গিয়াসউদ্দিন আল মামুন

গিয়াসউদ্দিন আল মামুন
জন্ম
১৯৬৭ ভোলা
জাতীয়তাবাংলাদেশি
অন্যান্য নামমামুন
পেশাব্যবসায়ী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
দাম্পত্য সঙ্গীশাহিনা ইয়াসমিন[]
আত্মীয়হাফিজ ইব্রাহিম (ভাই)[]
ফাবিয়া মামুন (কন্যা)
জাওয়াদ মামুন (পুত্র)
জান্নাত মামুন (কন্যা)

গিয়াসউদ্দিন আল মামুন একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।[] তিনি রাজনীতিবিদ তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার।[] বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় শাস্তি হওয়ায় মামুন ২০০৭ সাল থেকে জেলে ছিলেন, তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনটি মামলায় তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুটি মামলাই দুর্নীতির। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং কর ফাঁকির ২০টি মামলা রয়েছে।[][]

বর্তমানে বন্ধ থাকা টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ১-এর মালিক ছিলেন মামুন।[]

কর্মজীবন

মামুন ছিলেন তারেক রহমানের স্কুলের বন্ধু। ১৯৯১ সালে তিনি ৩৯,০০০ টাকার বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯৬ সালের মধ্যে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.৯৪ কোটি টাকায়, এবং দেশে ও বিদেশে ৪৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তা জমা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের সময় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করেন। খাম্বা লিমিটেড নামে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডকে কংক্রিট পোল বিক্রি করে তিনি হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেন।[]

অভিযোগ ও শাস্তি

মামুনকে ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের সময় অবৈধ অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি অবৈধ রিভলবার উদ্ধার করা হয়, যার কারণে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানের আগে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের এক কর্মকর্তা মামুনের বিরুদ্ধে ১.১৭ কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। ২০০৭ সালের মে মাসে মামুনের বিরুদ্ধে তার আয়ের পরিচিত উৎস ছাড়িয়ে ১০১ কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে।[] ২০০৮ সালে ঢাকার একটি আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।[][] ২০১০ সালের এপ্রিলে ইয়াসমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।[] ২০১২ সালে হাইকোর্ট তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে খালাস দেয়, কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বাতিল করে।[]

২০০৯ সালে মামুনের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ২০.৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে।[] ২০১১ সালে এফবিআই এজেন্ট ডেব্রা লাপ্রেভোট মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন।[] ২০১৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোতাহার হোসেন তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।[১০][১১] তার সহ-আসামি তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়।[১০] বিচারক মোতাহার হোসেন রায় দেওয়ার পরপরই দেশ ছেড়ে চলে যান।[১২]

২০১৬ সালের জুলাই মাসে, হাইকোর্ট মামুনের জরিমানা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করে।[১৩] ২০১৯ সালের এপ্রিলে মামুনকে যুক্তরাজ্যে £৪ লক্ষ টাকা পাচারের অভিযোগে আরো সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[]

২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর মামুন জামিন পেয়েছেন।[১৪]

৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে অর্থ পাচার মামলায় তিনি খালাস পান।[১৫][১৬]

মুক্তি

১২ নভেম্বর, ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার, দুর্নীতি মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। এদিন হাইকোর্ট ২০০৭ সালের ৭ জুন মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করে মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের ট্রায়াল কোর্টের রায়ও বাতিল করে দেয়।[১৭]

বিচারিক আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ১৭ বছর কারাগারে থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট জামিনে মুক্তি পাওয়া মামুনের করা আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।[১৭]

১২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ মামলায় তিনি আপিল বিভাগ থেকে খালাস পান।[১৮]

ব্যক্তিগত জীবন

মামুন ও তার স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনের তিনটি সন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে শাহিনা ৯.২২ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ থেকে খালাস পান। এই মামলায় তিনি কারাবরণ করেছিলেন।[] মামুনের ভাই হাফিজ ইব্রাহিম, বিএনপির বরিশালের রাজনীতিবিদ। তার বাবা জয়নুল আবেদিন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট ছিলেন। তার মা মোসাম্মত হালিমা খাতুন, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।[]

তথ্যসূত্র

  1. "দুর্নীতির মামলায় গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের খালাসের আদেশ বাতিল"বিডিনিউজ২৪.কম। ১ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হয়েছিল বরিশালে হাফিজ ইব্রাহিমের সম্পদ তদন্ত করতে"দ্য ডেইলি স্টার। ১৭ মার্চ ২০০৭। ২৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  3. "নির্বাচনের আগে আরো ২টি টিভি চ্যানেল - উভয়টির মালিক বিএনপি সংসদ সদস্য"দ্য ডেইলি স্টার। ২৬ এপ্রিল ২০০৬। ১৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  4. "মানি লন্ডারিং মামলায় মামুনের ৭ বছরের কারাদণ্ড"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০৩ 
  5. "মায়ের মৃত্যুর পর ৪ ঘন্টার জন্য মুক্তি পেলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন"বিডিনিউজ২৪.কম 
  6. "মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড"দ্য ডেইলি স্টার। ২৮ মার্চ ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
    - "বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড"বিবিসি নিউজ সাউথ এশিয়া। ৭ জুলাই ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  7. "মামুনের স্ত্রী আত্মসমর্পণ করে কারাগারে"দ্য ডেইলি স্টার। ৭ এপ্রিল ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  8. "তারেক রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে আর্থিক অপরাধ করেছেন: হাইকোর্ট"বিডিনিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  9. "তারেক অর্থপাচার করেছেন"দ্য ডেইলি স্টার। ১৭ নভেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  10. "বিএনপির তারেককে খালাস দেওয়া সাবেক বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত"বিডিনিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  11. "তারেকের মানি লন্ডারিং মামলার রায় রবিবার"দ্য ডেইলি স্টার। ১৪ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  12. "তারেকের দুর্নীতি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত"দ্য ডেইলি স্টার। ১৭ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. "দুর্নীতি: খালাস বাতিল, তারেকের ৭ বছরের কারাদণ্ড"দ্য ডেইলি স্টার। ২১ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
    - "তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশের পরোয়ানা জারি"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  14. "বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন আল মামুন জামিন পেলেন"ঢাকা ট্রিবিউন। ৬ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০২৪ 
  15. "অর্থপাচার মামলায় দণ্ড থেকে খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন"ঢাকা ট্রিবিউন। ৫ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  16. "মানিলন্ডারিং মামলায় খালাস পেলেন ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন"Dhakatimes News। ৫ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  17. Report, Star Digital (২০২৪-১১-১২)। "HC acquits Gias Uddin Al Mamun in graft case"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১২ 
  18. "খালাস পেয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বললেন 'শুকরিয়া'"চ্যানেল টুয়েন্টিফোর। ১২ ডিসেম্বর ২০২৪। 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!