চারুকলা ইনস্টিটিউটচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরকলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি অন্যতম ইনস্টিটিউট। এটি চট্টগ্রামের বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে অবস্থিত। এটি দেশের প্রথম চারুকলা বিভাগ।[১][২] এটি একমাত্র ইনস্টিটিউট যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসের বাইরে অবস্থিত। ২০১০ সালে চারুকলা কলেজ অধিগ্রহণ করে ইনস্টিটিউটটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এখানে ৩০ জন অনুষদ সদস্য রয়েছেন, পাশাপাশি সর্বমোট ৭০টি আসন রয়েছে।
ইতিহাস
১৯৬৯ সালে, শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।এটি বাংলাদেশের প্রথম চারুকলা বিভাগ[৩][৪] চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের লক্ষে চারুকলা বিভাগ হিসেবে এটি চালু করা হয়।[৫] শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে এই বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হত।
১৯৭৩ সালে রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে শিল্পী সবিহ্-উল আলমকে প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজ নামে আলাদা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়।
দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার পর ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করে একটি ইনস্টিটিউট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এই সুবাদে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি ও অনুষদ কমিটি একত্রীত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলকে ব্যাতিরেকে একটি সিন্ডিকেট গঠন এবং চারুকলা বিভাগকে ইন্সটিটিউটে রুপান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯৯ সালের ১১ মার্চ, চারুকলা বিভাগ ও চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘চারুকলা ইন্সটিটিউট (Institute of fine Arts)' ঘোষণা দিয়ে একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। এই গেজেট প্রকাশের পর, তৎকালীন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও স্থপতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যদিও পরবর্তীকালে ২০০২ সালে পিটিশনটি খারিজ হয়ে যায়।[৬][৭] পরবর্তীতে আইনগত সমস্যা এবং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আপত্তি প্রকাশের কারণে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্সটিটিউট নির্মানের এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত রাখা হয়। ২০১০ সালে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২ তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০১০ সালের ২ আগস্ট,[৭] বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত এক চিঠিতে (শিক্ষা মন্ত্রালয়ের স্মারক নং শা:১৮/৫ চবি৬-৯১ অংশ-২/৩০২, শিক্ষা, তারিখ ২৮/৬/২০১০) চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজের অস্থাবর সকল সম্পদ ডিউ অব গিফটের আওতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের মাধ্যমে একে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চারুকলা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে নগরীর মেহেদিবাগের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে আত্মীকরণ এবং প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক হস্তান্তর সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। উচ্চ আদালত এই রায় স্থগিত রাখেন। তবে এই স্থগিত আদেশ বলবৎ থাকাকালীনন সময়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে কোন প্রকার ঘোষণা না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারুকলা কলেজকে আত্মীকরণ করে চারুকলা বিভাগকে বাদশা মিয়া সড়কে স্থানান্তরিত করে।[৬] একই বছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থেকে আলাদা হয়ে এ ইনস্টিটিউট কার্যপরিচালনা শুরু করে।[৮] শিল্পী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে পরিচালক নিযুক্ত করে নতুনভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কার্যক্রম শুরু হয়।[৩][৯] ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।[১০]
বিভাগসমূহ
এই অনুষদের বিভাগসমূহ:
বিভাগসমূহ
সদস্য
আসন সংখ্যা
চিত্রকলা বিভাগ
২৫
ভাস্কর্য বিভাগ
১০
অ্যাপ্লাইড আর্ট বিভাগ
২৫
ছাপ চিত্র বিভাগ
১০
শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি
চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরীর সম্মানার্থে "শিল্পী রশিদ চৌধুরি আর্ট গ্যালারি" প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি চট্টগ্রাম শহরের সর্বপ্রথম আর্ট গ্যালারি। এটি একটি ত্রিতল বিশিষ্ট প্রদর্শনী ভবন। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রবীন-নবীন শিল্পীদের চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজিত হয়ে থাকে।[১১][১২] এছাড়াও বিশ্ববিদ্যলয়ের চারুকলা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত-অনিয়মিত এবং বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী এখানে আয়োজিত হয়ে থাকে।[১৩]
প্রদর্শনী
২০১৬
জানুয়ারি, ২০১৬ সালে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারিতে স্কাল্পচার নেটওয়ার্ক নামে জার্মানি-ভিত্তিক সংগঠনের উদ্যোগে ‘প্রকৃতি’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক ভাস্কর্য প্রদর্শনী পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রদর্শনী সপ্তমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে যা ভাস্কর্যশিল্প আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সৃষ্টিতে বিশ্বের ১৮টি দেশের ৫৮টি স্থানে প্রদর্শনীর আয়োজন করে।[১৪]
↑আবদুল্লাহ আল মামুন (৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "চারুকলা ইনস্টিটিউটের স্বপ্নীল যাত্রা শুরু"। সিইউনিউজ২৪। চবি: cutimes24.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৮, ২০১৫।