জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশন বা জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন হলো সত্য ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য জাতিসংঘ-পরিচালিত একটি মিশন।[১] একে জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন বা জাতিসংঘ কমিশন অব ইনক্যুয়ারি-ও বলা হয়।[২] বিগত ৫০ বছর ধরে জাতিসংঘ বেশ কয়েকটি বিরোধপূর্ণ এলাকায় স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ায় তথ্যানুসন্ধানী মিশন পাঠিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানের জন্য মিশন বেশ কিছু আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে, বিশেষ করে জাতিসংঘের মহাসচিব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা এই মিশনকে জাতিসংঘের একটি অধিক কার্যকরী অঙ্গে পরিণত করে।
ইতিহাস
১৯০৭ সালের হেগ সম্মেলনে সর্বপ্রথম তথ্যানুসন্ধানী দল গঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন হিসেবে কাজ করে।[৩]
ঘোষণাপত্র
১৯৯১ সালের ৪–২২ ফেব্রুয়ারি তিন সপ্তাহব্যাপী নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির অধিবেশনের পরিসমাপ্তিতে বিনা ভোটে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৯১ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলিউশন ৪৬/৫৯ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।[৪] ঘোষণাপত্রে জোর দিয়ে বলা হয় যে “... কোনো বিরোধ বা বিশেষ অবস্থায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার সক্ষমতা বৃহদাংশে ঘটনাপ্রবাহে এর সঠিক ও বিস্তারিত তথ্যপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে” এবং “অনুরূপ বিরোধ বা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠনগুলোর ভূমিকা সদস্য দেশগুলোর মাথায় রাখা উচিত।”[৫]
বৈশিষ্ট্য
তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সংজ্ঞা ও গঠন সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যে এই ধরনের মিশন শুধু তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমই নয়, বরং কোনো একটি সম্ভাব্য গুরুতর ঘটনায় জাতিসংঘের উদ্বেগ জানানোরও একটি মাধ্যম। এছাড়্ব এতে উল্লেখ করা হয় যে, তথ্যানুসন্ধানের প্রক্রিয়া হবে বিশদ, বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং দ্রুত।[৬] বিরোধ নিরসনের জন্য সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে এই মিশন আহ্বান করার কথাও এতে বলা হয়। যেই দেশে মিশন পাঠানো হবে, তাদের সম্মতিক্রমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ পরিষদ এবং জাতিসংঘের মহাসচিব এই মিশন প্রেরণ করতে পারেন। তবে, মিশনের দেশগুলোকে মিশনকে গ্রহণ ও সহযোগিতা করতে বলা হয়। এর অন্যথায় সুস্পষ্ঠ জবাবদিহিতা চাওয়া হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ভূমিকা
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত সংঘাতসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য পরিষদের সামনে উপস্থাপন করেন। প্রয়োজনানুসারে তিনি জরুরি মিশন পরিচালনা করতে পান। এর জন্য জাতিসংঘ সচিবালয়ের সংঘাতের পূর্বাভাস দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজনীয়।[৭]
বিতর্কিত রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র ব্যবহারে মহাসচিবের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া-তে কোনো সদস্যরাষ্ট্র কর্তৃক সম্ভাব্য রায়ায়নিক, জৈবনিক ও প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে মহাসচিবের উদ্যোগে তাৎক্ষণিক তথ্যানুসন্ধানের তাগিদ দেওয়া হয়। যেকোনো সদস্যরাষ্ট্র কর্তৃক অনুরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহাসচিব কর্তৃক দ্রুত তদন্ত পরিচালনায় নিরাপত্তা পরিষদ থেকেও তাগিদ দেওয়া হয়।[৮]
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাথে সম্পর্ক
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়ার বেশ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে। পাশাপাশি আগ্রাসন, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত তদন্ত পরিচালনা করে। অধ্যাপক লয়াল এস শুঙ্গ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তথ্যানুসন্ধান কীভাবে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কর্মকাণ্ডে সাহায্য করে এবং কীভাবে এরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে, তা বিশদে ব্যাখ্যা করেন।[৯]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র