গগনচন্দ্র বিশ্বাস (১২৫৬ - ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) একজন বাঙালি শিল্পপতি ও সমাজসেবী। তিনি বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নিকট মাধবপুর গ্রামে ১২৫৬ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন গগনচন্দ্র বিশ্বাস। তার পিতার নাম ছিল শ্ৰীমন্ত বিশ্বাস। পিতা সংস্কৃত, আরবি ও ফারসী ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। গগনচন্দ্র পিতার একমাত্র পুত্র ছিলেন। বাংলার অতি প্রাচীন ও সন্ত্রান্ত জমিদার বংশের সন্তান ছিলেন তিনি। বাঙ্গালার নবাব কর্তৃক উপাধিপ্রাপ্ত বংশের মধ্যে তাদের বংশ অন্যতম। এই বিশ্বাস উপাধিও নবাবরা দিয়েছিলেন। গগনচন্দ্র ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। শৈশবে গ্রামের বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় বৃত্তি পান, কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও বৃত্তি লাভ করেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম, ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ও প্রেসিডেন্সী কলেজের অধ্যাপক স্যাটক্লিফ সাহেবের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। তার সহপাঠী ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।[১][২]
সামাজিক অবদান
শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর স্যার রাজেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত মাটিন কোম্পানীর অফিসে প্রধান ইঞ্জিনিয়ার রূপে কাজ করেন গগনচন্দ্র। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর সরকারী নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর শিক্ষানবীশ থাকার পর নিজেই স্টান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী স্থাপন করেন। বাঙালায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের পথিকৃৎ বলা চলে তাকে। তার কোম্পানি কৃষ্ণনগরে জলঙ্গী নদীর ওপর রেলের সেতু নির্মাণে ততকালীন ৯ লক্ষ টাকার টেন্ডার পায়। সেতু নির্মাণকালে সরকারের তরফে আসা এক উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ সাহেবের অপমানজনক ব্যবহারের প্রতিবাদ করেন তিনি ফলত ষড়যন্ত্রের শিকার হন। অন্তর্গাতের ফলে সেতুর ক্ষতি করে দেয় ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তি। তিনি অপরিসীম ক্ষতি স্বীকার করে তৈরী সেতু ভেঙে নিজ ব্যায়ে পুনরায় তৈরী করেছিলেন। এই ক্ষতিপূরন করতে গিয়ে তার কলকাতার বাড়ী, জলপাইগুড়ির চা বাগান ও নদীয়ার কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। সাংবাদিক শিশির কুমার ঘোষ অমৃতবাজার পত্রিকায় এই ঘটনা উল্লেখ করে গগনচন্দ্রর তেজোদীপ্ত, চারিত্রিক দৃঢ়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। নিজস্ব ডিজাইনে জলদা তিস্তা জলঢাকা নদীর ওপর স্ক্রু পাইলিং করে ব্রিজ নির্মাণ করেছিলেন, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বিল্ডিং নির্মানের নকশাও তাঁর করা।[৩] আগরপাড়ার রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরের বাস্তুকার ছিলেন তিনি।[৪] বাঙালীর মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চা বাগানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নদীয়ার বাদকুল্লা এলাকার উন্নতিকল্পে জমি, অর্থ দান করেন তিনি। বাংলায় রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রথম যুগে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যাত্রামোহন সেন, অম্বিকাচরণ মজুমদার প্রমুখদের সহকর্মী ছিলেন তিনি। একাদিক্রমে ৩০ বছর ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সমিতির সদস্য ছিলেন।[২]
মৃত্যু
গগনচন্দ্র ১৩৪২ বঙ্গাব্দে মারা যান।
তথ্যসূত্র