গ্রামীণফোন বাংলাদেশের একটি টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি। ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এটি নরওয়ের টেলিনর এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেখানে টেলিনর গ্রামীণফোনের ৫৬% শেয়ারের মালিক এবং গ্রামীণ টেলিকম ৩৪% শেয়ারের মালিক। বর্তমানে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় মুঠোফোন সেবাদাতা কোম্পানি।[৪]
ইতিহাস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক মোবাইল টেলিফোনের লাইসেন্স নেবার প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়। তখন গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী হন ইকবাল কাদির। ইকবাল কাদির গণফোন ডেভলপমেন্ট করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম নামের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম, গণফোন ও টেলিনর ১৯৯৫ সালে যৌথ সংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনুমতিপত্রের আবেদন করে। [৫] গ্রামীণফোন ১৯৯৬ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে অনুমতিপত্র পায়। অনুমতিপত্র পাওয়ার পর গ্রামীণফোন ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে তার কার্যক্রম শুরু করে।
গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ড ১৬ নভেম্বর ১৯৯৪ সালে গ্রামীণফোন নামের একটি পৃথক 'নট ফর প্রফিট' কোম্পানি স্থাপন করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ টেলিকমকে সোশাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা ঋণ প্রদাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে সরোস ইকোনোমিক ডেভলপমেন্ট ঢান্য থেকে ১০.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দীর্ঘমেয়াদে ঋণ গ্রহণ করে। [৫]
উল্লেখ্য যে এ অপারেটরটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উন্নত মানের সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু করা হয় ৪জি সেবা। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ৪জি নেটওয়ার্কের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, 'পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল সিমের এখনই সময়' স্লোগানে গ্রামীণফোন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গ্রাহকদের জন্য এমবেডেড-সিম (ই-সিম) সামনে নিয়ে আসে।[৬]
নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি
সারাদেশে গ্রামীণফোনের মালিকানাধীন টাওয়ারের সংখ্যা ২২,৫২৬ টি। ( ২০২৪, জুলাই )
[৭] এছাড়াও অনান্য অপারেটরের সঙ্গে মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিং এর মাধ্যমে গ্রামীণফোন সারাদেশ ব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সুবিধা দিচ্ছে। এর তরঙ্গের পরিমাণ ১২৭. ৪ মেগাহার্জ , ১০৭.৪ মেগাহার্জ বর্তমান ব্যবহার করছে গ্রামীণফোন, বাকি ২০ মেগাহার্জ ২০২৫ সালের জুন মাস থেকে আরো যুক্ত হবে। এছাড়া আরো ৮৫০ ব্যান্ডের ১০ মেগাহার্জ তরঙ্গ কেনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন।
গ্রাহকসংখ্যা;
বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার*।[৮]
প্রদেয় সেবা
গ্রামীণফোন মুঠোফোন সংক্রান্ত সকল ধরনের সেবা প্রদান করে। গ্রামীণফোন এসএমএস বা লিখিত ক্ষুদে বার্তা, ভয়েস এসএমএস বা কথা বলা ক্ষুদে বার্তা, পুশ-পুল সার্ভিস, ভিএমএস, এবং ইন্টারনেট পরিসেবা, ওয়েলকাম টিউন, রিংব্যাক টোন, মিসড কল এলার্ট, কল ব্লক প্রভৃতি সেবা প্রদান করে থাকে। থ্রিজি ও ৪জি বা চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট (তার বিহীন ব্রডব্যান্ড) সেবা চালু আছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালের মার্চে বাংলা উইকিপিডিয়ার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল অপারেটরটি।
ডিজিটাল পরিসেবা
জিপিফাই
জিপিফাই হচ্ছে গ্রামীণফোনের আওতাধীন একটি ফিক্সড ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিসেবা প্রদানকারী ব্র্যান্ড।
মাইজিপি অ্যাপ
মাই জিপি এপ গ্রামীণফোনের একটি স্ব-সেবা সমাধান যার মাধ্যমে গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারেন।
গ্রামীণফোন আলো
বিভিন্ন আইওটি সেবা প্রদান করা হয় গ্রামীণফোন আলো এর আওতায়।
এই পরিসেবাটি দর্শকদের বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন, ৪০টির বেশি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল, চলচ্চিত্র, ভিডিও, সরাসরি খেলা দেখা এবং অন্যান্য ভিডিও সামগ্রী প্রদান করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ওয়েবসাইট ছাড়াও, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ডিভাইসে অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে বায়োসকোপ পাওয়া যায়। এর ওয়েবসাইট-ও উপলব্ধ এবং মানুষ কম্পিউটার এবং iOS ডিভাইসগুলি দেখতে পারেন।[৯]
আগস্ট ২০১৭ এর দ্বিতীয় বিটা লঞ্চের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে গুগলের প্লে স্টোরের এটি ৩ মিলিয়নেরও বেশি ডাউনলোড এবং বাংলাদেশে ১ নম্বর এ্যাপস হয়েছে।[১০]
স্কিটো
স্কিটো গ্রামীণফোনের একটি ডিজিটাল প্রোডাক্ট। ইন্টারনেট ব্যবহারকে প্রধান্য দিয়ে ২০১৭ সালে চালু করা হয়। জিপির অন্যান্য প্যাকেজ থেকে স্কিটোতে মাইগ্রেশনের সুযোগ নেই তবে স্কিটো থেকে জিপির অন্যান্য প্রিপেইড ও পোস্টপেইড প্যাকেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ রয়েছে।
সমালোচনা
গ্রামীণফোন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারের ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ দখল করে আছে। ২০১৭ সালে গ্রামীণফোনের মোট আয় ১২,৮৪৩ কোটি টাকা। নিট আয় ২৭,৪২৩ কোটি টাকা। অন্যান্য ও অনির্দেশিত চার্জ কর্তনের জন্য নানা সময় প্রবল সমালোচনার মুখে সম্মুখীন হয়েছে গ্রামীণফোন।[১১][১২][১৩][১৪] অপারেটর পরিবর্তন সেবা চালুর পর সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের গ্রাহক অপারেটর পরিবর্তন করেছেন; অন্য অপারেটর এর তুলনায় ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার খরচ অনেক বেশি নেয়া হলেও দাম সেবার খারাপ মান, অযাতিত কল ও বার্তা দিয়ে গ্রাহকদের বিরক্ত করা ও অযথা অনুমতি ব্যতীত সেবা চালু করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনেকে গ্রামীণফোন পরিহার করছেন।[১৫]