চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সংক্ষেপে সিজেএম কোর্ট) হল ভারতে ফৌজদারি আদালতের কাঠামোর দ্বিতীয় স্তরের আদালত। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত জেলা পর্যায়ের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সর্বোচ্চ সংস্থা, এবং এটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়।[১]
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর দায়িত্বে থাকেন। প্রতিটি জেলায় একটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থাকবে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতও থাকবে। জুডিশিয়াল ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে কাজ করেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করে ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতগুলো। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রধান জেলা বিচারকের অধীনে কাজ করেন। ফৌজদারি আদালতের স্তরে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রধান জেলা ও সেশন আদালতের নিচে এবং সাব-ডিভিশনাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জুডিশিয়াল ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপরে থাকে।[২]
অধিক্ষেত্র
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জেলার মধ্যে উদ্ভূত ফৌজদারি মামলাগুলিতে মূল অধিক্ষেত্র প্রয়োগ করে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আইনে নির্ধারিত যে কোনো শাস্তি দিতে পারে, তবে মৃত্যুদণ্ড, আজীবন কারাদণ্ড, বা সাত বছরের বেশি কারাদণ্ড দিতে পারে না। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) পুরো জেলার ওপর ফৌজদারি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি সেই মামলাগুলো বিচার করেন যেখানে শাস্তির বিধান সাত বছরের কম। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলায় কার্যরত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের আদালত এবং অফিস পরিদর্শন করেন এবং মাসিকভাবে জেল/লক-আপ পরিদর্শন করেন।
সিজেএম আদালত অপরাধমূলক মামলায় প্রাথমিক তদন্ত পরিচালনা করতে, তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে এবং অভিযুক্তদের জামিন দিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এছাড়াও, তিনি সাত বছরের বেশি কারাদণ্ডযুক্ত শাস্তিযোগ্য মামলাগুলোর বিচার করতে পারেন এবং সর্বাধিক ১০,০০০ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারেন। বিচার বিভাগীয় জেলার ফৌজদারি আদালতের প্রশাসনিক প্রধান হলেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
সিজেএম আদালত অধস্তন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির অধিকার রাখে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে সক্ষম। সিজেএম আদালত তিন বছর থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধের বিচার করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
জেলার মধ্যে উদ্ভূত ফৌজদারি মামলায় মূল অধিক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালত দ্বারা নির্ধারিত ভৌগোলিক অধিক্ষেত্রও সিজেএম আদালতের অধীনে পড়ে।
আপিলসমূহ
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল জেলা সেশন আদালতে দায়ের করা যেতে পারে।
নিয়োগ
প্রত্যেক জেলা (মহানগর এলাকা নয়) এ, উচ্চ আদালত একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অফ দ্য ফার্স্ট ক্লাসকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
ভারতে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার কাঠামো নিম্নরূপ:
1. **উচ্চ আদালত**:
- দেশের শীর্ষস্থানীয় ফৌজদারি আদালত।
- এখান থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিরা নিযুক্ত হন।
- সব ফৌজদারি আপিল এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলি এখানে বিবেচিত হয়।
2. **প্রধান জেলা ও সেশন আদালত**:
- জেলা পর্যায়ের শীর্ষ আদালত।
- জেলা জজ দ্বারা পরিচালিত হয়।
- গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের বিচার এখানে হয়।
3. **চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত**:
- জেলা পর্যায়ের দ্বিতীয় স্তরের আদালত।
- চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়।
- সাত বছরের কম কারাদণ্ডযোগ্য মামলাগুলি এখানে বিচারিত হয়।
4. **সাব-ডিভিশনাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত**:
- জেলার বিভিন্ন সাব-ডিভিশনে অবস্থিত।
- সাব-ডিভিশনাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়।
- কম গুরুতর অপরাধের বিচার এখানে হয়।
5. **জুডিশিয়াল ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট আদালত**:
- ছোটো অপরাধের জন্য এই আদালত রয়েছে।
- প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়।
এছাড়াও, কিছু অতিরিক্ত আদালত এবং বিশেষ আদালত যেমন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আদালত বা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালত নির্দিষ্ট ধরনের মামলাগুলির বিচার করতে পারে।
তথ্যসূত্র