়ার উপর সম্যক গবেষণা করেন।[১] তিনি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক জার্নাল সম্পাদনায়ও নিয়োজিত রয়েছেন।[২]
ড.প্রকাশ প্রয়াত জি.এন.কৃষ্ণমূর্তির ষষ্ঠ সন্তান। জি.এন.কৃষ্ণমূর্তি অর্থনীতির একজন যশস্বী অধ্যাপক ছিলেন। প্রকাশের মায়ের নাম আনাসুয়াম্মা কৃষ্ণমূর্তি। তিনি বাল্যকাল ও কৈশোরে বসন্তনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গান্ধীনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
গবেষণা
ড.প্রকাশ একজন কর্মঠ রসায়নবিদ। তার ৮০০টিরও অধিক প্রকাশনা এ পর্যন্ত পর্যালোচিত হয়েছে। [৩] ৪২,০০০ বার তার গবেষণা প্রবন্ধসমূহ উদ্বৃত হয়েছে। [৪] রসায়নবিষয়ক বহু গ্রন্থ তার সম্পাদনায় ঋদ্ধ হয়েছে। তিনি ১০০টিরও বেশি আবিষ্কারের পেটেন্টধারী। প্রয়াত নোবেল বিজয়ী ও শিক্ষাগুরু জর্জ ওলার সঙ্গে তিনি যৌথভাবে মিথানল অর্থনীতির ধারণা উত্থাপন করেন। মিথানল অর্থনীতির মূল প্রতিপাদ্য প্রকৃতিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন করে জ্বালানিসহ আনুষঙ্গিক চাহিদা পূরণ করা, যাতে করে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস পায়। তিনি ডাইরেক্ট মিথানল ফুয়েল সেল বা প্রত্যক্ষ মিথানল জ্বালানি প্রকোষ্ঠ আবিষ্কার ও মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। নাসা-জেপিএলের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন। তিনি যৌথভাবে জৈব রসায়নে ট্রাইফ্লুরোমেথিলেটিং এজেন্ট হিসেবে পরিচিত ট্রাইফ্লুরোমিথাইলট্রাইমিথাইলসিলেন উদ্ভাবন করেন, মাঝেমাঝে যাকে "রুপার্ট প্রকাশ বিকারক" নামেও অভিহিত করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রকাশ গবেষণা করছেন। এগুলো হলো- বাছাইকৃত ফ্লোরিনেশন,ফ্লোরোঅ্যালকালায়ন, শক্তিসম্পন্ন বস্তুকণা , হ্রাসকরণ, স্টিরিও-সিলেকটিভ বা বাছাইকৃত বিক্রিয়া, তড়িৎ রাসায়নিক সংশ্লেষণ, হাইড্রোকার্বন সক্রিয়করণ, সমানুকরণ,কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিত্তিক জ্বালানি, প্রত্যক্ষ জারণ জ্বালানি কোষ, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তড়িৎদ্বার, আয়রন ব্যাটারি, ফ্লো ব্যাটারি,তড়িৎ রসায়ন, পলিমার রসায়ন, সুপার এসিড অনুঘটকীকৃত প্রক্রিয়া, স্থিতিশীল কার্বোকেশন রসায়ন, "অ্যাব ইনিশিও" তত্ত্বের প্রয়োগ, ডিএফটি তত্ত্ব ও এনএমআর রাসায়নিক পরিবর্তন গণনা। [১] জর্জ অ্যান্ড্রু ওলা এবং অ্যান্ড্রু গোপার্টের সঙ্গে জি.কে. সূর্য প্রকাশ যৌথভাবে তিনি "কার্বন সংক্রান্ত গোলকধাঁধাঁ সমাধান, তেল কিংবা গ্যাসের সাহায্য ছাড়াই:মিথানল অর্থনীতি" (সলভিং দ্য কার্বন কনান্ড্রাম, বিয়ন্ড অয়েল অ্যান্ড গ্যাস: মিথানল ইকোনমি) গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটি চীনা, সুইডীয়, হাঙ্গেরীয়, জাপানি ও রুশ ভাষায় অনূদিত হয়। ওয়াইলি ভিসিএইচ প্রকাশনা গ্রন্থটির তিনটি সংস্করণ বের করেছে (২০০৬,২০০৮ ও ২০০৯)। এটি বিশ্বজুড়েই যথেষ্ট মনোযোগ লাভ করেছে।
পুরস্কার
প্রকাশ অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৪, ২০০৬ এবং ২০১৮ সালে আমেরিকান রসায়নবিদ সমিতির জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। মিথানল অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে সূর্য প্রকাশ ইউরোপীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে ইসরায়েল সরকার প্রকাশ ও ওলাকে "প্রধানমন্ত্রী স্যামসন বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবন পুরস্কার" লাভ করেন, যার অর্থমূল্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফ্লোরিন রসায়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে ফ্রান্সের ফোদেসোঁ দি লা মেইসোঁ দি লা শিমি তাকে অঁরি মোইসো পুরস্কারে ভূষিত করে।
তথ্যসূত্র