গিয়াসউদ্দিন আল মামুন একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।[১] তিনি রাজনীতিবিদ তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার।[৩] বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় শাস্তি হওয়ায় মামুন ২০০৭ সাল থেকে জেলে ছিলেন, তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনটি মামলায় তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুটি মামলাই দুর্নীতির। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং কর ফাঁকির ২০টি মামলা রয়েছে।[৪][৫]
বর্তমানে বন্ধ থাকা টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ১-এর মালিক ছিলেন মামুন।[৩]
কর্মজীবন
মামুন ছিলেন তারেক রহমানের স্কুলের বন্ধু। ১৯৯১ সালে তিনি ৩৯,০০০ টাকার বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯৬ সালের মধ্যে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.৯৪ কোটি টাকায়, এবং দেশে ও বিদেশে ৪৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তা জমা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের সময় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করেন। খাম্বা লিমিটেড নামে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডকে কংক্রিট পোল বিক্রি করে তিনি হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেন।[৬]
অভিযোগ ও শাস্তি
মামুনকে ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের সময় অবৈধ অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি অবৈধ রিভলবার উদ্ধার করা হয়, যার কারণে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানের আগে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের এক কর্মকর্তা মামুনের বিরুদ্ধে ১.১৭ কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। ২০০৭ সালের মে মাসে মামুনের বিরুদ্ধে তার আয়ের পরিচিত উৎস ছাড়িয়ে ১০১ কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে।[১] ২০০৮ সালে ঢাকার একটি আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।[১][৬] ২০১০ সালের এপ্রিলে ইয়াসমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।[৭] ২০১২ সালে হাইকোর্ট তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে খালাস দেয়, কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বাতিল করে।[১]
২০০৯ সালে মামুনের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ২০.৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে।[৮] ২০১১ সালে এফবিআই এজেন্ট ডেব্রা লাপ্রেভোট মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন।[৯] ২০১৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোতাহার হোসেন তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।[১০][১১] তার সহ-আসামি তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়।[১০] বিচারক মোতাহার হোসেন রায় দেওয়ার পরপরই দেশ ছেড়ে চলে যান।[১২]
২০১৬ সালের জুলাই মাসে, হাইকোর্ট মামুনের জরিমানা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করে।[১৩] ২০১৯ সালের এপ্রিলে মামুনকে যুক্তরাজ্যে £৪ লক্ষ টাকা পাচারের অভিযোগে আরো সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[৪]
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর মামুন জামিন পেয়েছেন।[১৪]
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে অর্থ পাচার মামলায় তিনি খালাস পান।[১৫][১৬]
মুক্তি
১২ নভেম্বর, ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার, দুর্নীতি মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। এদিন হাইকোর্ট ২০০৭ সালের ৭ জুন মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করে মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের ট্রায়াল কোর্টের রায়ও বাতিল করে দেয়।[১৭]
বিচারিক আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ১৭ বছর কারাগারে থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট জামিনে মুক্তি পাওয়া মামুনের করা আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।[১৭]
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ মামলায় তিনি আপিল বিভাগ থেকে খালাস পান।[১৮]
ব্যক্তিগত জীবন
মামুন ও তার স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনের তিনটি সন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে শাহিনা ৯.২২ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ থেকে খালাস পান। এই মামলায় তিনি কারাবরণ করেছিলেন।[৭] মামুনের ভাই হাফিজ ইব্রাহিম, বিএনপির বরিশালের রাজনীতিবিদ। তার বাবা জয়নুল আবেদিন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট ছিলেন। তার মা মোসাম্মত হালিমা খাতুন, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।[৫]
তথ্যসূত্র